ঢাকা ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
চরমোনাই মাহফিলে ইসলামী ঐক্যের আহ্বান, আগামী নির্বাচন নিয়ে কৌশল নির্ধারণ শের-ই-বাংলা মেডিকেল শাটডাউনের চতুর্থ দিন: সড়ক অবরোধে শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থান আমরা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও শক্তিশালী: ড. ইউনূস একুশে পদক ২০২৫: ১৮ গুণীজন ও এক দলকে সম্মাননা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা রমজানে পণ্যের সংকট নেই, মজুদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: অর্থ উপদেষ্টা শেয়ারবাজারে উত্থান: ডিএসই ও সিএসইতে সূচকের ইতিবাচক ধারা তীব্র গরম থেকে বাঁচতে কাজে দেবে যে ১০টি উপায় অ্যারিজোনায় মাঝ আকাশে আবারও উড়োজাহাজের সংঘর্ষ, নিহত ২ রোজা শুরুর আগেই ছোলার সরবরাহে স্বস্তি, দাম কমার আশা গরমে বিদ্যুৎ সংকট বাড়তে পারে, রোজার মাসে বাড়বে লোডশেডিং

জাতীয় নিরাপত্তা

বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে রাজনীতির ছায়া: জাতিসংঘের প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য

খবরের কথা ডেস্ক

ছবি সংগৃহীত

 

বাংলাদেশে দীর্ঘ একদলীয় শাসনের ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনীতিকীকরণ গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে নিরাপত্তা খাতে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর (ওএইচসিএইচআর) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের বদলে রাজনৈতিক আনুগত্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এবং পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)-তে নিয়োগের সময় প্রার্থীদের রাজনৈতিক সংযোগ যাচাই করা হতো। এমনকি আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ডেপুটি ইন্সপেক্টর-জেনারেল (ডিআইজি) ও তার ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের নিয়োগ অনুমোদন করতেন। দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হতো।

সেনাবাহিনীর বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতীতে তারা রাজনৈতিক অঙ্গনে হস্তক্ষেপ করলেও অন্যান্য বাহিনীর তুলনায় কম প্রভাবিত ছিল। তবে, সামরিক বাহিনীর সিনিয়র পর্যায়ের নিয়োগ ও পদোন্নতিতেও রাজনৈতিক আনুগত্য গুরুত্ব পেয়েছে।

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড দমন এবং ক্ষমতাসীনদের অপরাধে হস্তক্ষেপ না করার বিনিময়ে নিরাপত্তা বাহিনী নিজেদের অপরাধ ও দুর্নীতির দায়মুক্তি পেয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে ২৫৯৭টি কথিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ৭০৮টি গুমের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। র‌্যাব এককভাবে ৮০০টির বেশি হত্যাকাণ্ড ও প্রায় ২২০টি গুমের ঘটনায় জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, বিচার হয়েছে মাত্র একটি ঘটনায়, যেখানে ভুক্তভোগী ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা।

জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন ও ঘুষ নেওয়া নিয়মিত চর্চা হয়ে উঠেছে। ২০১৩ সালে ‘নির্যাতন ও নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু (নিষিদ্ধকরণ) আইন’ প্রণীত হলেও বাস্তবে কার্যকর হয়নি। ১০৩ জন বন্দী নির্যাতনে নিহত হয়েছেন, কিন্তু মাত্র একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার নজির রয়েছে।

প্রতিবেদনটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে, বাংলাদেশে নিরাপত্তা খাতের রাজনীতিকীকরণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি গভীরভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।

বিষয় :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১২:০৬:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৫০৮ বার পড়া হয়েছে

জাতীয় নিরাপত্তা

বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে রাজনীতির ছায়া: জাতিসংঘের প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য

আপডেট সময় ১২:০৬:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

বাংলাদেশে দীর্ঘ একদলীয় শাসনের ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনীতিকীকরণ গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে নিরাপত্তা খাতে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর (ওএইচসিএইচআর) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের বদলে রাজনৈতিক আনুগত্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এবং পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)-তে নিয়োগের সময় প্রার্থীদের রাজনৈতিক সংযোগ যাচাই করা হতো। এমনকি আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ডেপুটি ইন্সপেক্টর-জেনারেল (ডিআইজি) ও তার ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের নিয়োগ অনুমোদন করতেন। দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হতো।

সেনাবাহিনীর বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতীতে তারা রাজনৈতিক অঙ্গনে হস্তক্ষেপ করলেও অন্যান্য বাহিনীর তুলনায় কম প্রভাবিত ছিল। তবে, সামরিক বাহিনীর সিনিয়র পর্যায়ের নিয়োগ ও পদোন্নতিতেও রাজনৈতিক আনুগত্য গুরুত্ব পেয়েছে।

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড দমন এবং ক্ষমতাসীনদের অপরাধে হস্তক্ষেপ না করার বিনিময়ে নিরাপত্তা বাহিনী নিজেদের অপরাধ ও দুর্নীতির দায়মুক্তি পেয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে ২৫৯৭টি কথিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ৭০৮টি গুমের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। র‌্যাব এককভাবে ৮০০টির বেশি হত্যাকাণ্ড ও প্রায় ২২০টি গুমের ঘটনায় জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, বিচার হয়েছে মাত্র একটি ঘটনায়, যেখানে ভুক্তভোগী ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা।

জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন ও ঘুষ নেওয়া নিয়মিত চর্চা হয়ে উঠেছে। ২০১৩ সালে ‘নির্যাতন ও নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু (নিষিদ্ধকরণ) আইন’ প্রণীত হলেও বাস্তবে কার্যকর হয়নি। ১০৩ জন বন্দী নির্যাতনে নিহত হয়েছেন, কিন্তু মাত্র একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার নজির রয়েছে।

প্রতিবেদনটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে, বাংলাদেশে নিরাপত্তা খাতের রাজনীতিকীকরণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি গভীরভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।