ঢাকা ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব ট্রাম্পের, ভারতের প্রতিক্রিয়া কী? আ.লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে ভারতের উদ্বেগ নোয়াখালীতে যুবলীগ কর্মীকে হত্যা, মরদেহ ফেলার সময় আটক ২ ঢাকার মূল সড়কে রিকশা নিষিদ্ধ: ডিএনসিসি প্রশাসক ভোজ্যতেল বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে রাইস ব্রান তেল কিনবে সরকার কমেছে উড়োজাহাজ জ্বালানির দাম দেশীয় গরুর জাত রক্ষায় জরুরি রোডম্যাপের তাগিদ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার স্বাস্থ্যসেবায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মানবিক করিডোর নিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা বললেন হাফিজ উদ্দিন বিয়ের খরচ চিন্তা করে এখনো সিঙ্গেল সালমান খান!

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১২ বছর আজ, বিচারহীনতার এক যুগ পার

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১০:৪২:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
  • / 29

ছবি: সংগৃহীত

 

আজ রানা প্লাজা ধসের ১২তম বার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে সাভারের বাসস্ট্যান্ড এলাকার রানা প্লাজা ধসে পড়েছিল, যা বাংলাদেশের শিল্প ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক প্রাণ হারান, আহত হন আরও প্রায় দুই হাজার। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আজও সেই শোক বুকে নিয়ে দিন গুনছেন।

ধসের আগের দিন ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়, কিন্তু মালিকপক্ষ সেই সতর্কতা উপেক্ষা করে। পরদিন সকালে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হয় ভবনের পাঁচটি গার্মেন্টসে। কিছুক্ষণ পরই শব্দ করে ধসে পড়ে পুরো ভবন, চাপা পড়ে শত শত মানুষ। রক্ত, কান্না আর আহাজারিতে ভরে ওঠে সাভারের আকাশ।

দুর্ঘটনার পাঁচ দিন পর, ২৯ এপ্রিল, ভবনটির মালিক সোহেল রানা ভারতে পালানোর সময় যশোরের বেনাপোল সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার হন র‍্যাবের হাতে। পরে তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়—পুলিশের দায়ের করা অবহেলাজনিত হত্যা মামলা, রাজউকের ইমারত নির্মাণ আইনে মামলা এবং দুদকের দুটি দুর্নীতি মামলা।

দীর্ঘ ১২ বছরে কেবল সম্পদের তথ্য গোপনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। অন্য মামলাগুলো এখনও আদালতের দীর্ঘসূত্রতায় ঝুলে আছে। ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৯৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া শেষ হয়েছে। কখন বিচার শেষ হবে, তা নির্ধারণ করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষও। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে ইমারত নির্মাণ সংক্রান্ত মামলার কার্যক্রমও থমকে আছে।

রানা প্লাজা ধস এখন শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের অন্যতম বড় শিল্প দুর্ঘটনার প্রতীক। এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোড়ন তুলেছিল। শ্রমিক নিরাপত্তা, কারখানার অবকাঠামো ও মালিকপক্ষের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে সর্বত্র।

প্রতি বছর এই দিনে, ধসে পড়া ভবনের স্মৃতিতে নানা কর্মসূচি নেয়া হয়। আজও ব্যতিক্রম নয়। সকালে সাভারের অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নিহতদের পরিবার, আহত শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকে। তাঁদের চোখে এখনও বেঁচে আছে সেই বিভীষিকাময় দিনের স্মৃতি।

রানা প্লাজা ধস যেন এক সতর্ক বার্তা হয়ে থাকে শ্রমিকের জীবনের চেয়ে লাভ বড় নয়। এই দিনের স্মরণ আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়, দায়িত্ব অবহেলার মাশুল কতটা ভয়াবহ হতে পারে। ন্যায়বিচারের দাবি আজও রয়ে গেছে অপূর্ণ, বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে উদ্বিগ্ন সকলে।

১২ বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষত সারেনি। হয়তো কোনো দিন সারবেও না। তবে এই দিনটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে যুগের পর যুগ।

নিউজটি শেয়ার করুন

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১২ বছর আজ, বিচারহীনতার এক যুগ পার

আপডেট সময় ১০:৪২:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

 

আজ রানা প্লাজা ধসের ১২তম বার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে সাভারের বাসস্ট্যান্ড এলাকার রানা প্লাজা ধসে পড়েছিল, যা বাংলাদেশের শিল্প ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক প্রাণ হারান, আহত হন আরও প্রায় দুই হাজার। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আজও সেই শোক বুকে নিয়ে দিন গুনছেন।

ধসের আগের দিন ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়, কিন্তু মালিকপক্ষ সেই সতর্কতা উপেক্ষা করে। পরদিন সকালে শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হয় ভবনের পাঁচটি গার্মেন্টসে। কিছুক্ষণ পরই শব্দ করে ধসে পড়ে পুরো ভবন, চাপা পড়ে শত শত মানুষ। রক্ত, কান্না আর আহাজারিতে ভরে ওঠে সাভারের আকাশ।

দুর্ঘটনার পাঁচ দিন পর, ২৯ এপ্রিল, ভবনটির মালিক সোহেল রানা ভারতে পালানোর সময় যশোরের বেনাপোল সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার হন র‍্যাবের হাতে। পরে তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়—পুলিশের দায়ের করা অবহেলাজনিত হত্যা মামলা, রাজউকের ইমারত নির্মাণ আইনে মামলা এবং দুদকের দুটি দুর্নীতি মামলা।

দীর্ঘ ১২ বছরে কেবল সম্পদের তথ্য গোপনের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। অন্য মামলাগুলো এখনও আদালতের দীর্ঘসূত্রতায় ঝুলে আছে। ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৯৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া শেষ হয়েছে। কখন বিচার শেষ হবে, তা নির্ধারণ করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষও। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে ইমারত নির্মাণ সংক্রান্ত মামলার কার্যক্রমও থমকে আছে।

রানা প্লাজা ধস এখন শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের অন্যতম বড় শিল্প দুর্ঘটনার প্রতীক। এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোড়ন তুলেছিল। শ্রমিক নিরাপত্তা, কারখানার অবকাঠামো ও মালিকপক্ষের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে সর্বত্র।

প্রতি বছর এই দিনে, ধসে পড়া ভবনের স্মৃতিতে নানা কর্মসূচি নেয়া হয়। আজও ব্যতিক্রম নয়। সকালে সাভারের অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নিহতদের পরিবার, আহত শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকে। তাঁদের চোখে এখনও বেঁচে আছে সেই বিভীষিকাময় দিনের স্মৃতি।

রানা প্লাজা ধস যেন এক সতর্ক বার্তা হয়ে থাকে শ্রমিকের জীবনের চেয়ে লাভ বড় নয়। এই দিনের স্মরণ আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়, দায়িত্ব অবহেলার মাশুল কতটা ভয়াবহ হতে পারে। ন্যায়বিচারের দাবি আজও রয়ে গেছে অপূর্ণ, বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে উদ্বিগ্ন সকলে।

১২ বছর পেরিয়ে গেলেও ক্ষত সারেনি। হয়তো কোনো দিন সারবেও না। তবে এই দিনটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে যুগের পর যুগ।