মার্কিন-বিরোধী উস্কানির অভিযোগ: হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করল ট্রাম্প

- আপডেট সময় ০২:৪৭:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
- / 5
ওয়াশিংটন ডি.সি. – যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির অন্যতম শীর্ষ ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি বাতিল করেছে। বৃহস্পতিবার (২২ মে, ২০২৫) হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে, যা হার্ভার্ডের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের এক নতুন মাত্রা। এই সিদ্ধান্তের ফলে শুধু নতুন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিই বন্ধ হবে না, বরং হার্ভার্ডে বর্তমানে অধ্যয়নরত প্রায় ৬৮০০ বিদেশি শিক্ষার্থীকেও অন্য কোনো SEVP (Student and Exchange Visitor Program) অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হতে হবে, নতুবা তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আইনগত বৈধতা হারাবে।
প্রশাসনের অভিযোগ ও কারণ: মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম X-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন যে, হার্ভার্ড ক্যাম্পাসে “মার্কিন-বিরোধী, সন্ত্রাসী-পন্থি উস্কানিদাতাদের” দ্বারা ইহুদি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটতে দিয়েছে এবং এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। নোয়েম জোর দিয়ে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানো কোনো অধিকার নয়, বরং এটি একটি বিশেষ সুবিধা, যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চ টিউশন ফি আদায় করে তাদের বিলিয়ন ডলারের তহবিল বৃদ্ধি করে। তিনি এই পদক্ষেপকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মতে, হার্ভার্ড স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (SEVP) এর অধীনে তাদের অনুমোদন হারিয়েছে। এই অনুমোদন থাকলেই একটি বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা স্পন্সর করতে পারে এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সুযোগ দিতে পারে।
হার্ভার্ডের প্রতিক্রিয়া: ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় “বেআইনি” বলে অভিহিত করেছে। রয়টার্স এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের বিবৃতিতে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, “আমরা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের হার্ভার্ডে রাখার বিষয়ে পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে আসে এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও এই দেশকে অমূল্যভাবে সমৃদ্ধ করে।” বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে যে, তারা শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দিতে কাজ করছে এবং এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও চলমান বিবাদ: ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে “বামপন্থী, মার্কসবাদী এবং আমেরিকাবিরোধী আদর্শ” ছড়ানোর অভিযোগে সমালোচনা করে আসছে। বিশেষ করে, ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ এবং ক্যাম্পাসে ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ ঘিরে ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের ওপর চাপ বাড়িয়েছিল। গত এপ্রিলেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হার্ভার্ডকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সম্পর্কিত তথ্য, বিশেষ করে ক্যাম্পাসে কোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপ বা অসদাচরণের সঙ্গে জড়িত বিদেশি শিক্ষার্থীদের রেকর্ড চেয়েছিল। নোয়েম বলেছিলেন যে, হার্ভার্ড যদি এই তথ্য না দেয়, তাহলে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি বাতিল করা হবে।
শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব: এই সিদ্ধান্তের ফলে হার্ভার্ডে অধ্যয়নরত প্রায় ৬৮০০ বিদেশি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর এক-চতুর্থাংশের বেশি। এদের অধিকাংশই স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী এবং বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ থেকে তারা এসেছেন। বর্তমান বিদেশি শিক্ষার্থীদের হয় অন্য কোনো SEVP অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হতে হবে, অথবা তাদের আইনি বৈধতা হারাতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হবে।
এই ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান চাপের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে সরকার ক্যাম্পাসের বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বায়ত্তশাসন এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থায় অংশগ্রহণের সুযোগের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।