০৮:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম :
নিজামী-মীর কাসেম-সালাউদ্দিন কাদেরকে মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে: মির্জা ফখরুল ২০২৩ সাল থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধের খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯ থেকে ৬৭ বিলিয়ন ডলার। মার্কিন সেনা ও সিআইএ এজেন্টদের বহিষ্কারের চিন্তা কলম্বিয়া প্রেসিডেন্ট পেত্রোর পেন্টাগনের বড় চুক্তি পেল ট্রাম্পের ছেলের ড্রোন কোম্পানি কেন ট্রাম্প-পুতিনের বুদাপেস্ট বৈঠক বাতিল হলো? হুমকিতে বিশ্বব্যাপী পোলিও টিকাদান কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রকে ভেনেজুয়েলার হুঁশিয়ারি: “আমাদের হাতে ৫ হাজার রুশ ক্ষেপণাস্ত্র” সিইসির সঙ্গে বিএনপির বৈঠক বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, গভীর সমুদ্রে যাত্রা নিষেধ আতলেতিকোর জালে ১৪ মিনিটে ৪ গোল, দাপুটে জয়ে আর্সেনাল

বিশ্বজুড়ে পারস্পরিক আস্থা হুমকির মুখে: নিক্কেই ফোরামে প্রধান উপদেষ্টা

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৩:৫১:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
  • / 66

ছবি: সংগৃহীত

 

বিশ্ব আজ চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এই সময়ে বৈশ্বিক আস্থার সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

জাপানের টোকিওতে বৃহস্পতিবার আয়োজিত ৩০তম নিক্কেই ফোরাম ‘ফিউচার অব এশিয়া’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্যে তিনি বলেন, “জাতির মধ্যে, সমাজের অভ্যন্তরে, এমনকি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও আস্থা কমে যাচ্ছে। বিশ্ব ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে।”

বিজ্ঞাপন

‘উত্তাল বিশ্বে এশিয়ার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক বক্তব্যে ইউনূস বলেন, “আমরা এক গভীর অনিশ্চিত সময় অতিক্রম করছি। পারস্পরিক সহযোগিতা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা আজ প্রশ্নের মুখে। ইউক্রেন, গাজা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক অঞ্চলে যুদ্ধ এবং সংঘাত সাধারণ মানুষের জীবন ধ্বংস করছে।”

প্রসঙ্গত, তিনি মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে সৃষ্ট মানবিক সংকটের কথাও তুলে ধরেন। পাশাপাশি দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যয়বহুল যুদ্ধের কথাও উল্লেখ করে বলেন, “আমরা কোটি কোটি টাকা যুদ্ধের পেছনে ব্যয় করছি, অথচ লাখ লাখ মানুষ বেঁচে থাকার লড়াই করছে।”

বাংলাদেশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গত বছর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে এক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে এবং এরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরে কাজ করছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ন্যায়বিচার, সমতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়া এবং নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া।”

বৈশ্বিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা, প্রযুক্তিগত নৈতিক প্রশ্ন ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে ইউনূস বলেন, “বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ যেখানে বাস করে, সেই এশিয়াই এখন অনিশ্চয়তার কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু এখানেই রয়েছে সর্বাধিক সম্ভাবনা।”

তিনি বলেন, “আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই, তবে এশিয়া শান্তি, সংলাপ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের এক নতুন পথ দেখাতে পারে। আমাদের চ্যালেঞ্জ বিশাল, কিন্তু সম্মিলিত শক্তি দিয়ে আমরা সেগুলো মোকাবিলা করতে পারি।”

অধ্যাপক ইউনূস ‘তিনটি শূন্য’ তত্ত্ব শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ উপস্থাপন করে বলেন, “এটি কোনো কল্পনা নয়, বরং একটি বাস্তব দিকনির্দেশনা, যেখানে সরকার, ব্যবসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মিলেই কাজ করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “অর্থ উপার্জনের চেয়ে মানুষকে সুখী করাই বড় আনন্দ। আমাদের মনোযোগ ব্যক্তিগত লাভ থেকে সরিয়ে সমষ্টিগত কল্যাণের দিকে দিতে হবে। প্রয়োজন এমন একটি নতুন অর্থনীতি, যা প্রতিযোগিতার নয়, সহানুভূতির ভিত্তিতে গড়ে উঠবে।”

