আনন্দ শোভাযাত্রা ঘিরে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা, বর্ণিল আলোয় নববর্ষ উদযাপন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে আজ বরাবরের মতোই বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হলো বাংলা নববর্ষ। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ শ্লোগানকে সামনে রেখে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই শোভাযাত্রা রূপ নেয় এক মিলনমেলায়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্রিত হন নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে।
সকালে শাহবাগ ও চারুকলা এলাকা ঘিরে ছিল অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এমনকি সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও দেখা যায় দায়িত্ব পালন করতে। সবার চোখে মুখে ছিল উৎসবের উচ্ছ্বাস, আর নিরাপত্তা ছিল শান্তিপূর্ণ আয়োজনের পরিপূর্ণ সঙ্গী।
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলামোটর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত কয়েকটি পয়েন্টে ব্যারিকেড বসিয়ে যান চলাচলে ডাইভারশন দেওয়া হয়। নেভি গলির মুখেও ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণে পুলিশের অবস্থান লক্ষ করা গেছে। ফলে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসা মানুষদের পায়ে হেঁটেই আসতে হয়।
এ বছর চারুকলা অনুষদের আয়োজনে তৈরি হয় ২১টি মোটিফ যার মধ্যে ৭টি বড়, ৭টি মাঝারি এবং ৭টি ছোট মোটিফ ছিল চোখে পড়ার মতো। কাঠের তৈরি বাঘ, উড়ন্ত শান্তির পায়রা, বিশাল ইলিশ মাছ, ঐতিহাসিক পটভূমিতে টাইপোগ্রাফিক ‘৩৬ জুলাই’, পালকি ও আন্দোলনে নিহত মুগ্ধের পানির বোতল এসব মোটিফ যেন ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রতিবাদের এক অনন্য রূপক হয়ে ওঠে।
সবচেয়ে আলোচিত ছিল ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে যুক্ত হওয়া তরমুজের মোটিফ। সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এটি হয়ে উঠেছে প্রতিরোধের প্রতীক। নববর্ষের উৎসবের মঞ্চে এই মোটিফ একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা বহন করে।
নতুন বছরের সূচনায় ঢাকাবাসী যেন নতুন প্রত্যাশা ও শান্তির বার্তা নিয়ে মিলিত হয়েছেন এই শোভাযাত্রায়। চারুকলার রঙ, সুর আর সৃষ্টিশীলতা মিলেমিশে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে সৃষ্টি করেছে এক বর্ণিল ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। এ উৎসব শুধু নববর্ষ নয়, বরং ছিল সাম্যের, সংহতির, আর প্রতিবাদের এক নান্দনিক প্রকাশ।