০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম :

গাজায় অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে সাংবাদিক সালেহ আলজাফারাওয়ি নিহত

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১১:০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
  • / 2

ছবি সংগৃহীত

 

ফিলিস্তিনের গাজা নগরীতে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তরুণ সাংবাদিক সালেহ আলজাফারাওয়ি। ২৮ বছর বয়সী এই সাংবাদিক হামাস ও স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান উত্তেজনা কাভার করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

রোববার গাজার সাবরা এলাকায় হামাসের নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রভাবশালী দুগমুশ গোত্রের সদস্যদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সালেহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ভিডিও ধারণ করছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা। সংঘর্ষের মাঝেই তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং কিছু সময় পর তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘সংবাদমাধ্যম’ লেখা জ্যাকেট ও পরিচয়পত্র পরা অবস্থায়ই তার দেহ একটি ট্রাকের পেছনে পড়ে ছিল। সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা সূত্র জানায়, দুগমুশ গোত্র দীর্ঘদিন ধরে হামাস প্রশাসনের বাইরে থেকে নিজেদের মতো করে সশস্ত্র কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি বাস্তুচ্যুতদের ওপর হামলার ঘটনায় এই গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর হামাস তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। সেই অভিযানের মধ্যেই তীব্র সংঘর্ষে রূপ নেয় পরিস্থিতি, যা গাজার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

হামাস দাবি করেছে, তারা কেবল নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, প্রতিরোধ আন্দোলনের বাইরে কেউ অস্ত্র ধরলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এই ঘটনার পর গাজার ভেতরে রাজনৈতিক বিভাজন ও অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।

সালেহ আলজাফারাওয়ি গাজার পরিচিত মুখ ছিলেন। তিনি স্থানীয় সংঘর্ষ, মানবিক সংকট ও ইসরায়েলি হামলার নানা দৃশ্য সরাসরি তুলে ধরতেন, যা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। কয়েক মাস আগে আল–জাজিরার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সালেহ বলেছিলেন, তিনি নিজেও যুদ্ধের বাস্তুচ্যুত একজন। গাজার উত্তরে বাড়িঘর হারিয়ে দক্ষিণে আশ্রয় নিয়েছেন, আর সেই জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি ক্যামেরায় গাজার বাস্তবতা তুলে ধরেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “৪৬৭ দিনের যুদ্ধ আমার চোখের সামনে—যত কষ্ট, যত ভয়, সব অনুভব করেছি। প্রতিটি মুহূর্ত ছিল বেঁচে থাকার লড়াই।” তিনি আরও জানান, তার প্রতিবেদনের কারণে ইসরায়েলি বাহিনীর হুমকিও পেয়েছিলেন, কিন্তু তাতে থেমে যাননি।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭০ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। তাদের অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিবেদক, যারা যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের গল্প তুলে ধরছিলেন। সালেহ আলজাফারাওয়ি ছিলেন তাদেরই একজন—যিনি শেষ পর্যন্ত নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

গাজায় অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে সাংবাদিক সালেহ আলজাফারাওয়ি নিহত

আপডেট সময় ১১:০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

 

ফিলিস্তিনের গাজা নগরীতে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তরুণ সাংবাদিক সালেহ আলজাফারাওয়ি। ২৮ বছর বয়সী এই সাংবাদিক হামাস ও স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান উত্তেজনা কাভার করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

রোববার গাজার সাবরা এলাকায় হামাসের নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রভাবশালী দুগমুশ গোত্রের সদস্যদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সালেহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ভিডিও ধারণ করছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা। সংঘর্ষের মাঝেই তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং কিছু সময় পর তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘সংবাদমাধ্যম’ লেখা জ্যাকেট ও পরিচয়পত্র পরা অবস্থায়ই তার দেহ একটি ট্রাকের পেছনে পড়ে ছিল। সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা সূত্র জানায়, দুগমুশ গোত্র দীর্ঘদিন ধরে হামাস প্রশাসনের বাইরে থেকে নিজেদের মতো করে সশস্ত্র কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি বাস্তুচ্যুতদের ওপর হামলার ঘটনায় এই গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর হামাস তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। সেই অভিযানের মধ্যেই তীব্র সংঘর্ষে রূপ নেয় পরিস্থিতি, যা গাজার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

হামাস দাবি করেছে, তারা কেবল নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, প্রতিরোধ আন্দোলনের বাইরে কেউ অস্ত্র ধরলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এই ঘটনার পর গাজার ভেতরে রাজনৈতিক বিভাজন ও অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।

সালেহ আলজাফারাওয়ি গাজার পরিচিত মুখ ছিলেন। তিনি স্থানীয় সংঘর্ষ, মানবিক সংকট ও ইসরায়েলি হামলার নানা দৃশ্য সরাসরি তুলে ধরতেন, যা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। কয়েক মাস আগে আল–জাজিরার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সালেহ বলেছিলেন, তিনি নিজেও যুদ্ধের বাস্তুচ্যুত একজন। গাজার উত্তরে বাড়িঘর হারিয়ে দক্ষিণে আশ্রয় নিয়েছেন, আর সেই জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি ক্যামেরায় গাজার বাস্তবতা তুলে ধরেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “৪৬৭ দিনের যুদ্ধ আমার চোখের সামনে—যত কষ্ট, যত ভয়, সব অনুভব করেছি। প্রতিটি মুহূর্ত ছিল বেঁচে থাকার লড়াই।” তিনি আরও জানান, তার প্রতিবেদনের কারণে ইসরায়েলি বাহিনীর হুমকিও পেয়েছিলেন, কিন্তু তাতে থেমে যাননি।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭০ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। তাদের অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিবেদক, যারা যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের গল্প তুলে ধরছিলেন। সালেহ আলজাফারাওয়ি ছিলেন তাদেরই একজন—যিনি শেষ পর্যন্ত নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন।