জাতীয় সংসদ নির্বাচন
চট্টগ্রাম-২ আসনে ভোটের অপেক্ষা, মাঠে সরব সম্ভাব্য বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক রোডম্যাপ এখনো ঘোষণা না হলেও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে রাজনীতির উত্তাপ বাড়ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে সক্রিয়, ভোটারদের মন জয় করতে চালাচ্ছেন নানা কার্যক্রম। গত সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন প্রয়াত রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। তবে তার আগের দুই মেয়াদে বিতর্কিতভাবে নির্বাচিত হন তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।
তিন মেয়াদ ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ফটিকছড়ির ভোটাররা এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশায় আছেন। দুই উপজেলা ফটিকছড়ি ও ভূজপুর নিয়ে গঠিত বৃহৎ এই সংসদীয় আসনে সব দলই ভোটের মাঠ গোছানোর কাজে ব্যস্ত।
একসময় সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত ফটিকছড়িতে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগই ছিল প্রধান শক্তি। তবে গত কয়েকটি নির্বাচনে বিতর্কিত ভোটে এমপি নির্বাচিত হন জোটের প্রার্থী নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। তার বিরুদ্ধে পেশিশক্তি ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। পট পরিবর্তনের পর অনেকেই মনে করছেন, আওয়ামী লীগের কেউ এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবেন না।
এদিকে, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপির মধ্যে কাদের গণি চৌধুরী মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তিনি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত, এলাকায় তার গ্রহণযোগ্যতাও বেশ ভালো। অন্যদিকে, প্রয়াত বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীও মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ ছাড়া সরওয়ার আলমগীর, আজিম উল্লাহ বাহার, ফয়সাল মাহমুদ ফয়জী ও ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরীর নামও আলোচনায় রয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে অধ্যক্ষ নুরুল আমিনকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন এলাকায় নিষ্ক্রিয় থাকলেও তিনি এখন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। ফটিকছড়িতে জামায়াতের শক্তিশালী ভোটব্যাংক রয়েছে, যা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়া, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) দল থেকে অ্যাডভোকেট হামিদ উল্লাহ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান মাওলানা সাইফুদ্দিন আহমদ আল হাসানি আল মাইজভান্ডারীও নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে তিনি ভোটের লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ফটিকছড়ির অতীত নির্বাচনের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের রফিকুল আনোয়ার, ২০০৮ সালে বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি নির্বাচিত হন।
এবারের নির্বাচনে ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে চায় ফটিকছড়ির জনগণ। তারা অপেক্ষায় আছেন, কাকে মনোনয়ন দেবে দলগুলো এবং কেমন হবে আগামীর নির্বাচন।