০১:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনাম :
মোহাম্মদপুরে মা–মেয়েকে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হচ্ছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ঢাকা-১১ আসনে নির্বাচন করবেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম থাই–কাম্বোডিয়া সীমান্তে পুনরায় উত্তেজনা: অস্ত্রবিরতি ভেঙে বিমান হামলা, নিহত ১ সৈন্য ইসির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি দল জার্মান সেনাবাহিনী বাড়ছে: ২০৩৫ সালের মধ্যে ২,৬০,০০০ সক্রিয় সদস্যের লক্ষ্য অনুমোদন মধ্যপ্রাচ্যের কঠিনতম পানি প্রকল্প সম্পন্ন করল ইরান ফিনল্যান্ডে ডাটা সেন্টারের নির্গত  তাপে গরম হচ্ছে পুরো শহর চীন কোয়ান্টাম কম্পিউটারে সফলতা পেলে যুক্তরাষ্ট্রকে এক নিমেষে প্রস্তরযুগে পাঠিয়ে দেবে যুক্তরাষ্ট্রের F-35 যুদ্ধবিমান প্রকল্পে ফিরে আসার বিষয়ে আরো একধাপ এগিয়ে গেল তুরস্ক: এমনটাই জানিয়েছেন তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম ব্যারাক।

অচল সেন্টমার্টিন দ্বীপে দুর্বিষহ জীবন

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৬:১৩:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
  • / 244

ছবি সংগৃহীত

 

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে টিকে থাকা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পর্যটন বন্ধ থাকায় জীবিকার প্রধান উৎস হারিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন দ্বীপের প্রায় ১১ হাজার বাসিন্দা। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকার পর্যটকদের জন্য দ্বীপে প্রবেশ বন্ধ ঘোষণা করে। এর পর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ট্যুর গাইডিংসহ যাবতীয় ব্যবসা-বাণিজ্য।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, দ্বীপের শত শত পরিবার পেশা হারিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। অধিকাংশ হোটেল ও কটেজের দরজায় তালা ঝুলছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন হাজারো কর্মচারী। বাজারে নেই আগের মতো ক্রেতার ভিড়, ব্যবসাও নেই বললেই চলে।

বিজ্ঞাপন

মারমেইড রিসোর্ট-এর মালিক মাহবুব উল্লাহ জানান, ২০২৪ সালে মাত্র ৪০ দিনের জন্য কিছুটা ব্যবসা হয়েছিল। বছরের বাকি সময় হোটেল বন্ধ। ১৭ জন কর্মচারীকে বিদায় দিয়ে এখন শুধু একজন কেয়ারটেকার দিয়ে হোটেল চালু রাখা হয়েছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষার নামে আমাদের জীবন ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ কাজ না পেয়ে না খেয়ে মরার পথে। যদি সীমিত আকারে পর্যটক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরবে।

ইউরো বাংলা’ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুল হক জানান এভাবে চলতে থাকলে এখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। দ্বীপের মানুষ পুরোপুরি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু সেটা এখন বন্ধ।

স্থানীয় জেলে আবুল কালাম বলেন, “ভালো নেই ভাই। স্ত্রীসহ পাঁচ সন্তানের সংসার। ধার করে আর কয়দিন চলা যাবে? সরকার কি আমাদের কান্না শুনতে পায় না?”

আরেক জেলে জমির উদ্দিন জানান, মা অসুস্থ, মেয়ের জ্বর কিন্তু টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারছেন না। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

মাঝের পাড়ার গৃহবধূ মদিনা বেগম জানান, তার স্বামী ইউনিয়ন পরিষদে দফাদার হিসেবে কাজ করতেন, চাকরি হারিয়ে এখন কাজহীন। সংসারে পাঁচ সন্তান, নেই খাবারের জোগান।

৬০ বছর বয়সী বিধবা ফাতেমা খাতুন বলেন, “এই বয়সে এমন কষ্ট আর কখনও দেখিনি।”

মুদির দোকানদার ঈমাম শরীফ বলেন, মানুষ এখন চালও বাকি চায়। দিলেও টাকা ফেরত পায় না। ব্যবসা নেই, মাল আনতে খরচ বেশি, চলতে পারছি না।

ডাব বিক্রেতা এক বৃদ্ধ জানান, দুই ঘণ্টায় একটি ডাবও বিক্রি হয়নি। পর্যটক না থাকলে বিক্রি তো দূরের কথা, খরচই ওঠে না।

অভাবের তাড়নায় শিশুরা স্কুল ছাড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। সরকারি কোনো সাহায্য এখনও দ্বীপে পৌঁছায়নি বলে জানান স্থানীয়রা।

