ঢাকা ১২:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেন ডা. জুবাইদা রহমান তারেক রহমানের ৩১ দফা কর্মসূচি নিয়ে মালয়েশিয়ায় বিএনপির কর্মশালা ঢাবি ভিসিকে দোষী দেখিয়ে মূল সত্য আড়াল করার পাঁয়তারা: সারজিসের অভিযোগ চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়া অর্থনীতির নতুন দিগন্ত সম্ভব নয়: ড. ইউনূস শাহরিয়ার সাম্য হত্যাকাণ্ড: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন ‘অপরাধের স্বর্গরাজ্য’: হাসনাত আব্দুল্লাহ সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলমের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা ট্রাম্প করেনি: ভারতের স্পষ্ট বার্তা টাইগারদের আরব আমিরাত সফর শুরু, পাকিস্তান সিরিজ নিয়ে শঙ্কা চট্টগ্রাম বন্দর ঘুরে দেখলেন প্রধান উপদেষ্টা ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা, আলোচনার মাঝেই উত্তেজনা বৃদ্ধি

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে নতুন অধ্যাদেশ: সরকার নিতে পারবে সাময়িক মালিকানা

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৬:০০:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
  • / 5

ছবি সংগৃহীত

 

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকে ইসলামি ধারাসহ যেকোনো তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নিতে পারবে। এ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এক বা একাধিক শেয়ার হস্তান্তরের নির্দেশ জারি করতে পারবে। তবে শেয়ার গ্রহীতা অবশ্যই সরকারি মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান হতে হবে।

সম্প্রতি ছুটির দিনে সরকার “ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫” নামে ৬৭ পৃষ্ঠার গেজেট প্রকাশ করেছে। এর আগে, ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের মালিক যদি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নিজ স্বার্থে ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল ব্যবহার করে, কিংবা প্রতারণার মাধ্যমে তা অন্যের স্বার্থে ব্যবহার করে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে রেজল্যুশনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। রেজল্যুশনের অর্থ হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে দুর্বল ব্যাংকে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি বিদ্যমান বা নতুন শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধির সুযোগও থাকবে। পাশাপাশি শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তরের সুযোগও রয়েছে।

যদি কোনো ব্যাংক কার্যকারিতা হারায় বা দেউলিয়া হওয়ার পথে থাকে, কিংবা আমানতকারীদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি বিশেষ বিভাগ গঠন করবে, যা অধ্যাদেশে উল্লেখ রয়েছে।

ব্যাংকের কার্যক্রম চালু রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্রিজ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাবে, যা পরে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করা যাবে। এই ব্রিজ ব্যাংকই সাময়িকভাবে দুর্বল বা দেউলিয়া ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার বলেন, “অধ্যাদেশটি বিশ্লেষণ করে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। তবে সব ব্যাংককে এক পাল্লায় মাপা ঠিক নয়। অল্প কিছু ছাড়া বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংক ভালোভাবে চলছে।” তিনি আরও বলেন, “চেয়ারম্যান বদলে পরিচালনায় বিশেষ উন্নয়ন হয়নি। বরং সরকারি ব্যাংকগুলোর দিকেই নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।”

অধ্যাদেশে ব্যাংক খাতের সংকট মোকাবিলায় সাত সদস্যের একটি “সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল” গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই কাউন্সিল প্রতি তিন মাসে একবার বৈঠক করবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছাড়াও থাকবেন অর্থসচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বিএসইসির চেয়ারম্যান, লেজিসলেটিভ সচিব এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুজন ডেপুটি গভর্নর।

কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল হলে বাংলাদেশ ব্যাংক অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করবে এবং মনোনীত অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হবে। অবসায়নের পর সুদ বা মাশুল কার্যকর হবে না।

এছাড়া ব্যাংক নিজেরাও অবসায়নের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না। লাইসেন্স বাতিলের সাত দিনের মধ্যে আমানত ও দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য দায় পরিশোধ করতে হবে।

সবশেষে, কোনো ব্যক্তির কার্যকলাপের কারণে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন। অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করলে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা এবং প্রতিদিন বিলম্বে ৫ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে।

এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হলে দেশের ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে নতুন অধ্যাদেশ: সরকার নিতে পারবে সাময়িক মালিকানা

আপডেট সময় ০৬:০০:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

 

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকে ইসলামি ধারাসহ যেকোনো তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নিতে পারবে। এ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এক বা একাধিক শেয়ার হস্তান্তরের নির্দেশ জারি করতে পারবে। তবে শেয়ার গ্রহীতা অবশ্যই সরকারি মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান হতে হবে।

সম্প্রতি ছুটির দিনে সরকার “ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫” নামে ৬৭ পৃষ্ঠার গেজেট প্রকাশ করেছে। এর আগে, ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের মালিক যদি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নিজ স্বার্থে ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল ব্যবহার করে, কিংবা প্রতারণার মাধ্যমে তা অন্যের স্বার্থে ব্যবহার করে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে রেজল্যুশনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। রেজল্যুশনের অর্থ হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে দুর্বল ব্যাংকে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি বিদ্যমান বা নতুন শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধির সুযোগও থাকবে। পাশাপাশি শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তরের সুযোগও রয়েছে।

যদি কোনো ব্যাংক কার্যকারিতা হারায় বা দেউলিয়া হওয়ার পথে থাকে, কিংবা আমানতকারীদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি বিশেষ বিভাগ গঠন করবে, যা অধ্যাদেশে উল্লেখ রয়েছে।

ব্যাংকের কার্যক্রম চালু রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্রিজ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাবে, যা পরে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করা যাবে। এই ব্রিজ ব্যাংকই সাময়িকভাবে দুর্বল বা দেউলিয়া ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার বলেন, “অধ্যাদেশটি বিশ্লেষণ করে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। তবে সব ব্যাংককে এক পাল্লায় মাপা ঠিক নয়। অল্প কিছু ছাড়া বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংক ভালোভাবে চলছে।” তিনি আরও বলেন, “চেয়ারম্যান বদলে পরিচালনায় বিশেষ উন্নয়ন হয়নি। বরং সরকারি ব্যাংকগুলোর দিকেই নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।”

অধ্যাদেশে ব্যাংক খাতের সংকট মোকাবিলায় সাত সদস্যের একটি “সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল” গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই কাউন্সিল প্রতি তিন মাসে একবার বৈঠক করবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছাড়াও থাকবেন অর্থসচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বিএসইসির চেয়ারম্যান, লেজিসলেটিভ সচিব এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুজন ডেপুটি গভর্নর।

কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল হলে বাংলাদেশ ব্যাংক অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করবে এবং মনোনীত অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হবে। অবসায়নের পর সুদ বা মাশুল কার্যকর হবে না।

এছাড়া ব্যাংক নিজেরাও অবসায়নের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না। লাইসেন্স বাতিলের সাত দিনের মধ্যে আমানত ও দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য দায় পরিশোধ করতে হবে।

সবশেষে, কোনো ব্যক্তির কার্যকলাপের কারণে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন। অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করলে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা এবং প্রতিদিন বিলম্বে ৫ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে।

এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হলে দেশের ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।