গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা: “শুধু আক্রমণের মুখেই আলোচনা চলবে এবং এটি কেবল শুরু” বললেন নেতানিয়াহু

- আপডেট সময় ১২:৩৪:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
- / 21
গাজার আকাশজুড়ে আবারও আগুনের লেলিহান শিখা। এক রাতের ভয়াবহ হামলায় নিহত হয়েছেন চার শতাধিক মানুষ, আহত হয়েছেন শত শত। বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন অনেকেই। হাসপাতালগুলো লাশে উপচে পড়ছে, চিকিৎসাকর্মীরা দিশেহারা।
মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, “গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল ব্যাপক যুদ্ধ শুরু করেছে।” ভিডিও বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, “শুধু আক্রমণের মুখেই আলোচনা চলবে, এবং এটি কেবল শুরু।” ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা হামাসের লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করছে, তবে বাস্তবে সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যা ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ। ইসরায়েলের এই আক্রমণ বোঝাচ্ছে, শান্তি আলোচনা ভেঙে পড়েছে এবং যুদ্ধবিরতির আশাও ক্ষীণ হয়ে এসেছে।
গাজা উপত্যকার বেইত লাহিয়া, রাফাহ, নুসাইরাত এবং আল-মাওয়াসিতে ইসরায়েলি বাহিনী রাতভর বোমাবর্ষণ চালিয়েছে। গত কয়েক মাসের আপেক্ষিক শান্তি মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেছে। আহতদের আর্তনাদে হাসপাতাল চত্বর ভারী হয়ে উঠেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, “এত বড় আক্রমণের ধাক্কা সামলাতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও কর্মী নেই।”
মিসর এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তামিম খাল্লাফ বলেছেন, “বিমান হামলা যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে।” জাবালিয়া আল-বালাদের বাসিন্দা হাইল বিবিসিকে বলেছেন, “আমি হতবাক হয়েছি, কিন্তু ইসরায়েলের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করিনি। একজন নাগরিক হিসেবে আমি ক্লান্ত।”
ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে হামাসের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা রয়েছেন। গাজার উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদ আবু ওয়াতফাসহ আরও কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন। নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, হামাসের সঙ্গে আলোচনা চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু তারা প্রত্যেকবার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপ শুরুর কথা ছিল ছয় সপ্তাহ আগে, যেখানে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ছিল। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল প্রথম ধাপটি বাড়াতে চাইলে হামাস তা প্রত্যাখ্যান করে। এতে চুক্তিটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে এবং অবশেষে নতুন হামলার সূত্রপাত হয়। নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে দিয়েছেন, “ইসরায়েল তার সব লক্ষ্য অর্জনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা, হামাসকে নির্মূল করা এবং নিশ্চিত করা যে হামাস আর কখনো ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয়।”
এদিকে, ইসরায়েলের হামলা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। মার্কিন নিরাপত্তা পরিষদ বলেছে, “হামাস যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর জন্য জিম্মিদের মুক্তি দিতে পারত, কিন্তু তারা তা না করে যুদ্ধকে বেছে নিয়েছে।” হামাস পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, “যদি ইসরায়েলের সহিংসতা অব্যাহত থাকে, তবে বন্দি ইসরায়েলিদের হত্যা করা হবে।”
গাজায় চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছিলেন প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. সাবরিনা দাস। তিনি বলেন, “এটি এতটাই আকস্মিক ছিল যে সবাই ভেঙে পড়েছিল। আমরা জানতাম, যুদ্ধ আবার শুরু হলো।” গাজার হাসপাতালগুলোর পরিচালক মোহাম্মদ জাকোত জানান, “আক্রমণের তীব্রতা এত বেশি যে চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর চরম চাপ পড়েছে।”
ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার ক্ষোভে ফুঁসছে। তাদের অনেকেই পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভ করেছে, কারণ এই হামলা তাদের স্বজনদের জীবনের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখতে ব্যর্থ হলে গাজায় আরও রক্তপাত যে অনিবার্য, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।