সিরিয়ায় প্রতিবিপ্লব ব্যর্থ: তুরস্ক ও কাতারের হস্তক্ষেপে প্রতিহত ষড়যন্ত্র
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিরিয়ার নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, অভ্যুত্থান পরিকল্পনা ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশরের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি পরিচালনা করছিল, যেখানে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ভাই মাহির আসাদও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
★ অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা কী ছিল?
তুরস্কের সামরিক সূত্র জানিয়েছে, পরিকল্পনার অধীনে—
১/ মাহির আসাদের অনুগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে অপহরণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যার মতো সহিংস কর্মকাণ্ড চালাবে, যাতে এর দায় নতুন সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর চাপানো যায়।
২/ সিরিয়ার গণতান্ত্রিক বাহিনী (এসডিএফ) তিশরিন বাঁধে হামলা চালিয়ে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির সৃষ্টি করবে, যার দায় বর্তাবে দামেস্ক সরকারের ওপর।
৩/ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গিয়াস দিল্লার নেতৃত্বাধীন শাম-ভিত্তিক সশস্ত্র দলগুলো সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর ইউনিফর্ম পরে আলাওয়ি সম্প্রদায়ের নারীদের অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটাবে।
এই অপরাধগুলো সরকারি বাহিনীর কৃতকর্ম হিসেবে উপস্থাপনের জন্য চিত্রগ্রহণ করা হবে।
৪/ সুয়েইদার দুরুজ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের সহায়তায় দামেস্কের দিকে অগ্রসর হবে, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখল করে প্রেসিডেন্ট ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করবে এবং সরকার উৎখাতের ঘোষণা দেবে।
★ কাতার-তুরস্কের হস্তক্ষেপে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, কাতারের গোয়েন্দা সংস্থার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই অভ্যুত্থান পরিকল্পনার শেষ মুহূর্তে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলতে সক্ষম হন।
এরপর তিনি সরাসরি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
শেখ তামিম ২ মার্চ ২০২৫, রবিবার গভীর রাতে সরাসরি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে ফোন করেন এবং পুরো পরিকল্পনার বিস্তারিত জানান।
এরপর এরদোয়ান জরুরিভাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও গোয়েন্দা প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন।
★তুরস্কের কড়া প্রতিক্রিয়া
পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা হিসেবে:
১/ ৯০টিরও বেশি তুর্কি যুদ্ধবিমান সিরিয়া ও ইসরায়েল সীমান্তের আকাশে টহল দিতে শুরু করে।
২/ তুর্কি নৌবাহিনী ভূমধ্যসাগর উপকূলে মোতায়েন করা হয়।
৩/ প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কঠোর ভাষায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে সতর্ক করে দেন যে, দামেস্কে যে কোনো অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা তুরস্কের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে। তিনি আরও জানান, তুরস্ক সরকার দামেস্কের পক্ষে সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত এবং প্রয়োজনে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে পিছপা হবে না।
এরপর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী তার গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকে নির্দেশ দেন অভিযান বন্ধ করতে।
গোয়েন্দা প্রধান অভ্যুত্থান পরিকল্পনার জন্য গঠিত অপারেশন রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, কিন্তু ততক্ষণে সুয়েইদা ও এসডিএফ বাহিনী তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছিল।
অবশেষে ইসরায়েলের নির্দেশে এসডিএফ ও সুয়েইদার দুরুজ গোষ্ঠীগুলো তাদের অভিযান বন্ধ করে।