ঢাকা ১২:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
শিক্ষকের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়, এমন কোনো কাজ শিক্ষার্থীদের করা উচিত নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা জলমহাল নীতিমালা পরিবর্তন করে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের পাবে অগ্রাধিকার: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বাংলাদেশ ব্যাংক পেতে যাচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছে ১১ জন মেয়ে ও ১৩৫ জন শিশু: শারমিন মুরশিদ চীন ও তুরস্কের সহায়তার অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করল পাকিস্তান লাগামহীন ও অবিশ্বাস্য মাত্রার লুটপাট আওয়ামী লীগ সরকারের বড় দৃষ্টান্ত: আসিফ মাহমুদ সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১৪৫৪ জন গ্রেপ্তার সব শ্রেণির মানুষের রক্ত-ঘামে জুলাই বিপ্লবের সাফল্য: আসিফ মাহমুদ ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে বিপর্যস্ত মার্কিন অর্থনীতি, ছাঁটাই-ব্যয় সংকটে ব্যবসা খাত গাজীপুরে পুকুরে ডুবে দুই কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু

মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় এআই হতে পারে নির্ভরযোগ্য থেরাপিস্ট – বলছেন মার্কিন গবেষকরা

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৩:১১:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
  • / 30

ছবি সংগৃহীত

 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর প্রযুক্তি মানসিক স্বাস্থ্যসেবার নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে এমনটাই মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ কলেজের একদল গবেষক। তাঁদের মতে, বর্তমান বিশ্বের বিপুল মানসিক স্বাস্থ্যসেবা চাহিদা পূরণে এআই-চালিত ডিজিটাল থেরাপিস্ট হতে পারে একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান।

এই লক্ষ্যে গবেষকেরা ‘থেরাবট’ নামে একটি বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছেন, যা অন্যান্য বাজারে থাকা বিভ্রান্তিকর ও অপ্রমাণিত মানসিক স্বাস্থ্য অ্যাপ থেকে একেবারেই আলাদা। তাঁদের বিশ্বাস, থেরাবট মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় জনবল সংকট কাটিয়ে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে। গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও খাওয়ার সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য অ্যাপটি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

ডার্টমাউথ কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও প্রকল্প প্রধান নিক জ্যাকবসনের ভাষায়, “যত থেরাপিস্টই থাকুক না কেন, চাহিদার তুলনায় তা বহু গুণ কম। এই বিশাল গ্যাপ পূরণে আমাদের ভিন্ন কিছু ভাবতে হবে।” তিনি জানান, থেরাবট তৈরিতে টানা ছয় বছর ধরে কাজ করেছে তাঁর দল।

তবে কেবল প্রযুক্তির কার্যকারিতা নয়, এর নৈতিকতা ও নিরাপত্তার বিষয়েও গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁরা। মনোরোগবিশেষজ্ঞ ও সহপ্রকল্প পরিচালক মাইকেল হেইঞ্জ বলেন, “যদি মুনাফার জন্য তাড়াহুড়া করা হয়, তাহলে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।” গবেষক দল তাই অ্যাপটি ধাপে ধাপে পরীক্ষিত ও সংবেদনশীলভাবে তৈরি করেছে।

অ্যাপটিকে আরও বাস্তবধর্মী করতে গবেষকেরা কেবল ট্রান্সক্রিপ্ট বা ভিডিওর উপর নির্ভর না করে নিজেরা রোগী-থেরাপিস্ট কথোপকথন তৈরি করেছেন। এর ফলে থেরাবট আরও মানবিক আচরণে সক্ষম হচ্ছে।

তবে এআই-নির্ভর সেবার সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু ঝুঁকির কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (APA) হেলথ কেয়ার ইনোভেশনের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ভেইল রাইট মনে করেন, অ্যাপগুলো যদি দায়িত্বশীল ও নৈতিকভাবে তৈরি হয়, তাহলে এর সম্ভাবনা ব্যাপক। কিন্তু কিশোর ব্যবহারকারীদের জন্য এর নেতিবাচক প্রভাব হতে পারে, যা যথাযথভাবে বিবেচনা করা জরুরি।

বর্তমানে বাজারে থাকা অনেক অ্যাপ্লিকেশন মূলত ব্যবহারকারীদের আসক্ত করে রাখার কৌশলে তৈরি হয়। সেগুলো মনোযোগ কাড়তে পারলেও বাস্তবে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারে না। ভেইল রাইট বলেন, “বহু তরুণ বুঝতেই পারে না, তারা একধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রতারণার শিকার হচ্ছে।”

এদিকে, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের মানসিক স্বাস্থ্য প্রযুক্তি কমিটির চেয়ারপারসন ডারলিন কিং জানিয়েছেন, এআই ব্যবহার করে মানসিক চিকিৎসার বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও, এর প্রকৃত উপকার ও ঝুঁকি নির্ধারণে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তাঁর ভাষায়, “এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা।”

