রাজস্ব ঘাটতি ও ঋণের বেড়াজালে সরকার: অর্থনীতিতে কী প্রভাব?
বড় রাজস্ব ঘাটতি, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে স্থবিরতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের ব্যাংকঋণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকায়, যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে তা ঋণাত্মক ছিল ৭৪১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকঋণ বেড়েছে প্রায় ২৯১৭ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। গত জুলাই-ডিসেম্বরে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা লক্ষ্য ছিল দুই লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। ফলে, ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা।
এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা বন্ধ হওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া ছাড়া সরকারের কোনো বিকল্প ছিল না। ঋণ প্রবাহে মন্দাভাব এবং উচ্চ সুদের হার বেসরকারি খাতের ঋণ কমিয়ে দিয়েছে, যার ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে টাকা পড়ে থাকে এবং তারা সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করতে বাধ্য হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি এবং বিদেশি সাহায্যের কম প্রবাহ সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে বাধ্য করছে। তবে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সরকারকে বেসরকারি খাতের ঋণের ক্ষতি না করে সরকারি খাতে ঋণ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আহরণের পরিধি বাড়ানোর জন্য কর ব্যবস্থা আরও কার্যকর করতে হবে, তবে সাধারণ মানুষের ওপর কোনো অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে।
ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, “রাজস্ব ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতিবছরই সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়, কিন্তু মূল্যস্ফীতির সময় ঋণ বাড়ানো দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে, রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর মাধ্যমে এই ঋণগ্রস্ততা কমানো সম্ভব।”
বর্তমানে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছে, তবে এটি মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ তৈরি করতে পারে। তাই দ্রুত রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার ও দক্ষতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।