শান্তি আলোচনার মাঝেও তীব্র ড্রোন হামলায় উত্তপ্ত রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত

- আপডেট সময় ০৬:৩৬:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
- / 3
ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের দ্বিতীয় দফার শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে চালিয়েছে ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। আলোচনার অংশ হিসেবে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দল সোমবার ইস্তাম্বুলে পৌঁছায়, যদিও এর আগেই কিয়েভ ইঙ্গিত দিয়েছিল আলোচনায় অংশ না-ও নিতে পারে। রাশিয়ার প্রতিনিধি দলও একই দিনে তুরস্কে পৌঁছেছে।
এর আগে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার আলোচনায় তেমন কোনো অগ্রগতি না হলেও বন্দি বিনিময়ের একটি সমঝোতা হয়েছিল। তবে কিয়েভ অভিযোগ করেছিল, রাশিয়া তখনও অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য দাবিতে অনড় রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে এবার দুই পক্ষই আলোচনায় নিজেদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে প্রস্তুত। যদিও রুশ পক্ষ শুরুতে প্রস্তাব পাঠাতে অস্বীকৃতি জানালেও প্রেসিডেন্ট পুতিনের উপদেষ্টা ও প্রধান আলোচক ভ্লাদিমির মেডিনস্কি জানান, তারা ইউক্রেনের প্রস্তাবনা হাতে পেয়েছেন।
রয়টার্সের বরাতে জানা যায়, ইউক্রেন তাদের প্রস্তাবে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির রূপরেখা দিয়েছে, যেখানে সামরিক শক্তি সীমিত রাখার বিষয়টি নেই, আবার রাশিয়ার দখলকৃত ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব স্বীকৃতিও নেই যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মস্কো দাবি জানিয়ে আসছে।
আলোচনার আগে ইউক্রেন প্রতিনিধি দল জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ইতালির সঙ্গে বৈঠক করে। একই সময়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি যান লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে, ন্যাটোর পূর্ব ইউরোপ ও নর্ডিক সদস্য দেশগুলোর সম্মেলনে অংশ নিতে। এই দেশগুলো রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান সমর্থক।
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেন, “যদি ইউক্রেন ন্যাটো সম্মেলনে উপস্থিত না থাকে, তবে তা পুতিনের জয় হবে ইউক্রেন নয়, বরং ন্যাটোর ওপর।” তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তি হলে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা অপরিহার্য, যদিও মস্কো এটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে জানিয়েছে।
জেলেনস্কি শান্তির জন্য তিনটি মূল শর্ত দেন: প্রথমত, পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি; দ্বিতীয়ত, সকল বন্দির মুক্তি; তৃতীয়ত, রাশিয়ার অপহৃত শিশুদের ইউক্রেনে ফিরিয়ে আনা। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকেরও আহ্বান জানান। তবে ক্রেমলিন বলেছে, কেবল প্রতিনিধিদের মধ্যে চুক্তি হলে তবেই শীর্ষ বৈঠক সম্ভব।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সংঘাতের মূল কারণগুলোর সমাধান থাকতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ না দেওয়া, সামরিক শক্তি সীমিত রাখা এবং কিছু ভূখণ্ডে ছাড় দেওয়ার বিষয়।
আলোচকরা ইস্তাম্বুলে পৌঁছানোর দিন রাতেই দুই দেশ থেকেই ব্যাপক ড্রোন হামলার খবর পাওয়া গেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ১৬২টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে এর মধ্যে ৫৭টি কুরস্ক ও ৩১টি বেলগোরোদ অঞ্চলে ভূপাতিত করা হয়।
এর ঠিক আগের দিন ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে বড় ধরনের হামলা চালায়। সাইবেরিয়াসহ একাধিক ঘাঁটিতে কৌশলগত বোমারু বিমান লক্ষ্য করে আঘাত হানে তারা। ইউক্রেন দাবি করেছে, রাশিয়া রাতভর ৮০টি ড্রোন হামলা চালায়, যার মধ্যে ১২টি বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত হানে।
এদিকে খেরসনের করাবেলনি জেলায় গোলাবর্ষণে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গভর্নর ওলেক্সান্ডার প্রোকুদিন। আহত পাঁচ বছর বয়সী একটি শিশু চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।