ঢাকা ১০:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের জবাব হবে কঠোর ও চূড়ান্ত: খামেনি ১১ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা: এনবিআর সাবেক র‍্যাব কর্মকর্তা সোহায়েল গুম মামলায় গ্রেপ্তার, কারাগারে প্রেরণ ঈদযাত্রায় সড়কে প্রতিদিন গড় মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের: রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের জাতীয় সংবিধানিক কাউন্সিল গঠনে একমত নাগরিক পার্টি, কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য: নাহিদ ইসলাম এসএসএফকে কাজ করতে হবে সব দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে: প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস-তারেক বৈঠকে আপত্তি একটি দলের, মন্তব্য মির্জা ফখরুলের শাহবাগ-পল্টন থানার দুই মামলায় আনিসুল হকসহ ৩ জনের রিমান্ড মঞ্জুর কুয়ালালামপুরে ফের গুলির ঘটনা, শপিংমলের সামনে ২ জনকে হত্যা মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতায় বিশ্ববাজারে আবারও বেড়েছে স্বর্ণ-রুপার দাম

ঠাকুরগাঁওয়ে তীব্র গরমে উল্টো চিত্র, জুনের সকালবেলা ঘন কুয়াশায় ঢাকা শহর

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১২:২৬:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
  • / 9

ছবি: সংগৃহীত

 

দেশজুড়ে যখন খরতাপের দাপট, তখন এক ব্যতিক্রমী প্রাকৃতিক দৃশ্যের সাক্ষী হলো উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। জুনের মাঝামাঝি সময়ে যেখানে সাধারণত বর্ষার জলে ভিজে চারপাশ, সেখানে বুধবার (১১ জুন) সকালে জেলা শহরসহ আশপাশের এলাকায় নামে ঘন কুয়াশা। আষাঢ়ের সকালে এমন কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে বিস্মিত স্থানীয়রা কেউ কেউ চোখকে বিশ্বাসই করতে পারেননি।

গত কয়েকদিন ধরেই ঠাকুরগাঁওয়ে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এই প্রখর রোদের মাঝে বুধবার সকালটা শুরু হয় ঠান্ডা ও কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে। কিন্তু এই স্বস্তি ছিল ক্ষণিকের। সকাল পেরিয়ে রোদের তীব্রতা ফিরে আসতেই গরম আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

সালান্দর এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম জানান, ‘সকালে জানালা খুলে দেখি চারদিক শুধু সাদা কুয়াশায় ঢাকা। জুন মাসে এমনটা আগে কখনো দেখিনি।’ বেগুনবাড়ি গ্রামের প্রবীণ কৃষক আব্দুল করিম শেখ বলেন, ‘সত্তর বছরে এই প্রথম জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে কুয়াশা দেখলাম। আগে এই সময় বৃষ্টি হতো, এখন বৃষ্টির নামগন্ধ নেই। ধানের চারা শুকিয়ে যাচ্ছে, পাটগাছ বাড়ছে না বড় চিন্তায় আছি।’

গৃহবধূ আমেনা বেগম বলেন, ‘রাতে ঠান্ডা লেগে কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হয়েছে। সকালে উঠেই দেখি উঠানে কুয়াশা। ছেলেমেয়েরা তো অবাক! কিন্তু বেলা বাড়তেই রোদের উত্তাপে ঘর থেকে বের হওয়া যায় না।’ কৃষক রমজান আলী জানিয়েছেন, ‘কুয়াশা দেখে প্রথমে ভয়ই পেয়েছিলাম। ফসলের কী হবে, পোকামাকড় বাড়বে কিনা এই চিন্তা। পরে দুপুরে গরমে সবজি খেত শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।’

আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালিপনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক ও সাধারণ মানুষ। এই আকস্মিক আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, জ্বর ও হিটস্ট্রোকের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

হাসপাতালের চিকিৎসক রকিবুল আলম চয়ন বলেন, ‘দিনে প্রচণ্ড গরম ও রাতে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে শিশু ও বয়স্কদের ফুসফুসের সংক্রমণসহ নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। সবাইকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।’

