ঢাকা ০৩:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
উপদেষ্টা আসিফের সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা শিরোনাম: ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির জবাবে সম্মানভিত্তিক চুক্তির আহ্বান ইইউ’র উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজের সঙ্গে এনসিপির সম্পৃক্ততা নেই : নাহিদ খাগড়াছড়িতে কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক্টরের সংঘর্ষে অগ্নিকাণ্ড, আহত ৪ শক্তিশালী ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতে ভারতের উত্তরপ্রদেশে একদিনেই ৪৫ জনের প্রাণহানি ঈদে বাজারে আসছে নতুন টাকা, থাকছে না কোনো ব্যক্তির ছবি: গভর্নর বৃষ্টিতে ভাসছে বোরো ধান, হতাশায় বগুড়ার কৃষকরা আজ ১১ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা, নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্কতা ভারত-পাকিস্তান পরমাণু যুদ্ধ হবে ‘পারস্পরিক ধ্বংস’: আইএসপিআর ডিজি সিরিয়ার ওপর সকল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেন ট্রাম্প প্রশাসন

নির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে ড. ইউনূস, পদত্যাগের ইঙ্গিত

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১০:১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
  • / 2

ছবি সংগৃহীত

 

যখন আদর্শবাদী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন গত আগস্টে পতনের মুখে পড়ে, তখন সারা দেশজুড়ে গণতন্ত্রের নবজাগরণের আশায় মানুষের চোখে আশার আলো জ্বলে উঠেছিল। তবে প্রায় নয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো নির্বাচন না হওয়ায় সেই আশার জায়গায় জমেছে হতাশার ধোঁয়াশা।

এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি তাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেওয়া হয় এবং নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও সহায়তা না মেলে, তবে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন। ইতোমধ্যে পদত্যাগপত্রের খসড়াও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

ড. ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেশের জন্য একটি নিরপেক্ষ এবং নীতিনিষ্ঠ পথনির্দেশক হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে গঠিত একটি জোট তার ধীর পদক্ষেপ ও কিছু নীতিগত সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত এই বক্তব্য ইউনূসকে গভীরভাবে হতাশ করেছে বলে জানা গেছে।

বিগত বছরের ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। হাসিনা টানা ১৫ বছর কঠোরভাবে দেশ শাসন করলেও বর্তমানে তার দল নিষিদ্ধ হওয়ায় রাজনীতিতে ভারসাম্য হারিয়েছে। এরই মাঝে ইউনূস সামরিক এবং রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েছেন। নিজের রাজনৈতিক ভিত্তি না থাকায় তার পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।

অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোবাসশার হাসান বলেন, “ড. ইউনূস দক্ষ অর্থনীতিবিদ হলেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তিনি অনভিজ্ঞ। অনেক সিদ্ধান্ত উপদেষ্টাদের কথায় নিয়ে নিচ্ছেন।” তিনি আরও বলেন, “ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া সম্ভব, কিন্তু সরকার সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না।”

বিএনপি প্রথমদিকে ইউনূস সরকারকে সমর্থন করলেও পরে বিভিন্ন নীতিগত ইস্যুতে বিরোধের কারণে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। যেমন, চট্টগ্রাম বন্দর বেসরকারিকরণ, মিয়ানমারে ত্রাণ করিডোর চালু, এবং কর ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে দলে ফাটল দেখা দেয়।

এদিকে ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও এখন বিএনপির হঠাৎ ক্ষমতায় আসার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। অনেকেই এখনও ইউনূসের ওপর আস্থা রাখছে, কিন্তু রাজনৈতিক চাপ এবং অনাস্থার পরিবেশে তার নেতৃত্ব টিকে থাকবে কি না, তা নিয়েই বড় প্রশ্ন উঠছে।

ফেব্রুয়ারিতে ইউনূসের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ‘ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি’ গঠন করেন। তিনি বলেন, “ড. ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার সময় যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, এখন আর তা মানা হচ্ছে না। বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপ, অস্থিরতা ও ষড়যন্ত্রে তিনি কার্যত একঘরে হয়ে গেছেন।”

বাংলাদেশ এখন এক অস্থির রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ইউনূসের পদত্যাগ হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে এমন শঙ্কাই এখন ঘনীভূত হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

নির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে ড. ইউনূস, পদত্যাগের ইঙ্গিত

আপডেট সময় ১০:১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

 

যখন আদর্শবাদী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন গত আগস্টে পতনের মুখে পড়ে, তখন সারা দেশজুড়ে গণতন্ত্রের নবজাগরণের আশায় মানুষের চোখে আশার আলো জ্বলে উঠেছিল। তবে প্রায় নয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো নির্বাচন না হওয়ায় সেই আশার জায়গায় জমেছে হতাশার ধোঁয়াশা।

এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি তাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেওয়া হয় এবং নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও সহায়তা না মেলে, তবে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন। ইতোমধ্যে পদত্যাগপত্রের খসড়াও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

ড. ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেশের জন্য একটি নিরপেক্ষ এবং নীতিনিষ্ঠ পথনির্দেশক হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে গঠিত একটি জোট তার ধীর পদক্ষেপ ও কিছু নীতিগত সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত এই বক্তব্য ইউনূসকে গভীরভাবে হতাশ করেছে বলে জানা গেছে।

বিগত বছরের ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। হাসিনা টানা ১৫ বছর কঠোরভাবে দেশ শাসন করলেও বর্তমানে তার দল নিষিদ্ধ হওয়ায় রাজনীতিতে ভারসাম্য হারিয়েছে। এরই মাঝে ইউনূস সামরিক এবং রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েছেন। নিজের রাজনৈতিক ভিত্তি না থাকায় তার পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।

অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোবাসশার হাসান বলেন, “ড. ইউনূস দক্ষ অর্থনীতিবিদ হলেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তিনি অনভিজ্ঞ। অনেক সিদ্ধান্ত উপদেষ্টাদের কথায় নিয়ে নিচ্ছেন।” তিনি আরও বলেন, “ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া সম্ভব, কিন্তু সরকার সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না।”

বিএনপি প্রথমদিকে ইউনূস সরকারকে সমর্থন করলেও পরে বিভিন্ন নীতিগত ইস্যুতে বিরোধের কারণে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। যেমন, চট্টগ্রাম বন্দর বেসরকারিকরণ, মিয়ানমারে ত্রাণ করিডোর চালু, এবং কর ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে দলে ফাটল দেখা দেয়।

এদিকে ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও এখন বিএনপির হঠাৎ ক্ষমতায় আসার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। অনেকেই এখনও ইউনূসের ওপর আস্থা রাখছে, কিন্তু রাজনৈতিক চাপ এবং অনাস্থার পরিবেশে তার নেতৃত্ব টিকে থাকবে কি না, তা নিয়েই বড় প্রশ্ন উঠছে।

ফেব্রুয়ারিতে ইউনূসের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ‘ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি’ গঠন করেন। তিনি বলেন, “ড. ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার সময় যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, এখন আর তা মানা হচ্ছে না। বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপ, অস্থিরতা ও ষড়যন্ত্রে তিনি কার্যত একঘরে হয়ে গেছেন।”

বাংলাদেশ এখন এক অস্থির রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ইউনূসের পদত্যাগ হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে এমন শঙ্কাই এখন ঘনীভূত হচ্ছে।