ঢাকা ০৫:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
মুসলিম দেশগুলোকে লক্ষ্য অর্জনে একযোগে কাজের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ১৫৪২ জাতীয় ঐকমত্য গঠনে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা জরুরি: বদিউল আলম প্রখ্যাত সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদা আর নেই আন্তর্জাতিক অপরাধে দণ্ডিতদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ থাকবে: অ্যাটর্নি জেনারেল পঞ্চগড়ে বিএসএফের পুশইন, নারী-পুরুষ-শিশুসহ আটক ১৫ জন সিরিজ বাঁচাতে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের, দলে দুই পরিবর্তন গণমাধ্যম সংস্কারে জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছে সরকার: প্রেস সচিব মালয়েশিয়ায় উগ্রপন্থি সংগঠনের অভিযোগে ৩৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার আলোকে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে: ধর্ম উপদেষ্টা

নওগাঁর রায়হান আলম: আমচাষে নবজাগরণ ঘটানো এক সাহসী কৃষক

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০১:৫৪:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
  • / 3

ছবি সংগৃহীত

 

 

নওগাঁর পোরশা ও সাপাহার এলাকায় ২০০৪-০৫ সালের দিকে যখন ধান, গম ও সর্ষের আবাদই ছিল দিগন্তজোড়া মাঠের চিত্র, তখনই ভিন্ন স্বপ্ন দেখেছিলেন রায়হান আলম (৪২)। পরিবারের তেমন সহযোগিতা না থাকলেও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী অবস্থায় তিনি ঠিক করেছিলেন ফসলি জমিতে আমের বাগান গড়বেন।

ধান ও গরু বিক্রি করে পাওয়া মাত্র এক লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে ৮ বিঘা জমিতে তিনি আম্রপালি, ল্যাংড়া, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা ও ফজলি জাতের দুই হাজার চারা রোপণ করেন। মাত্র দুই বছরের মধ্যে তাঁর আয় হয় তিন লাখ টাকা।

সেখান থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে বাগানের পরিসর বাড়িয়ে বর্তমানে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে ছোট-বড় ১৬টি ফলদ বাগানের গর্বিত মালিক তিনি। বছরে এসব বাগান থেকে তাঁর আয় ৫০ লাখ টাকার বেশি।

সাপাহারের দোয়াশ গ্রামের মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্ম রায়হানের। বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে তিনি কৃষিকেই জীবনের সাধনার জায়গা করে নেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০১৩ সালে আরও ৫০ বিঘা জমি ইজারা নেন। এখন তাঁর বাগানে দেশি-বিদেশি ২০-২৫ প্রজাতির আমের পাশাপাশি ড্রাগন ও পেয়ারা চাষও হচ্ছে।

সম্প্রতি পোরশার বন্ধুপাড়ায় মিশ্র ফলবাগান পরিদর্শনের সময় রায়হান বলেন, ‘প্রথমে পরিবার কেউই আমাকে সমর্থন করেনি। তবু চেষ্টা করেছি। এখন ২০–২৫ জন মানুষ আমার বাগানে নিয়মিত কাজ করে।’ তিনি জানান, গত বছর আম, ড্রাগন ও পেয়ারা মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে, যা থেকে শ্রমিক, সেচ, ওষুধের খরচ বাদে ৫০ লাখ টাকা লাভ করেছেন। এ বছর ৬০ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন।

নতুন চাষিদের জন্য তাঁর পরামর্শ, ‘একই জাতের আমগাছ না লাগিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাকার মতো একাধিক জাতের আম চাষ করুন। এতে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজারে আম সরবরাহ করা সম্ভব হয় এবং লোকসানের ঝুঁকি কমে।’

পোরশার সাইদুর রহমান বলেন, ‘রায়হান ভাইয়ের দেখাদেখি আমিও নাবি জাতের বারি-৪ ও গৌড়মতি চাষ শুরু করেছি। মৌসুমের শেষ দিকে এগুলো বেশি দামে বিক্রি হয়।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, রায়হান আলমের মতো উদ্যোক্তারা প্রমাণ করেছেন ভিন্ন জাতের আম চাষ করে আরও বেশি আয় করা সম্ভব। এতে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন এবং নওগাঁর আমশিল্প আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

নওগাঁর রায়হান আলম: আমচাষে নবজাগরণ ঘটানো এক সাহসী কৃষক

আপডেট সময় ০১:৫৪:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

 

 

নওগাঁর পোরশা ও সাপাহার এলাকায় ২০০৪-০৫ সালের দিকে যখন ধান, গম ও সর্ষের আবাদই ছিল দিগন্তজোড়া মাঠের চিত্র, তখনই ভিন্ন স্বপ্ন দেখেছিলেন রায়হান আলম (৪২)। পরিবারের তেমন সহযোগিতা না থাকলেও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী অবস্থায় তিনি ঠিক করেছিলেন ফসলি জমিতে আমের বাগান গড়বেন।

ধান ও গরু বিক্রি করে পাওয়া মাত্র এক লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে ৮ বিঘা জমিতে তিনি আম্রপালি, ল্যাংড়া, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা ও ফজলি জাতের দুই হাজার চারা রোপণ করেন। মাত্র দুই বছরের মধ্যে তাঁর আয় হয় তিন লাখ টাকা।

সেখান থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে বাগানের পরিসর বাড়িয়ে বর্তমানে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে ছোট-বড় ১৬টি ফলদ বাগানের গর্বিত মালিক তিনি। বছরে এসব বাগান থেকে তাঁর আয় ৫০ লাখ টাকার বেশি।

সাপাহারের দোয়াশ গ্রামের মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্ম রায়হানের। বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে তিনি কৃষিকেই জীবনের সাধনার জায়গা করে নেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০১৩ সালে আরও ৫০ বিঘা জমি ইজারা নেন। এখন তাঁর বাগানে দেশি-বিদেশি ২০-২৫ প্রজাতির আমের পাশাপাশি ড্রাগন ও পেয়ারা চাষও হচ্ছে।

সম্প্রতি পোরশার বন্ধুপাড়ায় মিশ্র ফলবাগান পরিদর্শনের সময় রায়হান বলেন, ‘প্রথমে পরিবার কেউই আমাকে সমর্থন করেনি। তবু চেষ্টা করেছি। এখন ২০–২৫ জন মানুষ আমার বাগানে নিয়মিত কাজ করে।’ তিনি জানান, গত বছর আম, ড্রাগন ও পেয়ারা মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে, যা থেকে শ্রমিক, সেচ, ওষুধের খরচ বাদে ৫০ লাখ টাকা লাভ করেছেন। এ বছর ৬০ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন।

নতুন চাষিদের জন্য তাঁর পরামর্শ, ‘একই জাতের আমগাছ না লাগিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাকার মতো একাধিক জাতের আম চাষ করুন। এতে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজারে আম সরবরাহ করা সম্ভব হয় এবং লোকসানের ঝুঁকি কমে।’

পোরশার সাইদুর রহমান বলেন, ‘রায়হান ভাইয়ের দেখাদেখি আমিও নাবি জাতের বারি-৪ ও গৌড়মতি চাষ শুরু করেছি। মৌসুমের শেষ দিকে এগুলো বেশি দামে বিক্রি হয়।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, রায়হান আলমের মতো উদ্যোক্তারা প্রমাণ করেছেন ভিন্ন জাতের আম চাষ করে আরও বেশি আয় করা সম্ভব। এতে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন এবং নওগাঁর আমশিল্প আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে।