সিরাজগঞ্জে ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ২৬ হেক্টর ফসল ধ্বংস, দিশেহারা কৃষকরা

- আপডেট সময় ১২:১৭:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
- / 5
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে একটি ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে পুড়ে গেছে প্রায় ২৬ হেক্টর জমির ধান। স্বপ্নের ফসল মাঠেই মরে পড়ে থাকায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রায় শতাধিক কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা ভাটার মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনাটি ঘটেছে শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের স্বরূপপুর গ্রামে। কৃষক মনোয়ারা খাতুন জানান, ঋণ করে তিনি ৫০ শতক জমিতে ধান রোপণ করেছিলেন। ফলন ভালো হওয়ায় ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি চলছিল। তবে কয়েকদিন আগে এজিএ নামের একটি ইটভাটার চিমনি দিয়ে ছড়ানো বিষাক্ত ধোঁয়া ধানের জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। সকালে দেখা যায়, তার ফসল পুরোপুরি পুড়ে গেছে।
মনোয়ারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ধান সব শেষ। এই ক্ষতির দায় নিতে হবে ইটভাটার মালিকদের।”
শুধু তিনিই নন, একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আশানুর প্রামানিক, আব্দুল হানিফ, কালু প্রামানিক, হোসেন আলীসহ প্রায় ৯৫ জন কৃষক। সকলেই জানিয়েছেন, রাতের অন্ধকারে ভাটার চিমনি দিয়ে গ্যাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যা বাতাসে মিশে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। পরদিন সকালেই ফসল পুড়ে যাওয়া চিত্র চোখে পড়ে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা দ্রুত ক্ষতির নিরূপণ করে তালিকা তৈরির পাশাপাশি ইটভাটার মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা জানান, “আমাদের ফসলের ক্ষতি হয়েছে, আমাদের জীবন-জীবিকা এখন হুমকির মুখে। এ দায় থেকে ইটভাটা মালিক পালাতে পারে না।”
শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেরিন আহমেদ জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং তাদের কৃষি প্রণোদনার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এদিকে, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান করা হয়েছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, “তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে সাত কর্মদিবসের মধ্যে।”
এই ঘটনার পর কৃষক সমাজের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফসল রক্ষা ও কৃষকের জীবন-জীবিকা টিকিয়ে রাখতে দুষিত গ্যাস নির্গমনের দায়ে ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।