ঢাকা ০৪:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ইয়ামালকে ১০ গুণ বেশি বেতন দিতে চলেছে বার্সা: তরুণ তারকার জন্য বিশাল বিনিয়োগ ময়মনসিংহে বাণিজ্যিক আঙ্গুর চাষে সুমনের অভাবনীয় সাফল্য বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও বাড়বে তাপমাত্রা, ঢাকা থাকছে মেঘাচ্ছন্ন টিকিট জোগাড়ে প্রস্তুতি: ২ জুনের ট্রেন টিকিট আজ বিক্রি শুরু মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ৫৯৭ অভিবাসী আটক: ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান মাইক্রোসফটে অভ্যন্তরীণ ইমেইলে “ফিলিস্তিন” শব্দ নিষিদ্ধ মার্কিন-বিরোধী উস্কানির অভিযোগ: হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করল ট্রাম্প সরকারি দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকদের মজুরি বাড়লো: কার্যকর ১ জুলাই থেকে ভূমি সেবায় হয়রানির অবসান ঘটাতে মন্ত্রণালয় অঙ্গীকারাবদ্ধ: সিনিয়র সচিব কাশ্মীরে বন্দুকযুদ্ধে ১ ভারতীয় সেনা নিহত: নতুন করে বাড়ছে উত্তেজনা

ময়মনসিংহে বাণিজ্যিক আঙ্গুর চাষে সুমনের অভাবনীয় সাফল্য

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৪:৩০:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
  • / 3

ছবি সংগৃহীত

 

ময়মনসিংহের ভালুকায় অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন আহমেদ বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার বাগানের মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে ইউক্রেন, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের তেরো জাতের টসটসে আঙ্গুর, যা ইতিমধ্যেই বিক্রির জন্য প্রস্তুত। সুমন ময়মনসিংহ বিভাগে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন।

উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প: উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের কৈয়াদী গ্রামের কৃষক ও ব্যবসায়ী মো. আবদুস ছাত্তারের ছেলে সুমন আহমেদ। তিনি সরকারি মুজিব কলেজ, সখিপুর-এ সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে নতুন কিছু করার আগ্রহ ছিল। এলাকার অনেকেই বিদেশি ফলের চাষ করতেন, যা দেখে সুমনও নিজের এলাকায় অপ্রচলিত কোনো ফল চাষের কথা ভাবেন। ফেসবুক ও ইউটিউবে বিদেশি আঙ্গুর চাষের ভিডিও দেখে তার এই ফলের প্রতি আগ্রহ জন্মে।

সাফল্যের পথে চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণ: ২০২২ সালে সুমন নিজেদের সাত শতক জমিতে ইন্ডিয়ান একটি জাতের আঙ্গুর চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো হলেও আঙ্গুর মিষ্টি না হওয়ায় তিনি হতাশ হন এবং সেই গাছগুলো কেটে ফেলেন। তবে হাল ছাড়েননি। অদম্য সুমন ২০২৪ সালে আবার নতুন করে ইউক্রেন, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের বাইকুনর, একেলো, ভেলেজ, ডিক্সন, গ্রিণ লং, থার্টি ওয়া, মাসকাট হুয়াইট, বন্টাক ম্যাজিক সহ মোট তেরো জাতের ৩৫টি আঙ্গুরের চারা রোপণ করেন। বর্তমানে তার বাগানে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন জাতের আঙ্গুরের থোকা।

খরচ ও লাভ: ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত জমি প্রস্তুত, চারা কেনা, মাচা তৈরি, জিআই তারের বেড়া, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ সুমনের প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তার বাগানে লাগানো ৩৫টি চারার মধ্যে ৩৩টিতেই ফল ধরেছে এবং সেগুলো বিক্রির উপযোগী হয়েছে। সুমন আশা করছেন, এ বছর বাগান থেকে এক লাখ টাকার আঙ্গুর বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়াও, তিনি ইতিমধ্যেই ৫০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করেছেন এবং আরও প্রায় এক লাখ টাকার চারা বিক্রির আশা করছেন। আঙ্গুর বাগান থেকে বছরে দু’বার ফলন পাওয়া যায়। প্রথম দফার ফলন তিনি পুরোপুরি তুলতে পারবেন বলে আশাবাদী। তবে, পলিনেট হাউজ না থাকায় বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় দফার ফলন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সুমন ভবিষ্যতে বাগান সম্প্রসারণের পাশাপাশি খরচ কমিয়ে লাভের পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন।
কৃষি বিভাগের সহায়তা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: সুমন আহমেদের বাগান দেখতে প্রতিদিন ৫-৭ জন দর্শনার্থী আসেন। তার বাগান দেখে আশপাশের অনেকেই আঙ্গুর চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ডাকাতিয়া ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামের সুলতান উদ্দিন সুমনের বাগান পরিদর্শন করে আঙ্গুরের স্বাদ ও মিষ্টিতে মুগ্ধ হয়ে নিজেও চারা সংগ্রহ করেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান, ভালুকা উপজেলার মাটি যেকোনো ফল চাষের জন্য উপযোগী এবং সুমনের বাগানে ভালো ফলন এসেছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, ময়মনসিংহ বিভাগে বাণিজ্যিকভাবে এটিই প্রথম আঙ্গুর বাগান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোছা. নাছরিন আক্তার বানুও সুমনের বাগান পরিদর্শন করেছেন এবং তরুণ এই উদ্যোক্তাকে সরকারিভাবে ‘পলিনেট হাউজ’ ব্যবস্থা করে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। তিনি মনে করেন, এতে সুমন আরও বেশি লাভবান হবেন এবং বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষ সম্প্রসারিত হলে দেশের আমদানি ব্যয়ও কমে আসবে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ময়মনসিংহে বাণিজ্যিক আঙ্গুর চাষে সুমনের অভাবনীয় সাফল্য

