ঢাকা ০৪:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সবুজবাগে বিদেশী পিস্তল ও গুলিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি তুরস্কে স্কি রিসোর্টে অগ্নিকাণ্ড: মালিকসহ ৯ জন গ্রেপ্তার ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ চিটাগং কিংসকে উড়িয়ে দিয়ে ঢাকা ক্যাপিটালসের টানা তৃতীয় জয়   গাজায় ব্যর্থতার দায়ে পদত্যাগের প্রস্তুতিতে শিন বেত প্রধান রনেন বার যেসব পণ্যে ভ্যাট কমালো এনবিআর গাজায় ব্যর্থতার দায়ে এবার পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত-এর প্রধান রনেন বার। পুতিনের ভূমিকা নিয়ে ট্রাম্পের উদ্বেগ, নতুন নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত: বৈদেশিক সহায়তায় ৯০ দিনের সাময়িক স্থগিতাদেশ ইতালি থেকে আসা সেই বিমানে তল্লাশির পর যা জানা গেল

বাইডেনের বিদায়ী ভাষণ

বিদায়ী ভাষণে যে হুঁশিয়ারি দিলেন বাইডেন

খবরের কথা ডেস্ক

ছবি সংগৃহীত

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে তার দেয়া বিদায়ী ভাষণে দেশে কতিপয় অতি-ধনী ‘অলিগার্ক’ শিকড় গেড়েছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, একটি ‘প্রযুক্তি-শিল্প কমপ্লেক্স’ আমেরিকানদের অধিকার ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ লঙ্ঘন করছে। ওভাল অফিস থেকে ভাষণ দেয়ার সময় বাইডেন কতিপয় মানুষের হাতে সম্পদ এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেন।

আগামী সোমবার নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বাইডেন। বাইডেন বলেন, ‘আজ যুক্তরাষ্ট্র একটি ব্যাপক সম্পদ, ক্ষমতা ও প্রভাবের অধিকারী অলিগার্কি আবির্ভূত হচ্ছে, যেটা আক্ষরিক অর্থে আমাদের গোটা গণতন্ত্র, আমাদের মৌলিক অধিকার, আমাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে ফেলছে।’

তিনি ‘কতিপয় অতি-ধনী মানুষের হাতে ক্ষমতার বিপজ্জনক কেন্দ্রিকরণ’-এর দিকে এবং ‘তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার যদি না থামানো হয় তাহলে তার বিপজ্জনক পরিণতির দিকে’ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অতীতে সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্স সম্পর্কে পরলোকগত প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইজেনহাওয়ারের হুঁশিয়ারির কথা স্মরণ করে বাইডেন যোগ করেন, ‘আমি সমানভাবে প্রযুক্তি-শিল্প কমপ্লেক্সের সম্ভাব্য উত্থান সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, যেটা আমাদের দেশের জন্য প্রকৃত হুমকি হতে পারে।’

ইলন মাস্ক, জাকারবার্গ ও জেফ বেজোস

বাইডেনের হুঁশিয়ারি আসলো এমন সময়ে যখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী কিছু ব্যক্তি এবং প্রযুক্তি শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কর্ণধার সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্পের পক্ষে চলে গেছে, বিশেষ করে নভেম্বর নির্বাচনে তার বিজয়ের পর।ধনকুবের ইলন মাস্ক ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তার জন্য ১০ কোটি ডলার ব্যায় করেন। মেটার মার্ক জাকারবার্গ আর অ্যামাজনের জেফ বেজোসের মতো অন্যান্য কর্মকর্তা ট্রাম্পের অভিষেক ভাণ্ডারে অনুদান দিয়েছেন এবং ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ক্লাবে গিয়ে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকানের সাথে দেখা করেছেন।

ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টে বিচার থেকে দায়মুক্তির অবসান ঘটানোর জন্য বাইডেন সংবিধান সংশোধনেরও ডাক দেন। গত বছর সুপ্রিম কোর্ট ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনের কাছে পরাজয়ের পর ফলাফল পাল্টে দেয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারি অভিযোগ থেকে ট্রাম্পকে দায়মুক্তি দেয়।

ওভাল অফিস থেকে দেয়া ভাষণ ছিল অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্র নীতিতে তার লেগাসি পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে দেয়া কয়েকটি বক্তব্যের সর্বশেষ। দিনের শুরুতে তিনি ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাগত জানান, যার ফলে মধ্যেপ্রাচ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রক্তপাত বন্ধ হতে পারে।

বাইডেন বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে যা করেছি, তার প্রভাব বুঝতে সময় লাগবে। কিন্তু বীজ রোপণ করা হয়েছে এবং সেগুলো বড় হবে এবং দশকের পর দশক ধরে বিকশিত হবে।’

টেলিভিশন বিতর্কে হোঁচট

বাইডেন যেভাবে আশা করেছিলেন, তিনি সেভাবে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করছেন না। তিনি তার বয়স সম্পর্কে ভোটারদের উদ্বেগ উপেক্ষা করে পুনঃনির্বাচনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করেছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে তার বয়স হতো ৮৬। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে টেলিভিশন বিতর্কে হোঁচট খাওয়ার পর বাইডেন নিজ দলের চাপে নির্বাচনী দৌড় থেকে সড়ে দাঁড়ান। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে প্রার্থী হিসেবে অনুমোদন করেন, যিনি নভেম্বরে ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন।

