ঢাকা ০৭:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সাগরিকার হ্যাটট্রিক: শ্রীলঙ্কাকে গোলবন্যায় ভাসাল বাংলাদেশ বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ: পাবনায় ১০ নেতাকর্মীর বহিষ্কার কর্ণফুলী ইপিজেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: আগুন নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিটের অভিযান চারদিন সাগরে ভেসে থাকা ৯ জেলেকে উদ্ধার: এখনও নিখোঁজ ৩ বাংলাদেশে প্রথমবার মুক্তি পাচ্ছে নেপালি ছবি: ‘ন ডরাই’ এর বিনিময়ে ফয়জুল করীম: ‘দেশের রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়’ বিশ্বাসীদের কবি আল মাহমুদের ৯০তম জন্মদিন আজ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের পথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন হাসপাতাল নিতে বলায় গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা: আতঙ্কজনক ঘটনা ডেঙ্গু আতঙ্ক: মৃত্যু ২, হাসপাতালে ভর্তি ৩৩৭

ট্রাম্প ও ইরান: ‘বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট’ এবং আরেকটি যুদ্ধের আশঙ্কা

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৪:৪৮:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • / 29

ছবি সংগৃহীত

 

দুই দশক আগে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু করেছিল, তার ভিত্তি ছিল বিতর্কিত ও ভুল প্রমাণিত গোয়েন্দা তথ্য, বিশেষ করে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের খোঁজের নামে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরানের ক্ষেত্রেও কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে? এই প্রশ্নটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৈরি করা ‘বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটের’ কারণে।

‘আমাকে বিশ্বাস করো, কারণ আমি বলছি’ – কিন্তু কেন?
সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার প্রেক্ষাপাপটে ট্রাম্প আভাস দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র এই আক্রমণে যোগ দিতে পারে। তার দাবি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মাত্র কয়েক সপ্তাহ দূরে ছিল। কিন্তু এই বক্তব্য তার নিজের নিযুক্ত জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডের মার্চ মাসের প্রকাশ্য বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গ্যাবার্ড তখন কংগ্রেসে বলেছিলেন, “ইরান এখন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। সর্বোচ্চ নেতা খামেনি ২০০৩ সালে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত তা পুনরায় অনুমোদন দেননি।”

তাহলে ট্রাম্প কিসের ভিত্তিতে এমন বলছেন? গত বুধবার ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি তারা কয়েক সপ্তাহ দূরে ছিল।” যখন গ্যাবার্ডের বক্তব্যের সঙ্গে তার এই বক্তব্য মেলানো সম্ভব হচ্ছিল না, তখন ট্রাম্প সোজাসাপটা বলে বসেন, “আমি কী বলেছি, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাবার্ড কী বলেছে, তাতে আমি পাত্তা দিই না।”

সাফাই দিয়ে রিপাবলিকান সিনেটর মার্কওয়েইন মুলিন বলেন, গ্যাবার্ডের তথ্য পুরনো, কারণ তিনি “তখনো বাইডেন প্রশাসনের হস্তান্তরিত তথ্য বিশ্লেষণ করছিলেন।” কিন্তু গোপনীয় তথ্য প্রকাশে সংবেদনশীলতা দেখানোর অজুহাতে এই তথাকথিত “নতুন তথ্য” প্রকাশ করা হয়নি—শুধু বলা হয়েছে, ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের ওপর নির্ভর করা হচ্ছে।

এ নিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি অ্যাডাম স্মিথ বলেন, “ইরানের একটা অস্ত্র কর্মসূচি হয়তো আছে।” তবে সিনেটের গোয়েন্দা কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি মার্ক ওয়ার্নার বলেন, এমন কোনো নতুন গোয়েন্দা তথ্য নেই যা গ্যাবার্ডের বক্তব্যের বিরোধিতা করে। তিনি বলেন, “আমি আশঙ্কা করছি, সরকার এখন ‘গোয়েন্দা তথ্য বিকৃত’ করার পথে হাঁটছে—যেটা ইরাক যুদ্ধের সময়ও ঘটেছিল।”

সেন্টকম প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিল্লা সম্প্রতি বলেছেন, ইরান তিন সপ্তাহে ১০টি পারমাণবিক অস্ত্রের উপযুক্ত ইউরেনিয়াম তৈরি করতে পারবে। কিন্তু এই উপাদান তৈরি আর একটি কার্যকর, ডেলিভারযোগ্য বোমা তৈরি—এ দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। এ কারণেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখনো মনে করে, ইরান এমন অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা থেকে কমপক্ষে ২-৩ বছর দূরে রয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের অভিযোগ আগেও উঠেছে। গত মার্চে ভেনেজুয়েলাকে যুক্ত করে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের পেছনেও এমন ভুল তথ্য ব্যবহার হয়েছিল। সেই সময়ের আভ্যন্তরীণ ই-মেইল ফাঁস হওয়ার পর বোঝা যায়, গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনে রাজনৈতিক ভাষা ঢোকানোর চাপ ছিল। এক পর্যায়ে তুলসি গ্যাবার্ড জাতীয় গোয়েন্দা কাউন্সিলের দুই শীর্ষ পেশাদার কর্মকর্তাকে বরখাস্তও করেন। এই বিষয়টিকে অনেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষয়ের প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
পরিশেষে বলা যায়, ইরান নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের “যুদ্ধের ভিত্তি” তৈরির প্রচেষ্টা ইতোমধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বিশ্বাসযোগ্যতা, স্বচ্ছতা এবং স্পষ্ট তথ্যের অভাবে তাদের নিজস্ব বক্তব্যও এখন নিজেরাই খণ্ডন করে চলেছে। যদিও এবারের ভুলটা বড়—একটি সম্ভাব্য যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন একটাই: যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রশাসনের ওপর—সেই বিশ্বাস কি করা যায়, যারা কিনা বারবার তথ্য বিকৃতি করে চলেছে?

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্রাম্প ও ইরান: ‘বিশ্বাসযোগ্যতার সংকট’ এবং আরেকটি যুদ্ধের আশঙ্কা

আপডেট সময় ০৪:৪৮:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

 

দুই দশক আগে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু করেছিল, তার ভিত্তি ছিল বিতর্কিত ও ভুল প্রমাণিত গোয়েন্দা তথ্য, বিশেষ করে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের খোঁজের নামে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরানের ক্ষেত্রেও কি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে? এই প্রশ্নটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৈরি করা ‘বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটের’ কারণে।

‘আমাকে বিশ্বাস করো, কারণ আমি বলছি’ – কিন্তু কেন?
সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার প্রেক্ষাপাপটে ট্রাম্প আভাস দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র এই আক্রমণে যোগ দিতে পারে। তার দাবি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মাত্র কয়েক সপ্তাহ দূরে ছিল। কিন্তু এই বক্তব্য তার নিজের নিযুক্ত জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডের মার্চ মাসের প্রকাশ্য বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গ্যাবার্ড তখন কংগ্রেসে বলেছিলেন, “ইরান এখন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। সর্বোচ্চ নেতা খামেনি ২০০৩ সালে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত তা পুনরায় অনুমোদন দেননি।”

তাহলে ট্রাম্প কিসের ভিত্তিতে এমন বলছেন? গত বুধবার ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি তারা কয়েক সপ্তাহ দূরে ছিল।” যখন গ্যাবার্ডের বক্তব্যের সঙ্গে তার এই বক্তব্য মেলানো সম্ভব হচ্ছিল না, তখন ট্রাম্প সোজাসাপটা বলে বসেন, “আমি কী বলেছি, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাবার্ড কী বলেছে, তাতে আমি পাত্তা দিই না।”

সাফাই দিয়ে রিপাবলিকান সিনেটর মার্কওয়েইন মুলিন বলেন, গ্যাবার্ডের তথ্য পুরনো, কারণ তিনি “তখনো বাইডেন প্রশাসনের হস্তান্তরিত তথ্য বিশ্লেষণ করছিলেন।” কিন্তু গোপনীয় তথ্য প্রকাশে সংবেদনশীলতা দেখানোর অজুহাতে এই তথাকথিত “নতুন তথ্য” প্রকাশ করা হয়নি—শুধু বলা হয়েছে, ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের ওপর নির্ভর করা হচ্ছে।

এ নিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি অ্যাডাম স্মিথ বলেন, “ইরানের একটা অস্ত্র কর্মসূচি হয়তো আছে।” তবে সিনেটের গোয়েন্দা কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি মার্ক ওয়ার্নার বলেন, এমন কোনো নতুন গোয়েন্দা তথ্য নেই যা গ্যাবার্ডের বক্তব্যের বিরোধিতা করে। তিনি বলেন, “আমি আশঙ্কা করছি, সরকার এখন ‘গোয়েন্দা তথ্য বিকৃত’ করার পথে হাঁটছে—যেটা ইরাক যুদ্ধের সময়ও ঘটেছিল।”

সেন্টকম প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিল্লা সম্প্রতি বলেছেন, ইরান তিন সপ্তাহে ১০টি পারমাণবিক অস্ত্রের উপযুক্ত ইউরেনিয়াম তৈরি করতে পারবে। কিন্তু এই উপাদান তৈরি আর একটি কার্যকর, ডেলিভারযোগ্য বোমা তৈরি—এ দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। এ কারণেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখনো মনে করে, ইরান এমন অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা থেকে কমপক্ষে ২-৩ বছর দূরে রয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের অভিযোগ আগেও উঠেছে। গত মার্চে ভেনেজুয়েলাকে যুক্ত করে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের পেছনেও এমন ভুল তথ্য ব্যবহার হয়েছিল। সেই সময়ের আভ্যন্তরীণ ই-মেইল ফাঁস হওয়ার পর বোঝা যায়, গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনে রাজনৈতিক ভাষা ঢোকানোর চাপ ছিল। এক পর্যায়ে তুলসি গ্যাবার্ড জাতীয় গোয়েন্দা কাউন্সিলের দুই শীর্ষ পেশাদার কর্মকর্তাকে বরখাস্তও করেন। এই বিষয়টিকে অনেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষয়ের প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
পরিশেষে বলা যায়, ইরান নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের “যুদ্ধের ভিত্তি” তৈরির প্রচেষ্টা ইতোমধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বিশ্বাসযোগ্যতা, স্বচ্ছতা এবং স্পষ্ট তথ্যের অভাবে তাদের নিজস্ব বক্তব্যও এখন নিজেরাই খণ্ডন করে চলেছে। যদিও এবারের ভুলটা বড়—একটি সম্ভাব্য যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন একটাই: যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রশাসনের ওপর—সেই বিশ্বাস কি করা যায়, যারা কিনা বারবার তথ্য বিকৃতি করে চলেছে?