ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার পথে যুক্তরাষ্ট্র

- আপডেট সময় ১২:০২:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫
- / 18
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন একটি কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ চূড়ান্ত করেছে, যাতে ব্যাংক ও জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মূলত ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন তাঁর প্রচেষ্টায় মস্কোর ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারেন, সে লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা এবং এ বিষয়ে অবগত একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, এই নিষেধাজ্ঞার প্রধান লক্ষ্য রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি সংস্থা গ্যাজপ্রমসহ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ব্যাংক খাতের সঙ্গে যুক্ত বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজে ট্রাম্প অনুমোদন দেবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও শুরুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি তাঁর সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখা গিয়েছিল, তবে সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনায় পুতিনের অস্বীকৃতি ট্রাম্পকে হতাশ করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
হোয়াইট হাউসের এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য একটি পরিকল্পনা সাজাচ্ছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর নির্ভর করছে। কাউন্সিলের মুখপাত্র জেমস হিউইট বলেন, “প্রেসিডেন্ট শুরু থেকেই রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। চলমান মধ্যস্থতা নিয়ে আমরা প্রকাশ্যে মন্তব্য করি না।” মার্কিন অর্থ বিভাগ সাধারণত এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করে, তবে এবারের উদ্যোগে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি স্বাক্ষরিত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন খনিজ চুক্তির পর নতুন নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজে ট্রাম্পের অনুমোদন মিললে সেটি রাশিয়ার প্রতি তার অবস্থানকে আরও কঠোর হিসেবে উপস্থাপন করবে। এই খনিজ চুক্তি ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা একাধিকবার মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যদিও এসব পদক্ষেপ রাশিয়ার অর্থনীতিকে আঘাত করেছে, তবুও মস্কো বিভিন্ন উপায়ে তা পাশ কাটিয়ে যুদ্ধে অর্থায়ন করে যাচ্ছে।
সাবেক মার্কিন ন্যাটো দূত কার্ট ভলকার বলেন, “ট্রাম্প পুতিনকে শান্তির প্রতিটি সুযোগ দিতে চেয়েছেন, কিন্তু পুতিন সবকিছু প্রত্যাখ্যান করেছেন। এখন এই নিষেধাজ্ঞা হলো রাশিয়ার ওপর চাপ তৈরির নতুন ধাপ।”
তবে, ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি সম্প্রতি বিচার বিভাগের একটি টাস্কফোর্স বাতিল করেছেন, যা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে কাজ করছিল। পাশাপাশি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে যুদ্ধের জন্য দায়ী করে মস্কোপন্থী বক্তব্য দিয়েছেন।
ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল মস্কোর হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে একটি শান্তি কৌশলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। তবে এসব কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাঝেই রুশ বাহিনী ইউক্রেনের শহরে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যেখানে বেসামরিক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
এই প্রেক্ষাপটে নতুন নিষেধাজ্ঞা কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে স্পষ্টতই, ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেন ইস্যুতে নতুন করে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে।