ঢাকা ০৫:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার পরও উন্নয়ন সহযোগীদের নেই প্রত্যাশিত সাড়া

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১১:৫০:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
  • / 30

ছবি: সংগৃহীত

 

ডলার সংকট, ব্যাংক খাতের অনিয়ম ও অর্থ পাচারের ফলে নানামুখী সংকটে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের হাল ধরে অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণে অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ সহায়তা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্র সফরসহ আন্তর্জাতিক পরিসরে দাতা সংস্থাগুলোর কাছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও সংস্কারে সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। তবে আট মাস পার হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) প্রথম নয় মাসে বৈদেশিক ঋণ প্রতিশ্রুতি এসেছে মাত্র ৩০০ কোটি ৫৩ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫৮ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের এই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ৭২৪ কোটি ২১ লাখ ডলার।

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি সময়ে সরকার নতুন কোনো বড় প্রকল্প নিচ্ছে না, যা ঋণ প্রতিশ্রুতি হ্রাসের অন্যতম কারণ। তাছাড়া, দাতা সংস্থাগুলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি এবং স্বচ্ছতা বিবেচনায় রাখে বলেও বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন।

ড. ইউনূসের সরকার আইএমএফ থেকে ৩ বিলিয়ন, বিশ্বব্যাংক ও জাইকার কাছ থেকে আরও ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছে। তবে এখনও এসব অনুরোধে স্পষ্ট সাড়া মেলেনি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ড. ইউনূস বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশের নতুন যাত্রায় অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানান।

তবে গবেষণা সংস্থা সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন প্রকল্প ছাড়া বড় অংকের ঋণ সহায়তা পাওয়া কঠিন। আর এই সরকার এখনো তেমন প্রকল্প হাতে নেয়নি। সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানও মনে করেন, উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যথাযথ নেগোসিয়েশন ও প্রস্তুতির অভাব অর্থ ছাড়ে বিলম্বের অন্যতম কারণ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এডিবি ৭০ কোটি, বিশ্বব্যাংক ৯৪ কোটি ৪৫ লাখ, জাইকা ৮৩ কোটি ৪১ লাখ, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংক ১৬ কোটি এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৩৬ কোটি ৬৬ লাখ ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে।

অন্যদিকে, অর্থ ছাড়ও কমেছে। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৪৮০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮২ কোটি ডলার কম। এর মধ্যে প্রকল্প ঋণ ৪৪৭ কোটি ডলার ও অনুদান ৩৩ কোটি ডলার।

এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও ধীরগতি চোখে পড়ছে। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৪.২৭ শতাংশ, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ চলতি বছর বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বেশি, যার মধ্যে এখনও খরচ হয়নি প্রায় ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক জটিলতা ও দুর্নীতির ইতিহাস সব মিলিয়ে বৈদেশিক ঋণ সহায়তায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এসব অচলাবস্থার অবসান না হলে আগামী দিনে বৈদেশিক সহায়তা আরও কমে যেতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার পরও উন্নয়ন সহযোগীদের নেই প্রত্যাশিত সাড়া

আপডেট সময় ১১:৫০:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

 

ডলার সংকট, ব্যাংক খাতের অনিয়ম ও অর্থ পাচারের ফলে নানামুখী সংকটে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের হাল ধরে অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণে অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ সহায়তা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্র সফরসহ আন্তর্জাতিক পরিসরে দাতা সংস্থাগুলোর কাছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও সংস্কারে সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। তবে আট মাস পার হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) প্রথম নয় মাসে বৈদেশিক ঋণ প্রতিশ্রুতি এসেছে মাত্র ৩০০ কোটি ৫৩ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫৮ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের এই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ৭২৪ কোটি ২১ লাখ ডলার।

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি সময়ে সরকার নতুন কোনো বড় প্রকল্প নিচ্ছে না, যা ঋণ প্রতিশ্রুতি হ্রাসের অন্যতম কারণ। তাছাড়া, দাতা সংস্থাগুলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি এবং স্বচ্ছতা বিবেচনায় রাখে বলেও বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন।

ড. ইউনূসের সরকার আইএমএফ থেকে ৩ বিলিয়ন, বিশ্বব্যাংক ও জাইকার কাছ থেকে আরও ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছে। তবে এখনও এসব অনুরোধে স্পষ্ট সাড়া মেলেনি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ড. ইউনূস বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশের নতুন যাত্রায় অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানান।

তবে গবেষণা সংস্থা সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন প্রকল্প ছাড়া বড় অংকের ঋণ সহায়তা পাওয়া কঠিন। আর এই সরকার এখনো তেমন প্রকল্প হাতে নেয়নি। সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানও মনে করেন, উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যথাযথ নেগোসিয়েশন ও প্রস্তুতির অভাব অর্থ ছাড়ে বিলম্বের অন্যতম কারণ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এডিবি ৭০ কোটি, বিশ্বব্যাংক ৯৪ কোটি ৪৫ লাখ, জাইকা ৮৩ কোটি ৪১ লাখ, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংক ১৬ কোটি এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৩৬ কোটি ৬৬ লাখ ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে।

অন্যদিকে, অর্থ ছাড়ও কমেছে। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৪৮০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮২ কোটি ডলার কম। এর মধ্যে প্রকল্প ঋণ ৪৪৭ কোটি ডলার ও অনুদান ৩৩ কোটি ডলার।

এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও ধীরগতি চোখে পড়ছে। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৪.২৭ শতাংশ, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ চলতি বছর বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বেশি, যার মধ্যে এখনও খরচ হয়নি প্রায় ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক জটিলতা ও দুর্নীতির ইতিহাস সব মিলিয়ে বৈদেশিক ঋণ সহায়তায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এসব অচলাবস্থার অবসান না হলে আগামী দিনে বৈদেশিক সহায়তা আরও কমে যেতে পারে।