০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শিরোনাম :
ট্রাম্পের উপস্থিতিতে সিনারকে হারিয়ে ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়ন আলকারাজ ডিএমপির অভ্যন্তরীণ রদবদল: ৫ কর্মকর্তার নতুন দায়িত্ব নির্বাচনকালে তথ্যে প্রবাহে গণমাধ্যমকে বাধা দেওয়া হবে না: মাহফুজ আলম পৃথিবীর কোনো শক্তি ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না: প্রেস সচিব মৌলভীবাজারে বাগানের কেয়ারটেকারকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা ভোটের পরিবেশ শতভাগ অনুকূলে : ইসি আনোয়ারুল বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক হিজবুল্লাহ নিরস্ত্রীকরণে লেবাননের মন্ত্রিসভার পরিকল্পনার ধাপসমূহ ২০২৬ সালে মায়ামিতে অনুষ্ঠিত হবে জি-২০ সম্মেলন: ট্রাম্প পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী

গা/জা/য় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরাইলের হামলা, নিহত অন্তত ৫০

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৮:৪৮:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
  • / 20

ছবি সংগৃহীত

 

দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় ত্রাণ সংগ্রহে জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত ও অনাহারি ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০ জন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০০ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর এই তথ্য জানিয়েছে।

রোববার (১ জুন) ভোরে এই ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে খাবারের আশায় জড়ো হওয়া অসহায় মানুষদের লক্ষ্য করে হঠাৎ গুলি ছুড়ে ইসরাইলি সেনারা। হতাহতদের বেশিরভাগই ছিলেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ত্রাণকেন্দ্রগুলো ইসরাইলি বাহিনীর ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। মানবিক সহায়তার নামে গণহত্যা চালাতে নতুন কৌশল নিয়েছে ইসরাইল। এসব কেন্দ্রে সাহায্যের আশায় ছুটে আসা ক্ষুধার্ত মানুষদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে।

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ডা. মুনির আল-বারশ বলেন, “একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য এখন ত্রাণও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা এই হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহ দিচ্ছে।” তিনি আরও জানান, অবরুদ্ধ গাজার হাসপাতালে এখন তীব্র ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট চলছে।

জাতিসংঘ ও একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার যৌথ রিপোর্ট অনুযায়ী, গাজা উপত্যকায় বর্তমানে ভয়াবহ খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ২ মার্চ থেকে সব ধরনের সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাজায় অনাহার, অপুষ্টি ও মানবিক বিপর্যয় বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যেই গত সপ্তাহে অনাহারে অন্তত ২৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা (OCHA) জানিয়েছে, গাজা বর্তমানে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্ত স্থান’। সংস্থাটির মুখপাত্র জেন্স লারকে বলেন, “এই মুহূর্তে গাজার ২৩ লাখ মানুষই দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে। এমন অবস্থা বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না।”

এই ঘটনার তদন্তে জাতিসংঘকে একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। তাদের দাবি, মানবিক সহায়তা নিতে আসা নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিকভাবে বিচারযোগ্য অপরাধ।

এদিকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স’ সতর্ক করে জানিয়েছে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ মানবিক সহায়তাকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের অভিযোগ, গাজার জনগণকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করতে এই সাহায্যকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে।

গাজার মাটি যেন এখন এক নির্মম যুদ্ধক্ষেত্র। যেখানে ক্ষুধা, গুলি ও আন্তর্জাতিক নীরবতা একত্রে সৃষ্টি করেছে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

গা/জা/য় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরাইলের হামলা, নিহত অন্তত ৫০

আপডেট সময় ০৮:৪৮:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

 

দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় ত্রাণ সংগ্রহে জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত ও অনাহারি ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০ জন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০০ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর এই তথ্য জানিয়েছে।

রোববার (১ জুন) ভোরে এই ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে খাবারের আশায় জড়ো হওয়া অসহায় মানুষদের লক্ষ্য করে হঠাৎ গুলি ছুড়ে ইসরাইলি সেনারা। হতাহতদের বেশিরভাগই ছিলেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ত্রাণকেন্দ্রগুলো ইসরাইলি বাহিনীর ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। মানবিক সহায়তার নামে গণহত্যা চালাতে নতুন কৌশল নিয়েছে ইসরাইল। এসব কেন্দ্রে সাহায্যের আশায় ছুটে আসা ক্ষুধার্ত মানুষদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে।

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ডা. মুনির আল-বারশ বলেন, “একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য এখন ত্রাণও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা এই হত্যাকাণ্ডকে উৎসাহ দিচ্ছে।” তিনি আরও জানান, অবরুদ্ধ গাজার হাসপাতালে এখন তীব্র ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট চলছে।

জাতিসংঘ ও একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার যৌথ রিপোর্ট অনুযায়ী, গাজা উপত্যকায় বর্তমানে ভয়াবহ খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ২ মার্চ থেকে সব ধরনের সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাজায় অনাহার, অপুষ্টি ও মানবিক বিপর্যয় বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যেই গত সপ্তাহে অনাহারে অন্তত ২৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা (OCHA) জানিয়েছে, গাজা বর্তমানে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্ত স্থান’। সংস্থাটির মুখপাত্র জেন্স লারকে বলেন, “এই মুহূর্তে গাজার ২৩ লাখ মানুষই দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে। এমন অবস্থা বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না।”

এই ঘটনার তদন্তে জাতিসংঘকে একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস। তাদের দাবি, মানবিক সহায়তা নিতে আসা নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিকভাবে বিচারযোগ্য অপরাধ।

এদিকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স’ সতর্ক করে জানিয়েছে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ মানবিক সহায়তাকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের অভিযোগ, গাজার জনগণকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করতে এই সাহায্যকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে।

গাজার মাটি যেন এখন এক নির্মম যুদ্ধক্ষেত্র। যেখানে ক্ষুধা, গুলি ও আন্তর্জাতিক নীরবতা একত্রে সৃষ্টি করেছে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়।