সংগ্রাম-শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ৮১ বছরে খালেদা জিয়া

- আপডেট সময় ১১:৫৬:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
- / 8
বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৫ সালের এ দিনে তিনি দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। খালেদা জিয়ার পৈতৃক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে বাবার কর্মস্থলে। ইস্কান্দার মজুমদার ও তৈয়েবা মজুমদার দম্পতির তৃতীয় সন্তান খালেদা জিয়া।
জন্মদিন উপলক্ষে বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও কোনো আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান হবে না। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে ঢাকাসহ দলীয় কার্যালয় ও মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে বেগম জিয়ার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করা হবে। একই সঙ্গে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী শহীদদের, ৯০-এর গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করা হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শুক্রবার বেলা ১১টায় এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিএনপির সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন। ২০১৮ সালের পর নতুন প্রেক্ষাপটে এবার দ্বিতীয়বারের মতো খালেদা জিয়ার জন্মদিন এসেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই ৬ আগস্ট স্থায়ী মুক্তি পান বেগম জিয়া। ফলে এবারের জন্মদিনটি মুক্ত পরিবেশে উদযাপন করবেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
দীর্ঘদিন লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অসুস্থতার মধ্যে থাকায় খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’-য় চিকিৎসকদের নিবিড় পরিচর্যায় আছেন। তবে দুই ঈদে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। ২০২৪ সালের ৬ মে তিনি লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন এবং এরপর ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের বাসায় যান।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার অবদান অমোঘ। ১৯৮১ সালের ৩০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হন তিনি এবং ১৯৮৪ সালে দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন।
তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন (১৯৯১-১৯৯৬, ১৯৯৬-২০০১, ২০০১-২০০৬)। এছাড়া দু’বার সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, ১৯৯৩ সালে সার্কের প্রথম মহিলা চেয়ারপার্সন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের নেতৃত্ব দিয়ে সরকার গঠন করেছেন।
২০০৭ সালে তাকে কারাবন্দি করা হয় এবং ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারাভোগ করেন। পরে সাময়িক মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি নানা দফায় চাওয়া হলেও দেওয়া হয়নি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর তিনি স্থায়ীভাবে মুক্ত হন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত জীবনও তেমনই রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। ১৯৬০ সালে তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তাদের দুই সন্তান, তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান কোকো। তবে আরাফাত রহমান ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় মারা যান।
দেশের রাজনীতিতে মহীয়সী এক নারী বেগম খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে নীতির প্রশ্নে দৃঢ়তা, গণমানুষের অধিকার আদায়ে আপসহীনতা, কথাবার্তায় শালীনতাবোধ, মার্জিত আচরণ, অনমনীয়তা এবং বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আত্মত্যাগের সংমিশ্রণে শক্তিশালী রাজনৈতিক চরিত্রের অধিকারী নেত্রী তিনি। তিনি হাসলে কোটি কোটি মানুষ হাসে; তার দুঃখে দেশবাসী কাঁদে।