আপডেট সময় ০৪:৩০:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

 

ময়মনসিংহের ভালুকায় অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন আহমেদ বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার বাগানের মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে ইউক্রেন, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের তেরো জাতের টসটসে আঙ্গুর, যা ইতিমধ্যেই বিক্রির জন্য প্রস্তুত। সুমন ময়মনসিংহ বিভাগে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন।

উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প: উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের কৈয়াদী গ্রামের কৃষক ও ব্যবসায়ী মো. আবদুস ছাত্তারের ছেলে সুমন আহমেদ। তিনি সরকারি মুজিব কলেজ, সখিপুর-এ সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে নতুন কিছু করার আগ্রহ ছিল। এলাকার অনেকেই বিদেশি ফলের চাষ করতেন, যা দেখে সুমনও নিজের এলাকায় অপ্রচলিত কোনো ফল চাষের কথা ভাবেন। ফেসবুক ও ইউটিউবে বিদেশি আঙ্গুর চাষের ভিডিও দেখে তার এই ফলের প্রতি আগ্রহ জন্মে।

সাফল্যের পথে চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণ: ২০২২ সালে সুমন নিজেদের সাত শতক জমিতে ইন্ডিয়ান একটি জাতের আঙ্গুর চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো হলেও আঙ্গুর মিষ্টি না হওয়ায় তিনি হতাশ হন এবং সেই গাছগুলো কেটে ফেলেন। তবে হাল ছাড়েননি। অদম্য সুমন ২০২৪ সালে আবার নতুন করে ইউক্রেন, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের বাইকুনর, একেলো, ভেলেজ, ডিক্সন, গ্রিণ লং, থার্টি ওয়া, মাসকাট হুয়াইট, বন্টাক ম্যাজিক সহ মোট তেরো জাতের ৩৫টি আঙ্গুরের চারা রোপণ করেন। বর্তমানে তার বাগানে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন জাতের আঙ্গুরের থোকা।

খরচ ও লাভ: ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত জমি প্রস্তুত, চারা কেনা, মাচা তৈরি, জিআই তারের বেড়া, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ সুমনের প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তার বাগানে লাগানো ৩৫টি চারার মধ্যে ৩৩টিতেই ফল ধরেছে এবং সেগুলো বিক্রির উপযোগী হয়েছে। সুমন আশা করছেন, এ বছর বাগান থেকে এক লাখ টাকার আঙ্গুর বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়াও, তিনি ইতিমধ্যেই ৫০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করেছেন এবং আরও প্রায় এক লাখ টাকার চারা বিক্রির আশা করছেন। আঙ্গুর বাগান থেকে বছরে দু’বার ফলন পাওয়া যায়। প্রথম দফার ফলন তিনি পুরোপুরি তুলতে পারবেন বলে আশাবাদী। তবে, পলিনেট হাউজ না থাকায় বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় দফার ফলন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সুমন ভবিষ্যতে বাগান সম্প্রসারণের পাশাপাশি খরচ কমিয়ে লাভের পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন।
কৃষি বিভাগের সহায়তা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: সুমন আহমেদের বাগান দেখতে প্রতিদিন ৫-৭ জন দর্শনার্থী আসেন। তার বাগান দেখে আশপাশের অনেকেই আঙ্গুর চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ডাকাতিয়া ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামের সুলতান উদ্দিন সুমনের বাগান পরিদর্শন করে আঙ্গুরের স্বাদ ও মিষ্টিতে মুগ্ধ হয়ে নিজেও চারা সংগ্রহ করেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান, ভালুকা উপজেলার মাটি যেকোনো ফল চাষের জন্য উপযোগী এবং সুমনের বাগানে ভালো ফলন এসেছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, ময়মনসিংহ বিভাগে বাণিজ্যিকভাবে এটিই প্রথম আঙ্গুর বাগান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোছা. নাছরিন আক্তার বানুও সুমনের বাগান পরিদর্শন করেছেন এবং তরুণ এই উদ্যোক্তাকে সরকারিভাবে ‘পলিনেট হাউজ’ ব্যবস্থা করে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। তিনি মনে করেন, এতে সুমন আরও বেশি লাভবান হবেন এবং বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষ সম্প্রসারিত হলে দেশের আমদানি ব্যয়ও কমে আসবে।