মেয়েকে বাঁচাতে ছুটে গিয়ে আগুনে দগ্ধ মা রজনী, ফিরলেন লাশ হয়ে

- আপডেট সময় ০৩:৩১:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
- / 9
জাহিদ হাসান, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনাজনিত অগ্নিকাণ্ডে মেয়েকে রক্ষায় ছুটে গিয়ে জীবন দিলেন রজনী খাতুন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা রজনী খাতুন ছিলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদের মেয়ে এবং জহিরুল ইসলামের স্ত্রী। ঢাকায় পরিবারসহ বসবাস করতেন তারা।
সোমবার সকালে ছোট মেয়ে জুমজুম ইসলামকে স্কুলে দিয়ে বাড়ি ফেরেন রজনী। বিকেলে ছুটি হলে মেয়েকে আনতে স্কুলে যান তিনি। এ সময় বিমান দুর্ঘটনার পর বিদ্যালয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়লে নিজের সন্তানকে রক্ষায় শ্রেণিকক্ষের দিকে ছুটে যান রজনী খাতুন। তখনই দগ্ধ হন তিনি। যদিও তার মেয়ে এরইমধ্যে অন্যদের সহায়তায় বাইরে বেরিয়ে আসে।
রজনীকে উদ্ধার করে গুরুতর অবস্থায় সিএমএইচ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাতে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরদিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জানাজা শেষে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সাদিপুর গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
মর্মান্তিক এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
নিহতের স্বজনরা জানান, জহিরুল ইসলাম ব্যবসার সুবাদে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। তাদের বড় ছেলে রোবাই ইসলাম এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী, মেজো ছেলে রোহান ইসলাম মাইলস্টোন স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে জুমজুম ইসলাম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। মায়ের হাতে স্কুলে যাতায়াত করত দুই সন্তানই। তবে দুর্ঘটনার দিন রোহান অসুস্থ থাকায় স্কুলে যায়নি।
স্বজনদের ভাষ্যমতে, দুর্ঘটনার সময় রজনী ভেবেছিলেন মেয়ে এখনো শ্রেণিকক্ষে রয়েছে। মেয়েকে খুঁজতে গিয়েই আগুনে দগ্ধ হন তিনি। পরে জানা যায়, মেয়েটি আগেই বাইরে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল।
মেয়ে জুমজুম ইসলাম জানায়,মা প্রতিদিনের মতো সেদিনও সকালে আমাকে স্কুলে দিয়ে যান। ছুটির সময় আমাকে নিতে এসে দুর্ঘটনায় পড়েন। সন্ধ্যায় জানতে পারি মা আর বেঁচে নেই।
রজনীর চাচাতো ভাই গিয়াস উদ্দীন বলেন,বিকেলের দিকে জানতে পারি শিশুরা নিরাপদে আছে, কিন্তু রজনীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে খবর আসে তিনি মারা গেছেন। মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও শরীর অক্ষত ছিল।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। একজন মায়ের আত্মত্যাগে সমগ্র এলাকা আজ শোকাহত।