ঢাকা ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
গাজায় মানবিক বিপর্যয়: হামলায় ৮৩ নিহত, দুর্ভিক্ষে মৃত্যু বাড়ছে বাড়ি ফেরা হলো না, প্রবাসীকে আনতে গিয়ে সড়কে ঝরলো ৭ প্রাণ জাতীয় নির্বাচন ফ্রেব্রুয়ারি মাসে ব্রিটেন পরিকল্পিতভাবে সামুদ্রিক দুর্ঘটনা ঘটাতে চায়: দাবি রুশ গোয়েন্দা সংস্থার জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন প্রধান উপদেষ্টা, শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে তিনদিনব্যাপী আয়োজন ছাত্রশিবিরের খাগড়াছড়িতে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ১ ৫ আগস্ট ইতিহাস কথা বলে জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগই হবে আগামীর বাংলাদেশ রুপরেখা : ড. ইউনূস ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অংশগ্রহণ

গাজায় মানবিক বিপর্যয়: হামলায় ৮৩ নিহত, দুর্ভিক্ষে মৃত্যু বাড়ছে

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৯:১৯:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫
  • / 8

ছবি সংগৃহীত

 

গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় আরও অন্তত ৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। নিহতদের মধ্যে ৮ জন শিশু রয়েছে। পাশাপাশি, দীর্ঘস্থায়ী খাদ্যসংকট ও অপুষ্টির কারণে আরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে যেসব ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তাদের ৫৮ জনই ছিলেন সহায়তা প্রত্যাশী। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সহযোগিতায় পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে হামলার শিকার হন।

আল জাজিরার গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানান, জিএইচএফ-এর খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, উত্তর গাজার জিকিম ক্রসিংয়ের কাছের একটি সহায়তা বিতরণ কেন্দ্র থেকে আল-শিফা হাসপাতালে নেওয়া আহতদের অধিকাংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অনেকের মাথা, গলা ও বুকে গুলির আঘাত রয়েছে, যা চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত জটিল।

জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জিএইচএফ-এর কার্যক্রম এবং তার আশপাশের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাগুলোর মতে, জিএইচএফ যথাযথ সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১,৫৬০ জন ফিলিস্তিনি।

এই মানবিক সংকটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও প্রবীণ জনগোষ্ঠী। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা সতর্ক করে বলছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে।

৭৫ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি নাগরিক সালিম আসফুর আল জাজিরাকে বলেন, “আমি কয়েক মাস ধরে শুধু রুটি আর পানি খেয়ে বেঁচে আছি। ওজন ৮০ কেজি থেকে এখন ৪০ কেজি হয়ে গেছে। আমার ছেলে আমাকে বাথরুমে নিতে সাহায্য করে। রাফাহ থেকে খাবার আনতে ২০ কিলোমিটার হাঁটা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও ৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই ধরনের কারণে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৮৮ জনের, যার মধ্যে ৯৪ জনই শিশু।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, সোমবার গাজায় মাত্র ৯৫টি সহায়তাবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে, যেখানে ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন প্রয়োজন কমপক্ষে ৬০০টি ট্রাক। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন মাত্র ৮৫টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারছে।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সেখানে মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সহায়তার পরিমাণ অত্যন্ত সীমিত এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা ইসরায়েলি বাহিনীর তৈরি নিরাপত্তা বিশৃঙ্খলার সুযোগে লুট হয়ে যাচ্ছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার কৌশল বলেও অভিযোগ করেছে তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

গাজায় মানবিক বিপর্যয়: হামলায় ৮৩ নিহত, দুর্ভিক্ষে মৃত্যু বাড়ছে

আপডেট সময় ০৯:১৯:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫

 

গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় আরও অন্তত ৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। নিহতদের মধ্যে ৮ জন শিশু রয়েছে। পাশাপাশি, দীর্ঘস্থায়ী খাদ্যসংকট ও অপুষ্টির কারণে আরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে যেসব ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তাদের ৫৮ জনই ছিলেন সহায়তা প্রত্যাশী। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সহযোগিতায় পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে হামলার শিকার হন।

আল জাজিরার গাজার দেইর আল-বালাহ থেকে প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানান, জিএইচএফ-এর খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, উত্তর গাজার জিকিম ক্রসিংয়ের কাছের একটি সহায়তা বিতরণ কেন্দ্র থেকে আল-শিফা হাসপাতালে নেওয়া আহতদের অধিকাংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অনেকের মাথা, গলা ও বুকে গুলির আঘাত রয়েছে, যা চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত জটিল।

জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জিএইচএফ-এর কার্যক্রম এবং তার আশপাশের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাগুলোর মতে, জিএইচএফ যথাযথ সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১,৫৬০ জন ফিলিস্তিনি।

এই মানবিক সংকটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও প্রবীণ জনগোষ্ঠী। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা সতর্ক করে বলছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে।

৭৫ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি নাগরিক সালিম আসফুর আল জাজিরাকে বলেন, “আমি কয়েক মাস ধরে শুধু রুটি আর পানি খেয়ে বেঁচে আছি। ওজন ৮০ কেজি থেকে এখন ৪০ কেজি হয়ে গেছে। আমার ছেলে আমাকে বাথরুমে নিতে সাহায্য করে। রাফাহ থেকে খাবার আনতে ২০ কিলোমিটার হাঁটা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও ৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই ধরনের কারণে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৮৮ জনের, যার মধ্যে ৯৪ জনই শিশু।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, সোমবার গাজায় মাত্র ৯৫টি সহায়তাবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে, যেখানে ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন প্রয়োজন কমপক্ষে ৬০০টি ট্রাক। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন মাত্র ৮৫টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারছে।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সেখানে মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সহায়তার পরিমাণ অত্যন্ত সীমিত এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা ইসরায়েলি বাহিনীর তৈরি নিরাপত্তা বিশৃঙ্খলার সুযোগে লুট হয়ে যাচ্ছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার কৌশল বলেও অভিযোগ করেছে তারা।