ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করনীয় ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা

- আপডেট সময় ০১:২৭:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
- / 5
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগটি সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে দেখা যায়। প্রতি বছর, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ে, বিশেষ করে বর্ষাকালে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি, কারণ এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। এই ব্লগে আমরা ডেঙ্গু সম্পর্কে জানব, এর উপসর্গ, কারণ এবং প্রতিরোধের উপায়গুলো বিশ্লেষণ করব।
ডেঙ্গু কি?
ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। এই ভাইরাসটি চারটি ভেরিয়েন্টে বিভক্ত: ডেঙ্গু ১, ২, ৩, এবং ৪। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করলে তা সাধারণত 3 থেকে 14 দিনের মধ্যে উপসর্গ প্রকাশ করে। ডেঙ্গু জ্বর খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি রক্তের প্লেটলেট কমিয়ে দেয়, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এখন ডেঙ্গু হলে সামান্য জ্বরেই হার্ট, কিডনি ও বেইন আক্রান্ত হচ্ছে। সাথে রোগী দ্রুত শকে যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়েছে। বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকেই ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে আছেন। বর্তমানে গ্রামের চেয়ে শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশে কখন ডেঙ্গুর উপদ্রব বেশি হয়?
বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষাকাল এবং মৌসুমী বৃষ্টির সময় ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, কারণ এই সময় এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধি পায়। তাই, এই সময় বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করা উচিত।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত:
মশার প্রজনন স্থান দূর করা: মশার প্রজননের জন্য জমে থাকা পানির স্থানগুলো যেমন ফুলের টব, কলস, এবং অন্যান্য স্থান পরিষ্কার করা।
মশারি ব্যবহার করা: রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করে নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
পোশাকের প্রতি সচেতনতা: যতটা সম্ভব প্রায় সবসময় দীর্ঘ হাতা এবং প্যান্ট পরিধান করা। এই ধরনের পোশাক মশার কামড় থেকে কিছুটা রক্ষা করতে পারে।
মশার তাড়ক ব্যবহার করা: ঘরে বা বাইরে যাওয়ার সময় মশার তাড়ক ব্যবহার করা, যা মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে সহায়ক।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা: কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
১. ফুলের টব, এসি, ফ্রিজের নিচসহ বাসার যেকোনো স্থানের আবদ্ধ পানি নিয়মিত অপসারণ করুন।
২. আপনার চারপাশের জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করুন, প্রয়োজনে জমে থাকা পানিতে ব্লিচিং পাউডার ছিটান।
৩. পানি জমে থাকতে পারে এমন জিনিসপত্র উল্টে রাখুন। এছাড়া পরিত্যাপ্ত টায়ার, ডাব/নারিকেলের খোসা, প্লাস্টিকের বোতল ও আশে-পাশের পড়ে থাকা পাত্রের জমা পানি ৩ দিনের মধ্যে ফেলে দিন।
৪. দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন।
৫. জানালাতে মশা প্রতিরোধক নেট ব্যবহার করুন।
৬. শরীরের অনাবৃত স্থানে মশা নিবারক ক্রিম ব্যবহার করুন।
৭. মশা নিধনের ওষুধ, স্প্রে কিংবা কয়েল ব্যবহার করুন।
৮. পাতলা কিংবা ঢোলা পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকুন।
৯. শিশু এবং বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নিয়ে নিরাপদে থাকুন।
১০. আপনার বাড়ির আঙ্গিনা ও আশ-পাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
ডেঙ্গুর সতর্কতা
ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে জ্বর সেরে যাওয়ার পরবর্তী সময় খুবই ভয়ঙ্কর। এসময় তীব্র পেট ব্যথা, বার বার বমি, পাতলা পায়খানা অথবা শরীরের যেকোনো স্থান থেকে রক্তক্ষরণ, রোগীর শরীর ও হাত-পা ঠা-া হয়ে গেলে, কিছুই খেতে না পারলে এবং শরীর অনেক দূর্বল ও হাঁটাচলা করতে কষ্ট হলে অতি দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
ডেঙ্গু একটি গুরুতর রোগ, যা সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই আমাদের সচেতন থাকতে হবে এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সমন্বয় করে আমাদের সবাইকে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে এই সংগ্রামে আমাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।