বর্তমানে থেরাবটের কার্যকারিতা প্রচলিত থেরাপির সঙ্গে তুলনা করে নতুন একটি পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করছে ডার্টমাউথের গবেষক দল। একইসঙ্গে তাঁরা ভাবছেন থেরাবটকে ঘিরে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিষয়েও, যেন যাঁরা সশরীরে থেরাপি নিতে পারেন না, তাঁরাও সাশ্রয়ী ও নিরাপদ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে পর্যবেক্ষণ রাখলেও সরাসরি এআইচালিত অ্যাপ অনুমোদন দেয় না। তবে তারা স্বীকার করে, ডিজিটাল থেরাপি সহজে আচরণগত চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ বাড়াতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ এখনও পুরোপুরি নির্ধারিত নয়, তবে একে ঘিরে গবেষণা ও সতর্ক পদক্ষেপ চলমান রয়েছে সেবার জন্য, মুনাফার জন্য নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় এআই হতে পারে নির্ভরযোগ্য থেরাপিস্ট – বলছেন মার্কিন গবেষকরা

আপডেট সময় ০৩:১১:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর প্রযুক্তি মানসিক স্বাস্থ্যসেবার নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে এমনটাই মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ কলেজের একদল গবেষক। তাঁদের মতে, বর্তমান বিশ্বের বিপুল মানসিক স্বাস্থ্যসেবা চাহিদা পূরণে এআই-চালিত ডিজিটাল থেরাপিস্ট হতে পারে একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান।

এই লক্ষ্যে গবেষকেরা ‘থেরাবট’ নামে একটি বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছেন, যা অন্যান্য বাজারে থাকা বিভ্রান্তিকর ও অপ্রমাণিত মানসিক স্বাস্থ্য অ্যাপ থেকে একেবারেই আলাদা। তাঁদের বিশ্বাস, থেরাবট মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় জনবল সংকট কাটিয়ে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে। গবেষণায় দেখা গেছে, উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও খাওয়ার সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য অ্যাপটি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

ডার্টমাউথ কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও প্রকল্প প্রধান নিক জ্যাকবসনের ভাষায়, “যত থেরাপিস্টই থাকুক না কেন, চাহিদার তুলনায় তা বহু গুণ কম। এই বিশাল গ্যাপ পূরণে আমাদের ভিন্ন কিছু ভাবতে হবে।” তিনি জানান, থেরাবট তৈরিতে টানা ছয় বছর ধরে কাজ করেছে তাঁর দল।

তবে কেবল প্রযুক্তির কার্যকারিতা নয়, এর নৈতিকতা ও নিরাপত্তার বিষয়েও গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁরা। মনোরোগবিশেষজ্ঞ ও সহপ্রকল্প পরিচালক মাইকেল হেইঞ্জ বলেন, “যদি মুনাফার জন্য তাড়াহুড়া করা হয়, তাহলে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।” গবেষক দল তাই অ্যাপটি ধাপে ধাপে পরীক্ষিত ও সংবেদনশীলভাবে তৈরি করেছে।

অ্যাপটিকে আরও বাস্তবধর্মী করতে গবেষকেরা কেবল ট্রান্সক্রিপ্ট বা ভিডিওর উপর নির্ভর না করে নিজেরা রোগী-থেরাপিস্ট কথোপকথন তৈরি করেছেন। এর ফলে থেরাবট আরও মানবিক আচরণে সক্ষম হচ্ছে।

তবে এআই-নির্ভর সেবার সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু ঝুঁকির কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (APA) হেলথ কেয়ার ইনোভেশনের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ভেইল রাইট মনে করেন, অ্যাপগুলো যদি দায়িত্বশীল ও নৈতিকভাবে তৈরি হয়, তাহলে এর সম্ভাবনা ব্যাপক। কিন্তু কিশোর ব্যবহারকারীদের জন্য এর নেতিবাচক প্রভাব হতে পারে, যা যথাযথভাবে বিবেচনা করা জরুরি।

বর্তমানে বাজারে থাকা অনেক অ্যাপ্লিকেশন মূলত ব্যবহারকারীদের আসক্ত করে রাখার কৌশলে তৈরি হয়। সেগুলো মনোযোগ কাড়তে পারলেও বাস্তবে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারে না। ভেইল রাইট বলেন, “বহু তরুণ বুঝতেই পারে না, তারা একধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রতারণার শিকার হচ্ছে।”

এদিকে, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের মানসিক স্বাস্থ্য প্রযুক্তি কমিটির চেয়ারপারসন ডারলিন কিং জানিয়েছেন, এআই ব্যবহার করে মানসিক চিকিৎসার বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও, এর প্রকৃত উপকার ও ঝুঁকি নির্ধারণে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তাঁর ভাষায়, “এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা।”

বর্তমানে থেরাবটের কার্যকারিতা প্রচলিত থেরাপির সঙ্গে তুলনা করে নতুন একটি পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করছে ডার্টমাউথের গবেষক দল। একইসঙ্গে তাঁরা ভাবছেন থেরাবটকে ঘিরে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিষয়েও, যেন যাঁরা সশরীরে থেরাপি নিতে পারেন না, তাঁরাও সাশ্রয়ী ও নিরাপদ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনলাইন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে পর্যবেক্ষণ রাখলেও সরাসরি এআইচালিত অ্যাপ অনুমোদন দেয় না। তবে তারা স্বীকার করে, ডিজিটাল থেরাপি সহজে আচরণগত চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ বাড়াতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ এখনও পুরোপুরি নির্ধারিত নয়, তবে একে ঘিরে গবেষণা ও সতর্ক পদক্ষেপ চলমান রয়েছে সেবার জন্য, মুনাফার জন্য নয়।