বরিশাল বিভাগে বেড়িবাঁধের অরক্ষিত অবস্থা: বর্ষার আগে সংস্কারের জোর দাবি, সম্বল হারানোর শঙ্কায় আড়াই লাখ মানুষ
বরিশাল বিভাগের বেশিরভাগ বেড়িবাঁধ বর্তমানে অরক্ষিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে যদি এদের সংস্কার না করা হয়, তবে দক্ষিণাঞ্চলের ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। নদীভাঙনের কারণে আড়াই লাখ মানুষ তাদের ভিটেমাটি ও শেষ সম্বল হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জরুরি সংস্কারের প্রয়োজন, তবে এই কাজে প্রয়োজনীয় অর্থ এখনো বরাদ্দ হয়নি। আপৎকালীন কিছু মেরামত কাজ চলছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়।
বরগুনার পাথরঘাটার রূপদোন এলাকায় বিষখালী নদীর তীরে বেড়িবাঁধের বেহাল দশা। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে প্রায় আধা কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এক বছরেও মেরামত হয়নি। ফলে পাঁচটি গ্রামের প্রায় দুই লাখ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এছাড়া পটুয়াখালীতে আগুনমুখা নদী একের পর এক গ্রাস করছে গলাচিপা উপজেলার কয়েকটি গ্রাম। আগামী বর্ষায় এই অঞ্চলে আরও কয়েকটি গ্রাম বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাঙ্গাবালী, কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জ ও বাউফল উপজেলার বাসিন্দারা জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে রয়েছেন।
ঝালকাঠিতে সুগন্ধা ও বিশখালি নদীর তীব্র ভাঙনে ৫০টি গ্রামের মানুষ বিপদে। দীর্ঘদিন ধরে তারা নদীভাঙনের শিকার হলেও কোনো সহায়তা পাননি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এ দুটি নদীর তীরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মিত হলেও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশিরভাগ বাঁধ ভেঙে গেছে।
ভোলার তজুমদ্দিনের দড়ি চাঁদপুর গ্রামের মেঘনা পাড়ে প্রায় ২ কিলোমিটার বাঁধ গত দুই বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০২৩ সালে নতুন বাঁধ নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করলেও কাজ শুরু হয়নি। ফলে এখানকার বাসিন্দারা মেঘনার জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল হান্নান জানিয়েছেন, বরিশাল বিভাগে প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৯৭ কিলোমিটার জরুরি সংস্কারের প্রয়োজন। এতে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। তবে, অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পরই কাজ শুরু হবে।
এখনই প্রয়োজন, বর্ষার আগেই বেড়িবাঁধগুলো সংস্কার করা না হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে।