ঢাকা ০৯:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমজানে ফিলিস্তিনিদের আল-আকসায় প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল ইসরায়েল

খবরের কথা ডেস্ক

ছবি: সংগৃহীত

 

ইসলামী বিশ্বের অন্যতম পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ এবং তার সংলগ্ন এলাকা, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর রমজান মাসে মুসলমানরা সারা বিশ্ব থেকে আল-আকসায় ইবাদত করার জন্য আগমন করেন। তবে, এবার ইসরাইল কর্তৃক রমজান মাসে ফিলিস্তিনিদের আল-আকসায় প্রবেশের উপর নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যা ফিলিস্তিনি মুসলিমদের জন্য চরম হতাশার সৃষ্টি করেছে।

ইসরাইলের সরকার, রমজান মাসে ফিলিস্তিনিদের জন্য আল-আকসা মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য শর্ত আরোপ করেছে, যা ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
নতুন বিধিনিষেধে উল্লেখযোগ্য কিছু শর্ত হল:
বয়সের সীমাবদ্ধতা:
কেবলমাত্র ৫০ বছরের নিচে ফিলিস্তিনিদের জন্য আল-আকসায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
৫০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যদিও এর আগে তারা নিয়মিত মসজিদে আসতে পারতেন।
পাসপোর্ট ও অনুমতির প্রয়োজন:
ফিলিস্তিনিদের মক্কা ও মদিনায় যাত্রার মতো আল-আকসায় প্রবেশের জন্যেও ইসরাইল কর্তৃক অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।
এই অনুমতি অনেক সময় জটিল ও দেরিতে দেওয়া হয়, যা মুসলিমদের রমজানে ইবাদত ও নামাজের সময় বাধা সৃষ্টি করে।

ইসরাইলি বাহিনী রাস্তা বন্ধ করে এবং আর্কওয়ে স্থাপন করে ফিলিস্তিনিদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করছে।
মসজিদ সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও কঠোরভাবে নজরদারি করতে বলা হয়েছে।

এই বিধিনিষেধের ফলে ফিলিস্তিনি জনগণ গভীর হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আল-আকসায় প্রবেশের অধিকারকে একজন মুসলিমের মৌলিক অধিকার হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু ইসরাইলি প্রশাসন এসব অধিকার ক্ষুন্ন করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের ইসলামিক আন্দোলন এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বলছে, “এটি এক ধরনের ধর্মীয় নির্যাতন, যা মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে।”

বিশ্বব্যাপী এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং ইসলামী দেশসমূহ। তুরস্ক, ইরান, কাতার এবং আলজেরিয়া এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেছে। তারা ইসরাইলের কাছে দাবি জানিয়ে বলেছে, “ফিলিস্তিনিরা তাদের ধর্মীয় অধিকার পূর্ণভাবে উপভোগ করার অধিকারী, এবং তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা উচিত নয়।”

ইসরাইলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যই এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তাদের দাবি, আল-আকসা মসজিদে মুসলিমদের বৃহৎ সমাবেশ ঘটলে সেখানে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার ঝুঁকি থাকতে পারে। ইসরাইলের দাবি, এই পদক্ষেপ মসজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নেয়া হয়েছে।

এই বিধিনিষেধ শুধু ফিলিস্তিনিদের ধর্মীয় অধিকারকেই ক্ষুন্ন করে না, বরং এটি ইসরাইল-প্যালেস্টাইন সংঘাতের আরো তীব্রতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। রমজান মাসে এই নিষেধাজ্ঞা মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ।

ইসরাইলের নতুন বিধিনিষেধ ফিলিস্তিনিদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রমজান মাসে আল-আকসায় ইবাদতের সুযোগ বন্ধ হওয়ার কারণে ফিলিস্তিনি মুসলিমরা গভীর হতাশা ও প্রতিবাদের সম্মুখীন হচ্ছে। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে এবং ফিলিস্তিনিদের ধর্মীয় অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৪:৪৯:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৫০৯ বার পড়া হয়েছে

