মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভারতে কারফিউ জারি

- আপডেট সময় ১২:৫০:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
- / 31
ভারতের মহারাষ্ট্রে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় নাগপুরের বেশ কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন।
১৭ শতকের সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সম্ভাজিনগর জেলায় অবস্থিত। কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এটি সরিয়ে ফেলার দাবি জানালে সোমবার বজরং দল আন্দোলন শুরু করে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
নাগপুরের পুলিশ কমিশনার রবীন্দ্র কুমার সিঙ্গাল ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারার অধীনে নোটিশ জারি করেছেন। এতে জানানো হয়েছে, কোতোয়ালি, গণেশপেঠ, তহসিল, লাকাদগঞ্জ, পাচপাওলি, শান্তিনগর, সক্করদারা, নন্দনবন, ইমামওয়াদা, যশোধরানগর ও কপিলনগর থানার আওতাভুক্ত এলাকাগুলোতে কারফিউ কার্যকর থাকবে।
বজরং দলের কর্মীরা নাগপুরের শিবাজি মহারাজের মূর্তির কাছে বিক্ষোভ শুরু করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। তারা আওরঙ্গজেবের ছবি এবং সবুজ কাপড়ে মোড়ানো একটি প্রতীকী সমাধি পুড়িয়ে ফেলে। এই ঘটনার পর গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে পোড়ানো কাপড়ে ধর্মীয় শ্লোক লেখা ছিল, যা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়।
পুলিশ জানায়, গত সন্ধ্যায় প্রায় ৮০-১০০ জন বিক্ষোভকারী হিংসাত্মক আচরণ করে, পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে এবং বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
এই ঘটনায় অন্তত চারজন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে এক ডজনেরও বেশি পুলিশ সদস্য রয়েছে। সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও নাগপুরের সংসদ সদস্য নীতিন গড়করি জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘অবৈধ কার্যকলাপে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ নাগরিকদের গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ করেছেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে বিরোধীরা এই ঘটনাকে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে। শিবসেনা ইউবিটি নেতা আদিত্য ঠাকরে বলেছেন, ‘মহারাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। নাগপুরে এ ধরনের ঘটনা গভীর উদ্বেগের।’
কংগ্রেস নেতা পবন খেরা মন্তব্য করেছেন, ‘নাগপুরে ৩০০ বছরের মধ্যে কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি। এখন এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভাজনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’ বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। প্রশাসন বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।