এখন বাইডেন এমন একজনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, যাকে তিনি দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বুধবার রাতের ভাষণ শুধু তার প্রেসিডেন্সি নয়, রাজনীতিতে পাঁচ দশকের সমাপ্তি টানলো। তিনি এক সময়ে দেশের সর্বকনিষ্ঠ সেনেটর ছিলেন, যখন ১৯৭২ সালে ৩০ বছর বয়সে ডেলাওয়ের রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১১:২৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
৫০৩ বার পড়া হয়েছে

বাইডেনের বিদায়ী ভাষণ

বিদায়ী ভাষণে যে হুঁশিয়ারি দিলেন বাইডেন

আপডেট সময় ১১:২৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে তার দেয়া বিদায়ী ভাষণে দেশে কতিপয় অতি-ধনী ‘অলিগার্ক’ শিকড় গেড়েছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, একটি ‘প্রযুক্তি-শিল্প কমপ্লেক্স’ আমেরিকানদের অধিকার ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ লঙ্ঘন করছে। ওভাল অফিস থেকে ভাষণ দেয়ার সময় বাইডেন কতিপয় মানুষের হাতে সম্পদ এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেন।

আগামী সোমবার নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বাইডেন। বাইডেন বলেন, ‘আজ যুক্তরাষ্ট্র একটি ব্যাপক সম্পদ, ক্ষমতা ও প্রভাবের অধিকারী অলিগার্কি আবির্ভূত হচ্ছে, যেটা আক্ষরিক অর্থে আমাদের গোটা গণতন্ত্র, আমাদের মৌলিক অধিকার, আমাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে ফেলছে।’

তিনি ‘কতিপয় অতি-ধনী মানুষের হাতে ক্ষমতার বিপজ্জনক কেন্দ্রিকরণ’-এর দিকে এবং ‘তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার যদি না থামানো হয় তাহলে তার বিপজ্জনক পরিণতির দিকে’ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অতীতে সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্স সম্পর্কে পরলোকগত প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইজেনহাওয়ারের হুঁশিয়ারির কথা স্মরণ করে বাইডেন যোগ করেন, ‘আমি সমানভাবে প্রযুক্তি-শিল্প কমপ্লেক্সের সম্ভাব্য উত্থান সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, যেটা আমাদের দেশের জন্য প্রকৃত হুমকি হতে পারে।’

ইলন মাস্ক, জাকারবার্গ ও জেফ বেজোস

বাইডেনের হুঁশিয়ারি আসলো এমন সময়ে যখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী কিছু ব্যক্তি এবং প্রযুক্তি শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কর্ণধার সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্পের পক্ষে চলে গেছে, বিশেষ করে নভেম্বর নির্বাচনে তার বিজয়ের পর।ধনকুবের ইলন মাস্ক ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তার জন্য ১০ কোটি ডলার ব্যায় করেন। মেটার মার্ক জাকারবার্গ আর অ্যামাজনের জেফ বেজোসের মতো অন্যান্য কর্মকর্তা ট্রাম্পের অভিষেক ভাণ্ডারে অনুদান দিয়েছেন এবং ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ক্লাবে গিয়ে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকানের সাথে দেখা করেছেন।

ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টে বিচার থেকে দায়মুক্তির অবসান ঘটানোর জন্য বাইডেন সংবিধান সংশোধনেরও ডাক দেন। গত বছর সুপ্রিম কোর্ট ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনের কাছে পরাজয়ের পর ফলাফল পাল্টে দেয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারি অভিযোগ থেকে ট্রাম্পকে দায়মুক্তি দেয়।

ওভাল অফিস থেকে দেয়া ভাষণ ছিল অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্র নীতিতে তার লেগাসি পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে দেয়া কয়েকটি বক্তব্যের সর্বশেষ। দিনের শুরুতে তিনি ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাগত জানান, যার ফলে মধ্যেপ্রাচ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রক্তপাত বন্ধ হতে পারে।

বাইডেন বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে যা করেছি, তার প্রভাব বুঝতে সময় লাগবে। কিন্তু বীজ রোপণ করা হয়েছে এবং সেগুলো বড় হবে এবং দশকের পর দশক ধরে বিকশিত হবে।’

টেলিভিশন বিতর্কে হোঁচট

বাইডেন যেভাবে আশা করেছিলেন, তিনি সেভাবে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করছেন না। তিনি তার বয়স সম্পর্কে ভোটারদের উদ্বেগ উপেক্ষা করে পুনঃনির্বাচনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করেছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে তার বয়স হতো ৮৬। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে টেলিভিশন বিতর্কে হোঁচট খাওয়ার পর বাইডেন নিজ দলের চাপে নির্বাচনী দৌড় থেকে সড়ে দাঁড়ান। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে প্রার্থী হিসেবে অনুমোদন করেন, যিনি নভেম্বরে ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন।

এখন বাইডেন এমন একজনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, যাকে তিনি দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বুধবার রাতের ভাষণ শুধু তার প্রেসিডেন্সি নয়, রাজনীতিতে পাঁচ দশকের সমাপ্তি টানলো। তিনি এক সময়ে দেশের সর্বকনিষ্ঠ সেনেটর ছিলেন, যখন ১৯৭২ সালে ৩০ বছর বয়সে ডেলাওয়ের রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন।