কুমিল্লায় হুমকির মুখে বাণিজ্যিক পান চাষ, সরকারি সহায়তার দাবি চাষিদের

- আপডেট সময় ১২:৪০:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
- / 4
কুমিল্লায় ক্রমেই কমছে বাণিজ্যিকভাবে পান চাষ। সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল হওয়া সত্ত্বেও কৃষকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন বিভিন্ন কারণে। চাষিরা বলছেন, পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। এর ওপর কৃষি বিভাগ থেকেও তেমন কোনো তদারকি বা সহায়তা না মেলায় লাভের বদলে লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে শত বছরের এই পান চাষ যে কোনো সময় বিলীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লার চান্দিনা, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, বুড়িচং ও বরুড়াসহ বিভিন্ন উপজেলার ১১৬ হেক্টর জমিতে পান চাষ হতো। তবে গত এক বছরে তা কমে ৮০ হেক্টরে নেমে এসেছে।
দেবিদ্বারের গুনাইঘর ও চান্দিনার হারং গ্রামে দেখা যায়, রাস্তার পাশজুড়ে সারি সারি পানের বরজ। কেউ পান গাছ বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিচ্ছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন, আবার কেউ সবুজ পান তুলছেন বিক্রির জন্য। বাতাসে দুলতে থাকা তাজা পান পাতা যে কারো মন জুড়িয়ে দেবে।
স্থানীয় পান চাষি অনিল চন্দ্র দত্ত বলেন, ‘গাছ পচে যাচ্ছে, পাতাও নষ্ট হচ্ছে। কোন ওষুধ ব্যবহার করবো বুঝতে পারি না, কৃষি অফিস থেকেও কোনো পরামর্শ মেলে না। গাছ লাগানো থেকে বিক্রি পর্যন্ত প্রচুর খরচ হয়, কিন্তু লাভ আর থাকছে না। যদি সরকার প্রণোদনা ও সঠিক দিকনির্দেশনা দিত, তাহলে লোকসান হতো না।’
আরেক চাষি নেপাল জানান, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে এই চাষে আছি। আগে অনেক ভালো রোজগার হতো, কিন্তু এখন সার, ওষুধসহ সবকিছুর খরচ বেড়ে যাওয়ায় আর আগের মতো লাভ নেই। ফলে অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে।’
পান চাষি নিখিল চন্দ্রের আক্ষেপ, ‘কৃষিতে নানা প্রণোদনা থাকে, নগদ টাকা, সার-বীজ দেওয়া হয়, কিন্তু পান চাষিরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমাদের সঙ্গে এই বৈষম্য কেন? সরকার যেন আমাদের পাশে দাঁড়ায়।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, ‘পান চাষিদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি, তবে তাদের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। আগামীতে সহায়তার প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘পান চাষের মতো উৎপাদনশীল খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে বেকারত্বও বাড়বে, যার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়তে বাধ্য। তাই সরকারকে এই খাত রক্ষায় প্রণোদনা ও পরামর্শমূলক সহায়তা বাড়াতে হবে।’