অমর বানী
স্বামী এবং স্ত্রী সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ৮টি অমর বানী
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব এবং মানবতার সত্যিকারের পথপ্রদর্শক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য এক অনন্য আদর্শ। তাঁর জীবন, উপদেশ এবং কার্যক্রম আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য। বিশেষ করে দাম্পত্য জীবনে তাঁর শিক্ষাগুলো আজও অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিকা।
তিনি বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে তার পরিবারের সঙ্গে উত্তম আচরণ করে।” সুখী সংসারের মূলমন্ত্রই হলো পারস্পরিক ভালোবাসা, সম্মান এবং সহানুভূতি। একজন দম্পতি যদি এই মূল্যবোধগুলো নিজেদের জীবনে ধারণ করে, তাহলে তাদের সম্পর্ক হবে মজবুত ও স্থায়ী। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর জীবনে স্ত্রীদের প্রতি যেমন মমতা ও সহানুভূতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তেমনি পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্বও বুঝিয়েছেন। পরিবারের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া, ছোটখাটো বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়া, এবং ভুলত্রুটির ক্ষেত্রে ক্ষমাশীল থাকা এসবই দাম্পত্য জীবনের সুখের চাবিকাঠি।
৮টি অমর বানী
১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেনঃ গোটা দুনিয়াই সম্পদে পরিপূর্ণ। এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হলো পূর্ণবতী স্ত্রী। (মুসলিম)
২. হযরত আবু হুরাইয়া (রাঃ) বলেন, রাসুলে আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সবচাইতে উত্তম, ঈমাদের দৃষ্টিতে সে-ই পূর্ণাঙ্গ মুমিন। তোমাদের মধ্যে সেই সব লোক উত্তম, যারা তাদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম। তিরমিযী)
৩. হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) এর বর্ণনা মতে, রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেনঃ কোন স্ত্রী লোক যদি এমন অবস্থায় মারা যায় যে, তার স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিরমিযী)
৪. হযরত আবু হুরাইয়া (রাঃ) এর বর্ণনা মনে, রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেনঃ আমি যদি কোন ব্যক্তিকে অপর কোন ব্যক্তির সামনে সিজদা করার জন্য নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য। (তিরমিযী)
৫. হযরম মু’য়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) এর বর্ণনা মতে, রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেনঃ যখনই কোন নারী তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দিতে থাকে, তখনই (জান্নাতের) আয়াতলোচনা হুরদের মধ্যে তার সম্ভাব্য স্ত্রী বলেঃ (হে অভাগিনী!) তুমি তাকে কষ্ট দিওনা। আল্লাহ তোমায় ধ্বংস করুক ! তিনি তোমার কাছে একজন মেহমান। অচিরেই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন। (তিরমিযী)
৬. হযরত উসামা ইবনে যায়েদ বর্ণনা করেন, রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেনঃ আমার অনুপস্থিতে আমি পুরুষদের জন্য মেয়েদের চাইতে বেশী ক্ষতিকর ফিতনা (বিপর্যয়) আর রেখে যাইনি। (বুখারী ও মুসলিম)
৭. হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসুলে আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ কোনো ব্যক্তি যদি তার বিছানায় স্বীয় স্ত্রীকে ডাকে; কিন্তু স্ত্রী তাতে সাড়া না দেয়ায় স্বামী তার উপর অসস্তুষ্ট হয়ে রাত কাটায়, তাহলে ফেরেশতারা ভোর পর্যন্ত তার প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করতে থাকে । (বুখারী ও মুসলিম)
৮. হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, স্বামী বাড়ীতে উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর পক্ষে (নফল) রোযা রাখা বৈধ নয় । তার অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তিকে তার ঘরে ঢোকার অনুমতি দেয়াও তার (স্ত্রীর) জন্য বৈধ নয়। (বুখারী ও মুসলিম)
আজকের ব্যস্ত জীবনে, যেখানে সম্পর্কগুলো নানা চাপে ভেঙে পড়ছে, সেখানে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শিক্ষাগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, সুখী দাম্পত্য জীবন কেবল সম্ভব যদি আমরা একে অপরকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বন্ধনে আবদ্ধ রাখি। তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি আমরা আমাদের পরিবারে এই নীতিগুলো বাস্তবায়ন করি, তাহলে আমাদের সংসার হবে পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ।