ঢাকা ০৪:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সবজির দাম চড়া: পেঁয়াজের প্রভাব ও উদ্বেগ

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১০:৪৭:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
  • / 38

ছবি সংগৃহীত

 

নতুন করে আবারও ঢাকার বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পড়েছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনে নতুন করে ভোগান্তি যোগ করছে। কিছু মাসের স্বস্তির পর এবার বিশেষ করে সবজির বাজারে আগুন লেগেছে। শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে বেশিরভাগ সবজির দাম ৮০ টাকার ওপরে উঠে গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ১৫ ধরনের সবজির মধ্যে অন্তত আটটির দাম ৮০ টাকা বা তারও বেশি। বরবটি, কচুর লতি, পটোল, চিচিঙ্গা, বেগুন, শালগমের মতো সাধারণ সবজিও এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁকরোল (১২০ টাকা) ও শজনে (১৪০–১৬০ টাকা)। করলা, লাউ, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়স, পেঁপে ইত্যাদি কিছুটা কম দামে—৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও, সেটিও সাধারণ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। টমেটো ছাড়া আর কোনো সবজি ৫০ টাকার নিচে নেই, টমেটোর দাম রয়েছে ৪০–৫০ টাকায়।

এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া। বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টারের মতে, শীতে দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এখন তারা উৎপাদন খরচ পুষিয়ে নিতে গিয়ে বাজারে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

শুধু সবজিই নয়, পেঁয়াজের দামেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। দেশি পেঁয়াজের দাম এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ টাকা, আর এক মাসে বেড়েছে প্রায় ২০–২৫ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০–৬৫ টাকায়, পাড়া–মহল্লায় কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি। আমদানি করা পেঁয়াজ কিছুটা সস্তা হলেও (৫০ টাকা), সরবরাহ কম হওয়ায় তা খুব একটা হাতের নাগালে আসছে না।
ডিমের বাজারও বেশ চড়া। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনে ৫–১০ টাকা বেড়ে এখন ডিমের দাম ১২৫–১৩০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা সহনীয় (১৭০–১৯০ টাকা), আর সোনালি মুরগির কেজি ২৫০–২৮০ টাকা।

চালের দামে কোনো স্বস্তি নেই। বোরো মৌসুম শুরু হলেও নতুন চাল বাজারে তেমন আসেনি, ফলে দাম এখনো কমেনি। মিনিকেট চাল ৮৮–৯০ টাকা, কোনো কোনো ব্র্যান্ডের দাম ১০০ টাকার ওপরে। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৮০–৯৫ টাকায়, ব্রি–২৮ চাল ৬০ টাকা, আর স্বর্ণা ৫৫ টাকা কেজি।
সয়াবিন তেলের দামেও নতুন করে বাড়তি চাপ পড়েছে। ১৫ এপ্রিল থেকে প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৯ টাকা। তবে বিক্রেতাদের দাবি, সরবরাহ এখনো চাহিদার তুলনায় কম।

এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ চরম দুশ্চিন্তায়। আগারগাঁও তালতলা এলাকার বাসিন্দা সাব্বির আলম বলেন, “রমজানে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলাম, কিন্তু এখন একে একে সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে—চাল, তেল, ডিম, সবজি কিছুই আর হাতের নাগালেই নেই। জীবন যাপন দিনকে দিন কঠিন হয়ে উঠছে।”

বর্তমানে বাজার পরিস্থিতি বলছে, স্বস্তির দিন আপাতত অনেক দূরের পথ। প্রতিদিনকার খরচ মেটানো সাধারণ মানুষের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এক কঠিন বাস্তবতা।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

সবজির দাম চড়া: পেঁয়াজের প্রভাব ও উদ্বেগ

আপডেট সময় ১০:৪৭:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

 

নতুন করে আবারও ঢাকার বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পড়েছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনে নতুন করে ভোগান্তি যোগ করছে। কিছু মাসের স্বস্তির পর এবার বিশেষ করে সবজির বাজারে আগুন লেগেছে। শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে বেশিরভাগ সবজির দাম ৮০ টাকার ওপরে উঠে গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ১৫ ধরনের সবজির মধ্যে অন্তত আটটির দাম ৮০ টাকা বা তারও বেশি। বরবটি, কচুর লতি, পটোল, চিচিঙ্গা, বেগুন, শালগমের মতো সাধারণ সবজিও এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁকরোল (১২০ টাকা) ও শজনে (১৪০–১৬০ টাকা)। করলা, লাউ, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়স, পেঁপে ইত্যাদি কিছুটা কম দামে—৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও, সেটিও সাধারণ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। টমেটো ছাড়া আর কোনো সবজি ৫০ টাকার নিচে নেই, টমেটোর দাম রয়েছে ৪০–৫০ টাকায়।

এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া। বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টারের মতে, শীতে দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এখন তারা উৎপাদন খরচ পুষিয়ে নিতে গিয়ে বাজারে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

শুধু সবজিই নয়, পেঁয়াজের দামেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। দেশি পেঁয়াজের দাম এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ টাকা, আর এক মাসে বেড়েছে প্রায় ২০–২৫ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০–৬৫ টাকায়, পাড়া–মহল্লায় কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি। আমদানি করা পেঁয়াজ কিছুটা সস্তা হলেও (৫০ টাকা), সরবরাহ কম হওয়ায় তা খুব একটা হাতের নাগালে আসছে না।
ডিমের বাজারও বেশ চড়া। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনে ৫–১০ টাকা বেড়ে এখন ডিমের দাম ১২৫–১৩০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা সহনীয় (১৭০–১৯০ টাকা), আর সোনালি মুরগির কেজি ২৫০–২৮০ টাকা।

চালের দামে কোনো স্বস্তি নেই। বোরো মৌসুম শুরু হলেও নতুন চাল বাজারে তেমন আসেনি, ফলে দাম এখনো কমেনি। মিনিকেট চাল ৮৮–৯০ টাকা, কোনো কোনো ব্র্যান্ডের দাম ১০০ টাকার ওপরে। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৮০–৯৫ টাকায়, ব্রি–২৮ চাল ৬০ টাকা, আর স্বর্ণা ৫৫ টাকা কেজি।
সয়াবিন তেলের দামেও নতুন করে বাড়তি চাপ পড়েছে। ১৫ এপ্রিল থেকে প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৯ টাকা। তবে বিক্রেতাদের দাবি, সরবরাহ এখনো চাহিদার তুলনায় কম।

এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ চরম দুশ্চিন্তায়। আগারগাঁও তালতলা এলাকার বাসিন্দা সাব্বির আলম বলেন, “রমজানে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলাম, কিন্তু এখন একে একে সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে—চাল, তেল, ডিম, সবজি কিছুই আর হাতের নাগালেই নেই। জীবন যাপন দিনকে দিন কঠিন হয়ে উঠছে।”

বর্তমানে বাজার পরিস্থিতি বলছে, স্বস্তির দিন আপাতত অনেক দূরের পথ। প্রতিদিনকার খরচ মেটানো সাধারণ মানুষের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এক কঠিন বাস্তবতা।