রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক নিরাপত্তার ঝুঁকি—জাতিসংঘে বাংলাদেশের হুঁশিয়ারি

- আপডেট সময় ১১:১৯:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
- / 4
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় (১৯ জুন) সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান না হলে তা শিগগিরই গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তাকে বিপর্যস্ত করতে পারে। তিনি মনে করিয়ে দেন, গত আট বছরের বেশি সময় ধরে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে আশ্রয় দিয়ে আসছে বাংলাদেশ, অথচ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অচল। ক্রমাগত দীর্ঘসূত্রিতা সংকটটিকে শুধু মানবিক ইস্যুতে সীমাবদ্ধ না রেখে অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও নিরাপত্তা–সংশ্লিষ্ট সঙ্কটের রূপ দিয়েছে।
তিনি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপদ ও মর্যাদাসম্পন্ন প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তাঁর ভাষায়, “সমাধান বিলম্বিত হলে মানবিক উদ্বেগ নিরাপত্তা হুমকিতে পরিণত হবে—এটি এড়ানো কারও পক্ষে সম্ভব হবে না।”
আলোচনায় দারিদ্র্য, বৈষম্য ও উন্নয়ন ঘাটতির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, তরুণরা শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলে চরমপন্থায় ঝুঁকের আশঙ্কা বাড়ে। ওই প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে তরুণদের পরিবর্তন-সচেতন ভূমিকার উদাহরণ দেন—ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রতিক গণআন্দোলন পর্যন্ত।
বিশ্বব্যাপী অসমতার পরিপ্রেক্ষিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ‘তিনটি শূন্য নীতির’ (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ) কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, শান্তি ও উন্নয়ন উদ্যোগকে একসূত্রে না জড়ালে টেকসই ভবিষ্যৎ কল্পনাই করা যাবে না। এজন্য নিরাপত্তা পরিষদ, ইকোসক, এবং নবগঠিত পিসবিল্ডিং কমিশনের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
‘সামাজিক ব্যবসা’ মডেলকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন থেকে সংঘাত প্রতিরোধ—উভয় ক্ষেত্রেই এই মডেল বাস্তবভিত্তিক সমাধান দিতে পারে। আলোচনায় সুইডেন, উরুগুয়ে, পূর্ব তিমুর, জার্মানি ইত্যাদি দেশের প্রতিনিধিরাও বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের তরফ থেকে আবারও জোর দিয়ে বলা হয়, একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই বিশ্ব গড়তে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ঢাকা।