আবহাওয়াবিদদের মতে, আষাঢ়ে এমন কুয়াশা জলবায়ু পরিবর্তনের অশনিসংকেত। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘এটি “রেডিয়েশন ফগ” বা বিকিরণ কুয়াশার উদাহরণ। এই কুয়াশা মূলত গরমের ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়া এবং রাতের তাপ দ্রুত হ্রাস পাওয়ার কারণে হয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনেরই প্রতিফলন।’

এমন প্রাকৃতিক অস্বাভাবিকতা শুধু বিস্ময় নয়, বরং জনজীবন ও কৃষির জন্য এক অশনি সংকেতও বয়ে আনছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ঠাকুরগাঁওয়ে তীব্র গরমে উল্টো চিত্র, জুনের সকালবেলা ঘন কুয়াশায় ঢাকা শহর

আপডেট সময় ১২:২৬:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫

 

দেশজুড়ে যখন খরতাপের দাপট, তখন এক ব্যতিক্রমী প্রাকৃতিক দৃশ্যের সাক্ষী হলো উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। জুনের মাঝামাঝি সময়ে যেখানে সাধারণত বর্ষার জলে ভিজে চারপাশ, সেখানে বুধবার (১১ জুন) সকালে জেলা শহরসহ আশপাশের এলাকায় নামে ঘন কুয়াশা। আষাঢ়ের সকালে এমন কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে বিস্মিত স্থানীয়রা কেউ কেউ চোখকে বিশ্বাসই করতে পারেননি।

গত কয়েকদিন ধরেই ঠাকুরগাঁওয়ে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এই প্রখর রোদের মাঝে বুধবার সকালটা শুরু হয় ঠান্ডা ও কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে। কিন্তু এই স্বস্তি ছিল ক্ষণিকের। সকাল পেরিয়ে রোদের তীব্রতা ফিরে আসতেই গরম আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

সালান্দর এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম জানান, ‘সকালে জানালা খুলে দেখি চারদিক শুধু সাদা কুয়াশায় ঢাকা। জুন মাসে এমনটা আগে কখনো দেখিনি।’ বেগুনবাড়ি গ্রামের প্রবীণ কৃষক আব্দুল করিম শেখ বলেন, ‘সত্তর বছরে এই প্রথম জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে কুয়াশা দেখলাম। আগে এই সময় বৃষ্টি হতো, এখন বৃষ্টির নামগন্ধ নেই। ধানের চারা শুকিয়ে যাচ্ছে, পাটগাছ বাড়ছে না বড় চিন্তায় আছি।’

গৃহবধূ আমেনা বেগম বলেন, ‘রাতে ঠান্ডা লেগে কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হয়েছে। সকালে উঠেই দেখি উঠানে কুয়াশা। ছেলেমেয়েরা তো অবাক! কিন্তু বেলা বাড়তেই রোদের উত্তাপে ঘর থেকে বের হওয়া যায় না।’ কৃষক রমজান আলী জানিয়েছেন, ‘কুয়াশা দেখে প্রথমে ভয়ই পেয়েছিলাম। ফসলের কী হবে, পোকামাকড় বাড়বে কিনা এই চিন্তা। পরে দুপুরে গরমে সবজি খেত শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।’

আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালিপনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক ও সাধারণ মানুষ। এই আকস্মিক আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, জ্বর ও হিটস্ট্রোকের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

হাসপাতালের চিকিৎসক রকিবুল আলম চয়ন বলেন, ‘দিনে প্রচণ্ড গরম ও রাতে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে শিশু ও বয়স্কদের ফুসফুসের সংক্রমণসহ নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। সবাইকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।’

আবহাওয়াবিদদের মতে, আষাঢ়ে এমন কুয়াশা জলবায়ু পরিবর্তনের অশনিসংকেত। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘এটি “রেডিয়েশন ফগ” বা বিকিরণ কুয়াশার উদাহরণ। এই কুয়াশা মূলত গরমের ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়া এবং রাতের তাপ দ্রুত হ্রাস পাওয়ার কারণে হয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনেরই প্রতিফলন।’

এমন প্রাকৃতিক অস্বাভাবিকতা শুধু বিস্ময় নয়, বরং জনজীবন ও কৃষির জন্য এক অশনি সংকেতও বয়ে আনছে।