ঢাকা ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সাজেকে শুরু হলো স্যাটেলাইট ফায়ার স্টেশনের কার্যক্রম ফাহমিদুল ইসলামকে আবার ডাক দিল বাফুফে: জাতীয় দলে নতুন আশা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুহাম্মদ ইসলাম লন্ডনে ডেপুটি সিভিক মেয়র নির্বাচিত “ফারাক্কার ফাঁদে বাংলাদেশ: বাঁধের পঞ্চাশ বছরের বেদনা ও বিপর্যয়।” আইপিএল পুনরায় শুরুর আগে ধাক্কা দিল্লীর শিবিরে, নেই স্টার্ক-ডু প্লেসিস-ফেরেয়রা ভারত-পাকিস্তান চুক্তিতে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়লো আজ ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস বাংলাদেশ থেকে সৌদিতে ৪৭,৪২০ হজযাত্রীর যাত্রা সম্পন্ন ঈদ উপলক্ষে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু, যাত্রীদের ভিড় ঢাকায় নিরাপদ পথচারী পারাপারের জন্য ডিএমপির নতুন উদ্যোগ

ওটিপি এসএমএস: রাজস্বের বৃহৎ লোপাটের কাহিনি

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১১:২৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • / 8

ছবি সংগৃহীত

 

দেশে প্রতিদিন এক কোটিরও বেশি আন্তর্জাতিক ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) এসএমএস পাঠানো হয়। মাইক্রোসফট, গুগল, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবহারকারীদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় এসব এসএমএস ব্যবহার করে। তবে, এত বিপুল সংখ্যক এসএমএস আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো নির্ধারিত নীতিমালা বা সরকার নির্ধারিত ফি কাঠামো না থাকায় দেশের মোবাইল অপারেটররা হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে, যা সরকারকে বিপুল রাজস্ব ক্ষতির মুখে ফেলছে এবং অর্থ পাচারের পথ সুগম করছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও) প্রতিটি আন্তর্জাতিক এসএমএসের বিপরীতে গড়ে ২৫ টাকা আয় করছে। এর ফলে প্রতিদিন প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে, যা বছরে ৯,১২৫ কোটি টাকারও বেশি। এই বিপুল অঙ্কের লেনদেন সরকারি রাজস্ব কাঠামোর বাইরে চলে যাচ্ছে, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই লেনদেন বৈদেশিক মুদ্রায়, বিশেষ করে ডলার ও ইউরোতে হচ্ছে। ফলে দেশের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।

বর্তমানে এই খাতটি এক ধরনের ‘গ্রে এরিয়া’ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। বিটিআরসির পক্ষ থেকে কোনো নির্ধারিত এসএমএস টার্মিনেশন রেট বা বাধ্যতামূলক রিপোর্টিং সিস্টেম নেই। ফলে একাধিক অপারেটর গ্রে রুট ব্যবহার করে এসএমএস আদান-প্রদান করছে, যা সাইবার নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। মোবাইল অপারেটররা সরাসরি বা সাব-অপারেটরের মাধ্যমে এসএমএস টার্মিনেশন সার্ভিস দিয়ে থাকে, কিন্তু বিটিআরসি এর ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখছে না।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মহলের চাপে বিটিআরসি আন্তর্জাতিক এসএমএস খাতে নীতিমালা প্রণয়নে আগ্রহ দেখায়নি। মোবাইল অপারেটরদের দেওয়া তথ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা সন্তুষ্ট থেকেছে, ফলে দীর্ঘকাল ধরে এই খাতটি কোনো জবাবদিহি ছাড়া পরিচালিত হচ্ছে। এ কারণে অর্থ পাচার এবং ডলারের অনিয়ন্ত্রিত লেনদেনের ঝুঁকি বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক এসএমএসের ওপর নির্দিষ্ট টার্মিনেশন ফি ধার্য করাই যৌক্তিক। অনেক দেশেই এ ধরনের ফি কাঠামো ও নিয়ন্ত্রিত গেটওয়ে চালু রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক লাইসেন্সিং বা মনিটরিং ব্যবস্থা নেই। এর ফলে মোবাইল অপারেটররা গোপনে আন্তর্জাতিক এসএমএস পাঠানোর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে এই খাতের কোনো হিসাব নেই। বিদেশ থেকে আসা কোটি কোটি টাকা মূল্যের এসএমএস পেমেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেল বাইপাস করায় মানি লন্ডারিংয়ের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সরকারের কাছে ন্যায্য হিস্যা আদায় ও আন্তর্জাতিক এসএমএসের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান এমদাদুল বারী জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন এবং গাইডলাইন কবে নাগাদ আসবে তা এখনও নির্দিষ্ট নয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী প্রকৌশলী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেছেন, সরকার আন্তর্জাতিক এসএমএসের মাধ্যমে অর্থ পাচার বন্ধে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি নির্দিষ্ট এসএমএস টার্মিনেশন চার্জ ও গেটওয়ে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু করলে সরকার প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আন্তর্জাতিক বার্তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ওটিপি এসএমএস: রাজস্বের বৃহৎ লোপাটের কাহিনি

