শেরপুরের গারো পাহাড়ে আনারস চাষের সম্ভাবনায় নতুন দিগন্ত

- আপডেট সময় ০৩:০৮:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
- / 68
শেরপুরের গারো পাহাড় যেন এখন নতুন সম্ভাবনার আলোয় উদ্ভাসিত। এক সময় যেখানে অনাবাদি পড়ে থাকত পাহাড়ি জমি, আজ সেখানে আনারস চাষে বদলে যাচ্ছে কৃষকের জীবনচিত্র। ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় আনারস চাষে এসেছে এক বিপ্লব।
স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা, সরকারি সহায়তা এবং বন্যহাতির আক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিলে গারো পাহাড়ের হাজার হাজার হেক্টর পতিত জমি হয়ে উঠতে পারে সোনার ফল—আনারসের বাগানে ভরপুর। এতে যেমন স্থানীয় অর্থনীতি সচল হবে, তেমনি বদলে যাবে এখানকার মানুষের জীবনমান।
পাহাড়ি এই এলাকায় আগে শুধু কাসাভা আলু চাষ হতো, যার বাজারমূল্য কম থাকায় অধিকাংশ কৃষিজমি ছিল অনাবাদি। ফলে পরিবার চালাতে কৃষকদের ভরসা ছিল লাকড়ি কাটা, পাথর ভাঙা কিংবা বালু উত্তোলনের মতো কষ্টসাধ্য কাজ।
কিন্তু এখন সেই চিত্র বদলেছে। কৃষকেরা আনারসসহ নানা ফলমূলের চাষ করে পাহাড়ের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাচ্ছেন। পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের কৃষক জমশন ম্রং জানালেন, চার বছর আগে ১৮ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আনারস চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি বছরে প্রায় ১৬ লাখ টাকার আনারস বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, ‘হাতির আক্রমণ থাকলেও লাভে থাকি। আমার সাফল্য দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়েছেন।’
জলডুবি জাতের আনারস চাষই এই অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মধুপুর ও রাঙ্গামাটি থেকে প্রথমে চারা সংগ্রহ করে এখন কৃষকেরা নিজেরাই চারা উৎপাদন করছেন। আশরাফুল আলম নামে একজন চাষি জানান, ‘১৮ বিঘা জমিতে দেড় লাখ আনারস চাষ করেছি। এই জাতের আনারস খুব মিষ্টি, ফলে বাজারে চাহিদাও বেশি।’
এদিকে আনারসের বাগানে পরিচর্যার কাজ করে আয় করছেন স্থানীয় বহু শ্রমিক। মো. বিজয় ও সবুর আলী জানান, ‘এখন আর লাকড়ি কাটতে হয় না, আনারস বাগানে কাজ করে আয় হয়।’
আনারস চাষে সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও আছে বিশেষ করে বন্যহাতির আক্রমণ। স্থানীয়দের দাবি, এ সমস্যার সমাধান হলে গারো পাহাড় হবে আনারস উৎপাদনের অন্যতম বৃহৎ অঞ্চল।
আসলে, গারো পাহাড়ের মাটি ও জলবায়ু আনারস চাষের জন্য উপযোগী। এখন প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা, প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহযোগিতা তাহলেই পাহাড়ে কৃষির নতুন ইতিহাস রচনা সম্ভব।