দেশজুড়ে পাঁচ দফা দাবিতে চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও ইন্টার্নদের আন্দোলন
দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন, মেডিকেল অফিসার ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থীরা আবারও পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন। তাদের এই আন্দোলন স্বাস্থ্যসেবার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে, যার ফলে রোগীরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
বুধবার, ১২ মার্চ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাহির বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকায় রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েন। বেশ কয়েক ঘণ্টা সেবা বন্ধ থাকার পর রোগীরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন এবং হাসপাতালের পরিচালকের অফিসের সামনে জমা হয়ে বাগবিতণ্ডা করেন। এরপর, হাসপাতালের পরিচালক অনুরোধ করলে আন্দোলনরত চিকিৎসকরা সেবা প্রদান শুরু করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য মেডিকেল কলেজেও আন্দোলন চলছে, যার মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজও অন্তর্ভুক্ত। সেখানে সেবা ব্যাহত হওয়ায় রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের প্রধান পাঁচ দফা দাবি হলো:
১. এমবিবিএস/বিডিএস ব্যতীত কাউকে ‘চিকিৎসক’ বলা যাবে না: বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) বিরুদ্ধে করা রিট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। শুধুমাত্র এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রি ধারীকে বিএমডিসি নিবন্ধন দিবে। ২০১০ সাল থেকে ম্যাটসদের (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বিএমডিসি নিবন্ধন দেওয়া শুরু হয়েছে, যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
২. ওভার দ্য কাউন্টার (OTC) ড্রাগ লিস্ট আপডেট করতে হবে: উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ OTC ড্রাগ লিস্ট তৈরি করতে হবে। এমবিবিএস বা বিডিএস ছাড়া কেউ OTC লিস্টের বাইরের ঔষধ প্রেসক্রাইব করতে পারবে না এবং রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিগুলো OTC লিস্টের বাইরের ঔষধ বিক্রি করতে পারবে না।
৩. ১০,০০০ চিকিৎসক নিয়োগ: স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকের সংকট নিরসনের জন্য দ্রুত ১০,০০০ চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে এবং সব শূন্যপদ পূর্ণ করতে হবে। আলাদা স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করে চিকিৎসকদের সপ্তম গ্রেডে নিয়োগ দিতে হবে এবং প্রতিবছর ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ চিকিৎসক নিয়োগ করতে হবে। চিকিৎসকদের বিসিএসে বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে হবে।
৪. অন্তত মানহীন মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা: সকল মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট স্কুল (ম্যাটস) ও নিম্নমানের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ করতে হবে। ইতিমধ্যে পাস করা ম্যাটস শিক্ষার্থীদের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) পদবি রহিত করে তাদের মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।
৫. চিকিৎসকদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে ৩ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পর চিকিৎসক সমাজের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সাত মাস পেরিয়েও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এই আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
এ আন্দোলন মঙ্গলবার, ১১ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এবং শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, যদি তাদের দাবি মেনে না নেওয়া হয়, তাহলে সব শিক্ষক ও চিকিৎসককে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে।