টেক্সটাইল খাতের করুণ বাস্তবতা: বন্ধ হচ্ছে কারখানা, বিনিয়োগে ধস

- আপডেট সময় ১২:২৭:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
- / 9
দেশের বেসরকারি খাতের সর্ববৃহৎ বিনিয়োগ টেক্সটাইল শিল্পে, যার পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার বা ২ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। অথচ নানা প্রতিকূলতায় আজ এই খাতই ধ্বংসপ্রায়। উদ্যোক্তারা বলছেন, এখন তাঁরা ছাড়মূল্যে কারখানা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু গত এক বছরে বন্ধ হয়ে গেছে ২০টিরও বেশি মিল-কারখানা।
চরম সংকটে রয়েছে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। যাদের জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) তথ্যমতে, বর্তমানে সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ৮৫৮টি, যার মধ্যে রয়েছে স্পিনিং, উইভিং এবং ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং মিল।
শিল্পমালিকরা অভিযোগ করছেন, বিগত ২৫ বছরে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য কয়েকগুণ বেড়েছে, যা উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। অপরদিকে ডলারের সংকট, টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংকে সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫-১৬ শতাংশে পৌঁছেছে। সেইসঙ্গে রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় ব্যবসা পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বিটিএমএ সহ-সভাপতি মো. সালেউদ্দিন জামান খান জানান, একসময় গ্যাসই ছিল টেক্সটাইল খাতের প্রধান শক্তি। এখন সেই গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। প্রণোদনা কমে যাওয়ায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে। উল্টো পাশের দেশগুলো বিভিন্নভাবে টেক্সটাইল খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আগেই আয়কর দিতে হয়, যদিও কোনো আয় হয় না। তুলা আমদানির ওপর ২% অগ্রিম আয়কর (AIT) জারির কারণে পোর্টে তুলার স্তূপ জমছে।
বিটিএমএ পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “কারখানায় গ্যাস নেই, ব্যাংকে টাকা নেই, আবার আয় না থাকলেও অগ্রিম আয়কর দিতে হচ্ছে। আমরা এখন ছাড়মূল্যে কারখানা বিক্রি করতে চাই।”
বিটিএমএ পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব হায়দার বলেন, প্রতিদিনই নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, আয়কর—সবকিছুর চাপ বাড়ছে। সরকার সহযোগিতা না করলে একে একে কারখানা বন্ধ হবে, তারপর গার্মেন্টসও হুমকিতে পড়বে।
সংগঠনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি, যার ফলে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঘাটতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে কোনো রকম শুল্ক ছাড়া প্রতিবেশী দেশ থেকে সহজেই সুতা আমদানি হচ্ছে, যা দেশীয় শিল্পের জন্য বড় হুমকি। তিনি জানান, সরকার ৭ জুলাইয়ের বৈঠকে তুলা ও ফাইবার আমদানিতে আরোপিত ২% AIT তুলে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো নীতি সহায়তা না পেলে টেক্সটাইল খাত থেকে শুরু করে পুরো তৈরি পোশাক শিল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।