শস্য উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাবে ন্যানো ইউরিয়া, কমবে খরচ, রক্ষা পাবে মাটির উর্বরতা

- আপডেট সময় ১২:৫১:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
- / 21
বাংলাদেশের কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে ন্যানো ইউরিয়া সার। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাবেদ হোসেন খানের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি কৃষকের সারের খরচ কমিয়ে আনবে শতকরা ৯৫ ভাগ পর্যন্ত। বর্তমানে এক বিঘা জমিতে ইউরিয়া সারে যেখানে খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার ২০০ টাকা, সেখানে ন্যানো ইউরিয়া ব্যবহারে তা নামবে মাত্র ২৩০ টাকায়।
কৃষি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধুমাত্র উৎপাদন খরচই নয়, এই সার ব্যবহার করলে রক্ষা পাবে দেশের ফসলি জমির উর্বরতাও। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমাণে।
বাংলাদেশে ধান চাষের জন্য বছরে প্রয়োজন হয় প্রায় ৩০ লাখ টন ইউরিয়া সার। এর ৮০ শতাংশই আমদানিনির্ভর। ফলে প্রতিবছর ইউরিয়া আমদানিতে গড়ে খরচ হয় হাজার হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সালে এই খাতে ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারে দিন দিন কমছে মাটির উর্বরতা। ন্যানো ইউরিয়া সেই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে কৃষিকে।
ড. জাবেদ হোসেন খান জানান, “ন্যানো ইউরিয়া মূলত একটি উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর সার, যা স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। এটি খুবই কার্যকরী এবং এর মাত্রা কম হলেও ফলন বাড়ে। ইতোমধ্যে আমেরিকার বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে অনুমোদিত হয়েছে এবং সেখানে গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মিনেসোটা ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান এই প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে ন্যানো ইউরিয়া উদ্ভাবনের জন্য আমি একটি আন্তর্জাতিক প্যাটেন্টও পেয়েছি।”
বগুড়ার শেরপুরে পরীক্ষামূলকভাবে কৃষকদের জমিতে ন্যানো ইউরিয়া প্রয়োগ করে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে কৃষকদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে।
ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপের হেড অব অপারেশন মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, “আমরা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একাডেমিয়া-ইন্ডাস্ট্রি পার্টনারশিপে কাজ করছি। এই সার বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে কৃষিতে একটি বড় পরিবর্তন আসবে।”
কৃষিবিদরা মনে করছেন, এই প্রযুক্তি দ্রুত বিস্তারের জন্য সরকারের সরাসরি সহযোগিতা জরুরি। ড. মো. সদরুল আমিন বলেন, “ন্যানো প্রযুক্তি এখন সারা বিশ্বেই ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশেও এই প্রযুক্তির বিকাশে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এর জন্য চাই গবেষণা সহায়তা ও নীতিগত সুবিধা।”
প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে ন্যানো ইউরিয়ার ব্যবহার বাড়ানো গেলে কৃষি উৎপাদনে খরচ অন্তত ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। পাশাপাশি কৃষকের আয়ে আসবে স্বস্তি এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
নতুন এই প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়নে গবেষণা, সরকারি নীতিমালা ও কৃষকের সচেতনতার সমন্বয় হলে বাংলাদেশ কৃষিতে নতুন বিপ্লবের পথে হাঁটবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।