নিক্কেই ফোরামের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, “এটি আশাবাদের একটি মঞ্চ, যেখানে সংলাপ সমাধানে রূপ নেয়।”

শেষে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ভবিষ্যৎ এখনো লেখা হয়নি। আমাদের সাহসী হতে হবে, একে অপরের প্রতি আস্থা রাখতে হবে এবং সহযোগিতার মনোভাব থেকে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ ও জাপান একসঙ্গে কাজ করে শুধু এশিয়া নয়, বিশ্বকেও নতুন করে গড়ে তুলতে পারে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

বিশ্বজুড়ে পারস্পরিক আস্থা হুমকির মুখে: নিক্কেই ফোরামে প্রধান উপদেষ্টা

আপডেট সময় ০৩:৫১:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

 

বিশ্ব আজ চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এই সময়ে বৈশ্বিক আস্থার সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

জাপানের টোকিওতে বৃহস্পতিবার আয়োজিত ৩০তম নিক্কেই ফোরাম ‘ফিউচার অব এশিয়া’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্যে তিনি বলেন, “জাতির মধ্যে, সমাজের অভ্যন্তরে, এমনকি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও আস্থা কমে যাচ্ছে। বিশ্ব ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে।”

বিজ্ঞাপন

‘উত্তাল বিশ্বে এশিয়ার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক বক্তব্যে ইউনূস বলেন, “আমরা এক গভীর অনিশ্চিত সময় অতিক্রম করছি। পারস্পরিক সহযোগিতা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা আজ প্রশ্নের মুখে। ইউক্রেন, গাজা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক অঞ্চলে যুদ্ধ এবং সংঘাত সাধারণ মানুষের জীবন ধ্বংস করছে।”

প্রসঙ্গত, তিনি মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে সৃষ্ট মানবিক সংকটের কথাও তুলে ধরেন। পাশাপাশি দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যয়বহুল যুদ্ধের কথাও উল্লেখ করে বলেন, “আমরা কোটি কোটি টাকা যুদ্ধের পেছনে ব্যয় করছি, অথচ লাখ লাখ মানুষ বেঁচে থাকার লড়াই করছে।”

বাংলাদেশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গত বছর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে এক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে এবং এরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরে কাজ করছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ন্যায়বিচার, সমতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়া এবং নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া।”

বৈশ্বিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা, প্রযুক্তিগত নৈতিক প্রশ্ন ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে ইউনূস বলেন, “বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ যেখানে বাস করে, সেই এশিয়াই এখন অনিশ্চয়তার কেন্দ্রস্থলে। কিন্তু এখানেই রয়েছে সর্বাধিক সম্ভাবনা।”

তিনি বলেন, “আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই, তবে এশিয়া শান্তি, সংলাপ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের এক নতুন পথ দেখাতে পারে। আমাদের চ্যালেঞ্জ বিশাল, কিন্তু সম্মিলিত শক্তি দিয়ে আমরা সেগুলো মোকাবিলা করতে পারি।”

অধ্যাপক ইউনূস ‘তিনটি শূন্য’ তত্ত্ব শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ উপস্থাপন করে বলেন, “এটি কোনো কল্পনা নয়, বরং একটি বাস্তব দিকনির্দেশনা, যেখানে সরকার, ব্যবসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মিলেই কাজ করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “অর্থ উপার্জনের চেয়ে মানুষকে সুখী করাই বড় আনন্দ। আমাদের মনোযোগ ব্যক্তিগত লাভ থেকে সরিয়ে সমষ্টিগত কল্যাণের দিকে দিতে হবে। প্রয়োজন এমন একটি নতুন অর্থনীতি, যা প্রতিযোগিতার নয়, সহানুভূতির ভিত্তিতে গড়ে উঠবে।”

নিক্কেই ফোরামের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, “এটি আশাবাদের একটি মঞ্চ, যেখানে সংলাপ সমাধানে রূপ নেয়।”

শেষে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ভবিষ্যৎ এখনো লেখা হয়নি। আমাদের সাহসী হতে হবে, একে অপরের প্রতি আস্থা রাখতে হবে এবং সহযোগিতার মনোভাব থেকে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ ও জাপান একসঙ্গে কাজ করে শুধু এশিয়া নয়, বিশ্বকেও নতুন করে গড়ে তুলতে পারে।”