ঢাকা ০৯:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিষেধাজ্ঞা শেষে মেঘনায় ফিরছে জেলে জীবন, চলছে জাল-নৌকা মেরামতের কাজ

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৩:৫১:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৮ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

 

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ রাতেই। বুধবার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে জেলেদের মাছ ধরার ওপর আর কোনো বাধা থাকবে না। প্রস্তুতি শেষের পথে, ভোলার দুই লাখের বেশি জেলে নেমে পড়েছেন জাল-নৌকা মেরামতের কাজে।

গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটারজুড়ে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে মাছ শিকার বন্ধ রাখে সরকার। এ সময় নিবন্ধিত ১ লাখ ৭০ হাজার ২৫৩ জনসহ প্রায় দুই লাখ জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েন। তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল দুই মাসে ৮০ কেজি করে চাল, যা অধিকাংশ জেলেই পাননি বা পেয়েছেন অর্ধেকেরও কম।

ভোলা সদরের শিবপুর, ধনিয়া, কাচিয়া, ইলিশা ও রাজাপুর এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, জেলেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন পুরনো জাল মেরামত ও নতুন জাল প্রস্তুতিতে। কেউ কেউ নৌকাও মেরামত করছেন। অনেকেই ধারদেনা করে নতুন জাল কিনেছেন। নদীতে ফিরে সে ঋণ শোধে আশা করছেন লাভের মুখ দেখার।

শিবপুর এলাকার জেলে আব্দুর রহিম মাঝি জানান, তাঁর নৌকার ৮ জন জেলের মধ্যে ৪ জন সামান্য চাল পেলেও বাকি ৪ জন কিছুই পাননি। তিনি বলেন, “বিগত ৩০ বছর নদীতে মাছ ধরে জীবন চলে। এবারও নদীতে ফিরে দেনা শোধ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো।”

আজাদ মাঝি জানান, সংসার চালাতে গিয়ে ৪০-৪৫ হাজার টাকা ধার করেছেন। নতুন জাল কিনতে নিয়েছেন আরও এক লাখ টাকা। “এখন সব নির্ভর করছে নদীতে মাছ কতটা পাওয়া যাবে তার উপর,” বললেন তিনি।

জেলেরা অভিযোগ করেন, তারা আইন মেনে নদীতে না গেলেও, একটি প্রভাবশালী মহল নিষিদ্ধ পাইজাল, চরঘেরা জাল ও খুঁটিজাল দিয়ে পোনা নিধন করছে। এতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও মাছের উৎপাদন আশানুরূপ বাড়ছে না।

ধনিয়া তুলাতুলি মাছঘাটের জেলে জহিরুল, শামিম ও মনছুর মাঝি জানান, “সরকার অভিযান চালালেও নদীতে যে পোনা ছাড়া হয় তা বড় হওয়ার আগেই ধরে ফেলা হচ্ছে। এই প্রবণতা বন্ধ না হলে অভিযান ব্যর্থ হবে।”

জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞাকালে ৫৪০টি অভিযান, ৬টি জেলে দণ্ডিত ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি ৫২ মেট্রিকটনের বেশি মাছ, বিপুল পরিমাণ কারেন্ট ও অন্যান্য জাল জব্দ হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, “নিষেধাজ্ঞা সফল হয়েছে। জেলেরা নদীতে না যাওয়ায় মাছ রক্ষা পেয়েছে। এবার জেলেরা নদীতে ভালো মাছ পাবেন বলে আশা করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

নিষেধাজ্ঞা শেষে মেঘনায় ফিরছে জেলে জীবন, চলছে জাল-নৌকা মেরামতের কাজ

আপডেট সময় ০৩:৫১:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

 

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ রাতেই। বুধবার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে জেলেদের মাছ ধরার ওপর আর কোনো বাধা থাকবে না। প্রস্তুতি শেষের পথে, ভোলার দুই লাখের বেশি জেলে নেমে পড়েছেন জাল-নৌকা মেরামতের কাজে।

গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটারজুড়ে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে মাছ শিকার বন্ধ রাখে সরকার। এ সময় নিবন্ধিত ১ লাখ ৭০ হাজার ২৫৩ জনসহ প্রায় দুই লাখ জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েন। তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল দুই মাসে ৮০ কেজি করে চাল, যা অধিকাংশ জেলেই পাননি বা পেয়েছেন অর্ধেকেরও কম।

ভোলা সদরের শিবপুর, ধনিয়া, কাচিয়া, ইলিশা ও রাজাপুর এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, জেলেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন পুরনো জাল মেরামত ও নতুন জাল প্রস্তুতিতে। কেউ কেউ নৌকাও মেরামত করছেন। অনেকেই ধারদেনা করে নতুন জাল কিনেছেন। নদীতে ফিরে সে ঋণ শোধে আশা করছেন লাভের মুখ দেখার।

শিবপুর এলাকার জেলে আব্দুর রহিম মাঝি জানান, তাঁর নৌকার ৮ জন জেলের মধ্যে ৪ জন সামান্য চাল পেলেও বাকি ৪ জন কিছুই পাননি। তিনি বলেন, “বিগত ৩০ বছর নদীতে মাছ ধরে জীবন চলে। এবারও নদীতে ফিরে দেনা শোধ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো।”

আজাদ মাঝি জানান, সংসার চালাতে গিয়ে ৪০-৪৫ হাজার টাকা ধার করেছেন। নতুন জাল কিনতে নিয়েছেন আরও এক লাখ টাকা। “এখন সব নির্ভর করছে নদীতে মাছ কতটা পাওয়া যাবে তার উপর,” বললেন তিনি।

জেলেরা অভিযোগ করেন, তারা আইন মেনে নদীতে না গেলেও, একটি প্রভাবশালী মহল নিষিদ্ধ পাইজাল, চরঘেরা জাল ও খুঁটিজাল দিয়ে পোনা নিধন করছে। এতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও মাছের উৎপাদন আশানুরূপ বাড়ছে না।

ধনিয়া তুলাতুলি মাছঘাটের জেলে জহিরুল, শামিম ও মনছুর মাঝি জানান, “সরকার অভিযান চালালেও নদীতে যে পোনা ছাড়া হয় তা বড় হওয়ার আগেই ধরে ফেলা হচ্ছে। এই প্রবণতা বন্ধ না হলে অভিযান ব্যর্থ হবে।”

জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞাকালে ৫৪০টি অভিযান, ৬টি জেলে দণ্ডিত ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি ৫২ মেট্রিকটনের বেশি মাছ, বিপুল পরিমাণ কারেন্ট ও অন্যান্য জাল জব্দ হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, “নিষেধাজ্ঞা সফল হয়েছে। জেলেরা নদীতে না যাওয়ায় মাছ রক্ষা পেয়েছে। এবার জেলেরা নদীতে ভালো মাছ পাবেন বলে আশা করছি।