রমজানে ফিলিস্তিনিদের আল-আকসায় প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল ইসরায়েল

আপডেট সময় ০৪:৪৯:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

ইসলামী বিশ্বের অন্যতম পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ এবং তার সংলগ্ন এলাকা, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর রমজান মাসে মুসলমানরা সারা বিশ্ব থেকে আল-আকসায় ইবাদত করার জন্য আগমন করেন। তবে, এবার ইসরাইল কর্তৃক রমজান মাসে ফিলিস্তিনিদের আল-আকসায় প্রবেশের উপর নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যা ফিলিস্তিনি মুসলিমদের জন্য চরম হতাশার সৃষ্টি করেছে।

ইসরাইলের সরকার, রমজান মাসে ফিলিস্তিনিদের জন্য আল-আকসা মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য শর্ত আরোপ করেছে, যা ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
নতুন বিধিনিষেধে উল্লেখযোগ্য কিছু শর্ত হল:
বয়সের সীমাবদ্ধতা:
কেবলমাত্র ৫০ বছরের নিচে ফিলিস্তিনিদের জন্য আল-আকসায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
৫০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যদিও এর আগে তারা নিয়মিত মসজিদে আসতে পারতেন।
পাসপোর্ট ও অনুমতির প্রয়োজন:
ফিলিস্তিনিদের মক্কা ও মদিনায় যাত্রার মতো আল-আকসায় প্রবেশের জন্যেও ইসরাইল কর্তৃক অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।
এই অনুমতি অনেক সময় জটিল ও দেরিতে দেওয়া হয়, যা মুসলিমদের রমজানে ইবাদত ও নামাজের সময় বাধা সৃষ্টি করে।

ইসরাইলি বাহিনী রাস্তা বন্ধ করে এবং আর্কওয়ে স্থাপন করে ফিলিস্তিনিদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করছে।
মসজিদ সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও কঠোরভাবে নজরদারি করতে বলা হয়েছে।

এই বিধিনিষেধের ফলে ফিলিস্তিনি জনগণ গভীর হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আল-আকসায় প্রবেশের অধিকারকে একজন মুসলিমের মৌলিক অধিকার হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু ইসরাইলি প্রশাসন এসব অধিকার ক্ষুন্ন করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের ইসলামিক আন্দোলন এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বলছে, “এটি এক ধরনের ধর্মীয় নির্যাতন, যা মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে।”

বিশ্বব্যাপী এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং ইসলামী দেশসমূহ। তুরস্ক, ইরান, কাতার এবং আলজেরিয়া এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেছে। তারা ইসরাইলের কাছে দাবি জানিয়ে বলেছে, “ফিলিস্তিনিরা তাদের ধর্মীয় অধিকার পূর্ণভাবে উপভোগ করার অধিকারী, এবং তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা উচিত নয়।”

ইসরাইলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যই এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তাদের দাবি, আল-আকসা মসজিদে মুসলিমদের বৃহৎ সমাবেশ ঘটলে সেখানে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার ঝুঁকি থাকতে পারে। ইসরাইলের দাবি, এই পদক্ষেপ মসজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নেয়া হয়েছে।

এই বিধিনিষেধ শুধু ফিলিস্তিনিদের ধর্মীয় অধিকারকেই ক্ষুন্ন করে না, বরং এটি ইসরাইল-প্যালেস্টাইন সংঘাতের আরো তীব্রতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। রমজান মাসে এই নিষেধাজ্ঞা মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ।

ইসরাইলের নতুন বিধিনিষেধ ফিলিস্তিনিদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রমজান মাসে আল-আকসায় ইবাদতের সুযোগ বন্ধ হওয়ার কারণে ফিলিস্তিনি মুসলিমরা গভীর হতাশা ও প্রতিবাদের সম্মুখীন হচ্ছে। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে এবং ফিলিস্তিনিদের ধর্মীয় অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।