সড়ক ভাঙনের ফলে সকল ধরণের যান চলাচল বন্ধ

- আপডেট সময় ০৬:৪১:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
- / 1
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার পৌরসভাধীন দক্ষিণ পানিধার এলাকার একটি সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পৌরসভার ০৬ নং ওয়ার্ডের কয়েক’শ পরিবারের মানুষের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,উপজেলার পৌরসভার দক্ষিণ পানিধার এলাকার তলিয়ে যাওয়া সড়কটি কয়েক’শ পরিবারের হাজারো মানুষের যাতায়াত। সড়কটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নিকুড়ি গাঙের ছড়া।মাস খানিক আগে পাহাড়ি ঢল আর আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল পুরো গ্রাম। গাঙের পানির তীব্র স্রোতে এলাকার কয়েক’শ পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সড়কটির প্রায় ৪০’ ফুট জায়গা গাঙের পানির সাথে তলিয়ে যায়।এতে লোকজনকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে সৃষ্টি বন্যায় নিকুড়ি গাঙটির প্রবল স্রোতে তলিয়ে গিয়েছে দক্ষিণ পানিধার এলাকার একটি সড়ক।এতে করে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জনদুর্ভোগ।সড়কটির পাশেই রয়েছে একটি এতিমখানা মাদ্রাসা।যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি ভাঙার কারনে এতিমখানার কোমলমতি শিশুদের মাদ্রাসায় আসতে অনেক অসুবিধা দেখা দেয়।ছোট ছোট বাচ্চারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করছে। এছাড়াও এই সড়কটি দিয়ে অসুস্থ রোগীদের নিয়ে যাওয়া খুবই দুঃসাধ্য। বৃদ্ধ লোকদের কোলে করে নিয়ে সড়কের ভাঙা অংশ পাড়ি দিতে হয়। একটু বৃষ্টি হলেও পানি জমে সড়কটি বন্ধ হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে মানুষ চাকরি,বাজার,শিক্ষা,চিকিৎসা সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় যাতায়াত করে থাকেন। স্থানীয়রা হেটে চলাচল করার জন্য ব্যাগিং মাটি সহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙা অংশে ফেলে কোনো ভাবে যাতায়াত করছে।পাশাপাশি গাঙের পানি না ঢুকার জন্য বাঁশের খুঁটি পোঁতা দিয়ে সীমানা দিয়েছে এলাকাবাসীরা।
জানা যায়,বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে যে পাহাড়ি ঢল নেমে আসে তা এসে পড়ে নিকুড়ি গাঙে।এছাড়াও মুছেগুল,হিনাইনগর,গৌরনগর,কাঁঠলতলী,বরইতলী,মাধবকুণ্ড, ডিমাই,পাখিয়ালা, পানিধার,কেছরীগুল,ছিকামল সহ আরোও বিভিন্ন এলাকার পানি নিকুড়ি গাঙে এসে পড়ে।যখনি অতি বৃষ্টি বা পাহাড়ি ঢল নামে তখন নিকুড়ি গাঙের ছড়াটি আর পানি ধরে রাখতে পারে না।এতে করে গাঙের উপর দিয়ে প্রবল স্রোতে প্রবাহিত হয় পানি।পরে দেখা দেয় গাঙের পাড় ভাঙন ও তলিয়ে যায় গ্রামটির একমাত্র সড়ক।
দক্ষিণ পানিধার গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ বলেন, আমাদের নিকুড়ি গাঙের পাড়ের সড়কটি বন্যার পানিতে ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়।এখানে ২টি মসজিদ, ১টি এতিমখানা ও কয়েক’শ পরিবার রয়েছে।বাচ্চাদের স্কুলে আসা যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।আমার কর্তৃপক্ষ কাছে আকুল আবেদন আমাদের এই সড়কটি যেন দ্রুত সংস্কার করে আমাদের দূর্ভোগ পোহাতে সহায়তা করেন।
পানিধার হযরত আবু বক্কর ছিদ্দিক( রা) মাদ্রাসার হিফয বিভাগের শিক্ষক বলেন, আমাদের মাদরাসাটিতে নুরানী ও হিফয শাখা রয়েছে।এখানে অনেক ছোট ছোট বাচ্চারা লেখাপড়া করে।সড়কটি ভাঙার পর থেকে অনেক পবিবার তাদের বাচ্চাকে মাদরাসায় দিতে চাচ্ছে না।কেননা তাদের বাচ্চারা এই ঝুঁকিপূর্ণ সড়কটি যাতায়াত করতে গিয়ে অনেকবার আহত হয়েছে।বড়োরাও বৃষ্টির সময় যাতায়াত করতে গিয়ে পড়ে যান।তাই আমরা সড়কটির দ্রুত সংস্কার চাই।
দক্ষিণ পানিধার গ্রামের মো হোসাইন বলেন, অতিরিক্ত পানির চাপে রাস্তাটি ভেঙে গেছে। একমাত্র চলাচলের রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছি। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যেতে সমস্যা হয়। রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় চলাচলে কষ্ট হচ্ছে।সড়কটি দ্রুত মেরামত করার দাবি জানাচ্ছি।
দক্ষিণ পানিধার গ্রামের বাসিন্দা আজিম উদ্দিন বলেন,সড়কটি ভাঙার ফলে এলাকায় একটি মোটরসাইকেল, অটোরিকশা সিএনজি পর্যন্ত যেতে পারে না।অসুস্থ রোগীদের হাসপাতাল নিতে অনেক কষ্ট হয়।বাড়িতে একটি চালের বস্তা নিয়ে কতটুকু পরিশ্রম করতে হয় তা বলার মতো নয়।আমরা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই।
০৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সমাজসেবক শাহরিয়ার ফাহিম বলেন,দক্ষিণ পানিধারের এই অঞ্চলটি একটি জনবহুল এলাকা।দীর্ঘদিন থেকে রাস্তাটি প্রায় বন্ধ।আমি স্থানীয়দের নিয়ে সড়কটি সংস্কারের জন্য পৌর প্রশাসক ও ইউএনও মহোদয় বরাবর একটি লিখিত দরখাস্ত দিয়েছি।এই এলাকায় অনেক ছোট ছোট বাচ্চারা রয়েছে।এই ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে যেকোনো সময় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।আমি কর্তৃপক্ষের নিকট জোড়ালো আবেদন জানাচ্ছি যে,এই এলাকার বৃদ্ধ, শিশু, অসুস্থ রোগী,শিক্ষার্থী সহ সকল মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রুত যেন সড়কটি মেরামত করা হয়।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী দেবজিৎ চন্দ্র দাস জানান,আমি সড়কটি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি সেখানের ভাঙা সড়কটি একেবারে চলাচলের অনুপযোগী। সড়কটি সংস্কারের জন্য আগে রাস্তার পাড় গার্ডওয়াল দিয়ে পরে কাজ করতে হবে।এর জন্য বড় বাজেট ও অনেক সময়ের প্রয়োজন। আপাতত চলাচলের উপযোগী করে তুলতে মাটি ভরাট করতে হবে।জনস্বার্থে সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার জানান, বন্যার কারনে ভাঙা সড়কটি নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে একটা দরখাস্ত পেয়েছি।বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।সড়কটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।