ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে বৃদ্ধাকে চুন-কালি মেখে অপমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাঞ্চল্য
চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক গ্রামে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে চুন-কালি মেখে ঘোরানোর ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসীর এই অমানবিক আচরণ নিয়ে সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ওই বৃদ্ধার বিরুদ্ধে এক তরুণীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও অনৈতিক আচরণের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগটি জানাজানি হওয়ার পর এলাকাবাসী আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে তাকে প্রকাশ্যে অপমান করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অভিযুক্ত বৃদ্ধাকে গ্রামবাসী ধরে নিয়ে আসে এবং তার শরীরে চুন-কালি মেখে পুরো গ্রাম ঘোরায়। এ সময় কেউ কেউ হাসাহাসি করে, আবার কেউ ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এতে পুরো এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে। পুলিশ বলছে, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। অভিযোগ যদি সত্যও হয়, তবে সেটির যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এ ঘটনার সত্যতা যাচাই করছি। যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে বৃদ্ধাকে অপমান করেছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ঘটনায় স্থানীয়রা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, এলাকাবাসীর এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য এবং তারা আরও মানবিক হতে পারত। অন্যদিকে, কিছু মানুষ বৃদ্ধার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিচার দাবি করেছেন।
মানবাধিকার কর্মীরা একে গণঅপমান এবং বিচার বহির্ভূত শাস্তি বলে আখ্যা দিয়েছেন। তারা বলছেন, অপরাধের বিচার করার দায়িত্ব আদালতের, জনতার নয়।
এ ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বৃদ্ধার ওপর হামলাকারীদের শনাক্ত করার জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি। এ ধরনের অন্যায় আচরণ সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে। যারা এতে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ঘটনা আবারও গণবিচারের ঝুঁকি ও এর ভয়াবহ পরিণতি সামনে নিয়ে এসেছে। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কাউকে অপমান করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি বৃদ্ধার বিরুদ্ধে সত্যিই কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে সেটি আইনের মাধ্যমে সঠিকভাবে তদন্ত করে বিচার করা উচিত। প্রশাসন এখন তদন্ত করছে, ফলে প্রকৃত ঘটনা সামনে আসবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করা যায়।