ঢাকা ০৯:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিবগঞ্জে পানিবন্দি হাজার হাজার পরিবার

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৯:২০:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
  • / 0

ছবি সংগৃহীত

 

প্রতিবেদন: সাংবাদিক রিয়াদ মোস্তফা

পাঁকা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলমগীর বলছিলেন, “আমরা এখান থেকেই ভারতের ভেতর থেকে আসা পানি দেখতে পাই।ফারাক্কার দরজা খুলে দিলেই আমরা বিপদে পড়ি বন্যা চলে আসে। আসলে পাঁকা ও দূর্লভপুরের মানুষেরই বেশি কপাল খারাপ। ”

পাঁকা ও দূর্লভপুর ইউনিয়ন থেকে ভারতের সিমানা দেখা যায়। যে সিমানায় তাকালে ভারতের গঙ্গা নদী পদ্মা নাম ধারণা করে এই দুই ইউনিয়নকে স্পর্শ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যে ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে এতো তর্ক বিতর্ক সমালোচনা সে বাঁধের অবস্থান এই এলাকার সন্নিকটে আনুমানিক ১৭ কিলোমিটার দূরে ভারতের ভিতরে। বর্ষা মৌসুমের এ সময় ফারাক্কা বাঁধের দরজা অমোঘ নিয়মে খুলে দেওয়া হয় আর পানির প্রবাহ এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় জনজীবনকে।এ চিত্র কম বেশি প্রতিবছরই দেখা যায়।
এবারও পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গিয়েছে প্রায় ৫’শ হেক্টর জমির ফসল। বন্যার কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও শিবগঞ্জ কৃষি বিভাগের মতে বন্যার পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে ০. ৪৩ সেন্টিমিটার বাকী রয়েছে।

সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে পাঁকা ও উজিরপুর ইউনিয়নের সম্পূর্ণ ও দূর্লভপুর ও মনাকষা ইউনিয়নের আংশিক এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বোগলাউড়ি জাইটপাড়া গ্রামের চলাচলের রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রমত্ত পদ্মার দক্ষিন পাড় তথা চরপাঁকার বিছিন্ন এলাকার মানুষদের যোগাযোগ ব্যবস্হা সম্পূর্ণ ব্যাহত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। এতে অনেকের বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কেউ কেউ অন্য এলাকায় বাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন।আনুমানিক ৪৩০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসল তলিয়ে গেছে।

দূর্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা জেলে মফিজুল ইসলাম বলেন, চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। সব জায়গায় রাস্তা ঘাট ডুবে গেছে। নৌকা ছাড়া কোথায় যাওয়া যাচ্ছে না। এই বন্যায় আমাদের আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে।
চরপাঁকার হাসান, নিজের বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন আমাদের আর কিছু থাকলো না, বন্যার কারণে নদী সব নিয়ে গেলো।

অনেক জায়গায় বন্যার পানিতে বসতভিটা বাড়িঘর তলিয়ে যেতে দেখা গেছে। সেসব এলাকার বাসিন্দারা অনত্র আশ্রয় নিয়েছেন। মূলত বোগলাউড়ি, জাইটপাড়া, লক্ষীপুর, দোভাগী, নামো জগন্নাথপুর পুর, তারাপুর, চরপাঁকা, নারায়ণপুর ও উজিরপুর এলাকায় বন্যার প্রভাব পড়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম জানান, পদ্মা নদীর পানি আরো দুদিন বৃদ্ধি পাওযার সম্ভবনা আছে। বর্তমানে বিপদসীমার চেয়ে ০ .৪৩ সেন্টিমিটপার নীচে নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে ওয়াটার প্লেয়িং আছে ২১.৬৪ সেন্টিমিটার।

উদ্ভূত বন্যা পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর তালিকা তৈরী করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৫০০ পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার,টিন, নগদ টাকা, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

শিবগঞ্জে পানিবন্দি হাজার হাজার পরিবার

আপডেট সময় ০৯:২০:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

 

প্রতিবেদন: সাংবাদিক রিয়াদ মোস্তফা

পাঁকা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলমগীর বলছিলেন, “আমরা এখান থেকেই ভারতের ভেতর থেকে আসা পানি দেখতে পাই।ফারাক্কার দরজা খুলে দিলেই আমরা বিপদে পড়ি বন্যা চলে আসে। আসলে পাঁকা ও দূর্লভপুরের মানুষেরই বেশি কপাল খারাপ। ”

পাঁকা ও দূর্লভপুর ইউনিয়ন থেকে ভারতের সিমানা দেখা যায়। যে সিমানায় তাকালে ভারতের গঙ্গা নদী পদ্মা নাম ধারণা করে এই দুই ইউনিয়নকে স্পর্শ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যে ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে এতো তর্ক বিতর্ক সমালোচনা সে বাঁধের অবস্থান এই এলাকার সন্নিকটে আনুমানিক ১৭ কিলোমিটার দূরে ভারতের ভিতরে। বর্ষা মৌসুমের এ সময় ফারাক্কা বাঁধের দরজা অমোঘ নিয়মে খুলে দেওয়া হয় আর পানির প্রবাহ এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় জনজীবনকে।এ চিত্র কম বেশি প্রতিবছরই দেখা যায়।
এবারও পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গিয়েছে প্রায় ৫’শ হেক্টর জমির ফসল। বন্যার কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও শিবগঞ্জ কৃষি বিভাগের মতে বন্যার পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে ০. ৪৩ সেন্টিমিটার বাকী রয়েছে।

সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে পাঁকা ও উজিরপুর ইউনিয়নের সম্পূর্ণ ও দূর্লভপুর ও মনাকষা ইউনিয়নের আংশিক এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বোগলাউড়ি জাইটপাড়া গ্রামের চলাচলের রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রমত্ত পদ্মার দক্ষিন পাড় তথা চরপাঁকার বিছিন্ন এলাকার মানুষদের যোগাযোগ ব্যবস্হা সম্পূর্ণ ব্যাহত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। এতে অনেকের বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কেউ কেউ অন্য এলাকায় বাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন।আনুমানিক ৪৩০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসল তলিয়ে গেছে।

দূর্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা জেলে মফিজুল ইসলাম বলেন, চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। সব জায়গায় রাস্তা ঘাট ডুবে গেছে। নৌকা ছাড়া কোথায় যাওয়া যাচ্ছে না। এই বন্যায় আমাদের আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে।
চরপাঁকার হাসান, নিজের বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন আমাদের আর কিছু থাকলো না, বন্যার কারণে নদী সব নিয়ে গেলো।

অনেক জায়গায় বন্যার পানিতে বসতভিটা বাড়িঘর তলিয়ে যেতে দেখা গেছে। সেসব এলাকার বাসিন্দারা অনত্র আশ্রয় নিয়েছেন। মূলত বোগলাউড়ি, জাইটপাড়া, লক্ষীপুর, দোভাগী, নামো জগন্নাথপুর পুর, তারাপুর, চরপাঁকা, নারায়ণপুর ও উজিরপুর এলাকায় বন্যার প্রভাব পড়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম জানান, পদ্মা নদীর পানি আরো দুদিন বৃদ্ধি পাওযার সম্ভবনা আছে। বর্তমানে বিপদসীমার চেয়ে ০ .৪৩ সেন্টিমিটপার নীচে নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে ওয়াটার প্লেয়িং আছে ২১.৬৪ সেন্টিমিটার।

উদ্ভূত বন্যা পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর তালিকা তৈরী করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৫০০ পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার,টিন, নগদ টাকা, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।