নয়াদিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন: বিজিবির দাবি, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা হোক
ভারতের নয়াদিল্লিতে ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে দুই দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা, অপরাধ দমন এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই সম্মেলনে, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী ও বিএসএফ মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী নেতৃত্বে দুই দেশের প্রতিনিধিদল অংশ নেন।
সম্মেলনে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয় সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যার ঘটনাগুলোর বিষয়ে। বিজিবি মহাপরিচালক বিএসএফকে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। উভয় বাহিনী সীমান্তে যৌথ টহল বাড়ানোর এবং একে অপরের গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের ব্যাপারে একমত হয়।
বিজিবি মহাপরিচালক আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম সীমান্তের শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এ ধরনের পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তি রোধের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বিএসএফও সীমান্তে ‘অ-প্রাণঘাতী’ নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, মানবাধিকারের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান রেখে সীমান্ত হত্যা প্রতিরোধে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
সীমান্তে মাদক পাচার, অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে যৌথ প্রচেষ্টা জোরদার করার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। এ ছাড়াও, মানবপাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অবৈধ সীমান্ত অতিক্রমে সচেতনতা বৃদ্ধি করার ওপর আলোচনা হয়।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সীমান্ত সম্মেলনে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো হলো:
নিরস্ত্র নাগরিকদের সুরক্ষা: সীমান্তে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর হামলা, হত্যা ও আহত হওয়ার ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য যৌথ টহল বৃদ্ধি ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান।
সীমান্ত উন্নয়ন: সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য যৌথ পরিদর্শন ও সঠিক অনুমোদন গ্রহণ।
অপরাধ দমন: মাদকপাচার, মানবপাচার, অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম এবং অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত অপরাধ রোধে কঠোর পদক্ষেপ।
সীমান্ত নিরাপত্তা: অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সীমান্তে দুই বাহিনীর নজরদারি জোরদার।
মানবপাচার রোধ: মানবপাচার প্রতিরোধে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসন।
পরিবেশ সুরক্ষা: আখাউড়ার চারটি খালের বর্জ্য পানি শোধনাগার স্থাপন এবং কুশিয়ারা নদীর মুখ উন্মুক্তকরণের পরিকল্পনা।
সহযোগিতা বৃদ্ধি: ভবিষ্যতে যৌথ খেলাধুলা ও দ্বিপক্ষীয় কর্মসূচি আয়োজনের মাধ্যমে দুই দেশের সহযোগিতার গভীরতা বৃদ্ধি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সম্মেলন উভয় দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা এবং শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতে যৌথ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে দুই বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।