আপডেট সময় ১১:২৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

 

দেশে প্রতিদিন এক কোটিরও বেশি আন্তর্জাতিক ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) এসএমএস পাঠানো হয়। মাইক্রোসফট, গুগল, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবহারকারীদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় এসব এসএমএস ব্যবহার করে। তবে, এত বিপুল সংখ্যক এসএমএস আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো নির্ধারিত নীতিমালা বা সরকার নির্ধারিত ফি কাঠামো না থাকায় দেশের মোবাইল অপারেটররা হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে, যা সরকারকে বিপুল রাজস্ব ক্ষতির মুখে ফেলছে এবং অর্থ পাচারের পথ সুগম করছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও) প্রতিটি আন্তর্জাতিক এসএমএসের বিপরীতে গড়ে ২৫ টাকা আয় করছে। এর ফলে প্রতিদিন প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে, যা বছরে ৯,১২৫ কোটি টাকারও বেশি। এই বিপুল অঙ্কের লেনদেন সরকারি রাজস্ব কাঠামোর বাইরে চলে যাচ্ছে, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই লেনদেন বৈদেশিক মুদ্রায়, বিশেষ করে ডলার ও ইউরোতে হচ্ছে। ফলে দেশের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।

বর্তমানে এই খাতটি এক ধরনের ‘গ্রে এরিয়া’ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। বিটিআরসির পক্ষ থেকে কোনো নির্ধারিত এসএমএস টার্মিনেশন রেট বা বাধ্যতামূলক রিপোর্টিং সিস্টেম নেই। ফলে একাধিক অপারেটর গ্রে রুট ব্যবহার করে এসএমএস আদান-প্রদান করছে, যা সাইবার নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। মোবাইল অপারেটররা সরাসরি বা সাব-অপারেটরের মাধ্যমে এসএমএস টার্মিনেশন সার্ভিস দিয়ে থাকে, কিন্তু বিটিআরসি এর ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখছে না।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মহলের চাপে বিটিআরসি আন্তর্জাতিক এসএমএস খাতে নীতিমালা প্রণয়নে আগ্রহ দেখায়নি। মোবাইল অপারেটরদের দেওয়া তথ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা সন্তুষ্ট থেকেছে, ফলে দীর্ঘকাল ধরে এই খাতটি কোনো জবাবদিহি ছাড়া পরিচালিত হচ্ছে। এ কারণে অর্থ পাচার এবং ডলারের অনিয়ন্ত্রিত লেনদেনের ঝুঁকি বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক এসএমএসের ওপর নির্দিষ্ট টার্মিনেশন ফি ধার্য করাই যৌক্তিক। অনেক দেশেই এ ধরনের ফি কাঠামো ও নিয়ন্ত্রিত গেটওয়ে চালু রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক লাইসেন্সিং বা মনিটরিং ব্যবস্থা নেই। এর ফলে মোবাইল অপারেটররা গোপনে আন্তর্জাতিক এসএমএস পাঠানোর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে এই খাতের কোনো হিসাব নেই। বিদেশ থেকে আসা কোটি কোটি টাকা মূল্যের এসএমএস পেমেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেল বাইপাস করায় মানি লন্ডারিংয়ের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সরকারের কাছে ন্যায্য হিস্যা আদায় ও আন্তর্জাতিক এসএমএসের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান এমদাদুল বারী জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন এবং গাইডলাইন কবে নাগাদ আসবে তা এখনও নির্দিষ্ট নয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী প্রকৌশলী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেছেন, সরকার আন্তর্জাতিক এসএমএসের মাধ্যমে অর্থ পাচার বন্ধে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি নির্দিষ্ট এসএমএস টার্মিনেশন চার্জ ও গেটওয়ে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু করলে সরকার প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আন্তর্জাতিক বার্তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।