এক অভিভাবক জানান, টাকার অভাবে ছেলের কলেজে পড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কাউকে কিছু বলতে পারি না। ইচ্ছে করে বিষ খেয়ে মরতে। এমন জীবন আর ভালো লাগে না।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, একসময় এখানে ২ হাজারের বেশি মানুষ পর্যটনখাতে কাজ করতেন। এখন সবাই বেকার। অনেকে গরু-ছাগল, সোনা-গয়না বিক্রি করে বেঁচে আছে। এত খারাপ সময় কখনো আসেনি।

জেলা প্রশাসক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, সরকার স্থানীয়দের বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষা আমাদের দায়িত্ব। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

অচল সেন্টমার্টিন দ্বীপে দুর্বিষহ জীবন

আপডেট সময় ০৬:১৩:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

 

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে টিকে থাকা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পর্যটন বন্ধ থাকায় জীবিকার প্রধান উৎস হারিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন দ্বীপের প্রায় ১১ হাজার বাসিন্দা। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকার পর্যটকদের জন্য দ্বীপে প্রবেশ বন্ধ ঘোষণা করে। এর পর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ট্যুর গাইডিংসহ যাবতীয় ব্যবসা-বাণিজ্য।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, দ্বীপের শত শত পরিবার পেশা হারিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। অধিকাংশ হোটেল ও কটেজের দরজায় তালা ঝুলছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন হাজারো কর্মচারী। বাজারে নেই আগের মতো ক্রেতার ভিড়, ব্যবসাও নেই বললেই চলে।

বিজ্ঞাপন

মারমেইড রিসোর্ট-এর মালিক মাহবুব উল্লাহ জানান, ২০২৪ সালে মাত্র ৪০ দিনের জন্য কিছুটা ব্যবসা হয়েছিল। বছরের বাকি সময় হোটেল বন্ধ। ১৭ জন কর্মচারীকে বিদায় দিয়ে এখন শুধু একজন কেয়ারটেকার দিয়ে হোটেল চালু রাখা হয়েছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষার নামে আমাদের জীবন ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ কাজ না পেয়ে না খেয়ে মরার পথে। যদি সীমিত আকারে পর্যটক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরবে।

ইউরো বাংলা’ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুল হক জানান এভাবে চলতে থাকলে এখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। দ্বীপের মানুষ পুরোপুরি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু সেটা এখন বন্ধ।

স্থানীয় জেলে আবুল কালাম বলেন, “ভালো নেই ভাই। স্ত্রীসহ পাঁচ সন্তানের সংসার। ধার করে আর কয়দিন চলা যাবে? সরকার কি আমাদের কান্না শুনতে পায় না?”

আরেক জেলে জমির উদ্দিন জানান, মা অসুস্থ, মেয়ের জ্বর কিন্তু টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারছেন না। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

মাঝের পাড়ার গৃহবধূ মদিনা বেগম জানান, তার স্বামী ইউনিয়ন পরিষদে দফাদার হিসেবে কাজ করতেন, চাকরি হারিয়ে এখন কাজহীন। সংসারে পাঁচ সন্তান, নেই খাবারের জোগান।

৬০ বছর বয়সী বিধবা ফাতেমা খাতুন বলেন, “এই বয়সে এমন কষ্ট আর কখনও দেখিনি।”

মুদির দোকানদার ঈমাম শরীফ বলেন, মানুষ এখন চালও বাকি চায়। দিলেও টাকা ফেরত পায় না। ব্যবসা নেই, মাল আনতে খরচ বেশি, চলতে পারছি না।

ডাব বিক্রেতা এক বৃদ্ধ জানান, দুই ঘণ্টায় একটি ডাবও বিক্রি হয়নি। পর্যটক না থাকলে বিক্রি তো দূরের কথা, খরচই ওঠে না।

অভাবের তাড়নায় শিশুরা স্কুল ছাড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। সরকারি কোনো সাহায্য এখনও দ্বীপে পৌঁছায়নি বলে জানান স্থানীয়রা।

এক অভিভাবক জানান, টাকার অভাবে ছেলের কলেজে পড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কাউকে কিছু বলতে পারি না। ইচ্ছে করে বিষ খেয়ে মরতে। এমন জীবন আর ভালো লাগে না।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, একসময় এখানে ২ হাজারের বেশি মানুষ পর্যটনখাতে কাজ করতেন। এখন সবাই বেকার। অনেকে গরু-ছাগল, সোনা-গয়না বিক্রি করে বেঁচে আছে। এত খারাপ সময় কখনো আসেনি।

জেলা প্রশাসক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, সরকার স্থানীয়দের বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষা আমাদের দায়িত্ব। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।