০৭:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম :
কেনিয়ায় ছোট যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত, ১২ জনের সবাই নিহত হওয়ার আশঙ্কা ইলন মাস্কের নতুন উদ্যোগ — এআই-চালিত “Grokipedia” চালু বিপুল সংখ্যক জামিন দেওয়ায় ৩ বিচারপতির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি নির্বাচনে প্রতি কেন্দ্রে আনসার থাকবে ১৩ জন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আমলাদের দায়িত্ব কমিয়ে আনা হবে: আমীর খসরু শাপলা দেওয়ার সুযোগ নেই, অন্য প্রতীক দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি: ইসি সচিব হানিফসহ ৪ জনের অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানি আজ পারমাণবিক চালিত আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে পরীক্ষার ঘোষণা পুতিনের নিজামী-মীর কাসেম-সালাউদ্দিন কাদেরকে মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে: মির্জা ফখরুল ২০২৩ সাল থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধের খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯ থেকে ৬৭ বিলিয়ন ডলার।

ইসরায়েলের হামলা ও অবরোধে গাজায় একদিনেই ৭১ জনের প্রাণহানি

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১১:১৫:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
  • / 64

ছবি সংগৃহীত

 

ইসরায়েলের অবরোধে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গাজা। খাদ্য, চিকিৎসা ও জ্বালানির সংকটে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিদিন। একদিকে টানা সামরিক হামলা, অন্যদিকে দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে ভয়াবহ হারে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭১ জন, যাদের অনেকেই ত্রাণের আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

রোববার (২৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যমটি। শুধু শনিবারই ক্ষুধা ও অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। এ নিয়ে অবরোধ-জনিত দুর্ভিক্ষে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৭ জনে, যার মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।

বিজ্ঞাপন

গাজার চিকিৎসা সংস্থাগুলো বলছে, নিহতদের বড় অংশই ত্রাণ সংগ্রহের সময় হামলার শিকার হয়েছেন। একদিনে ৪২ জন বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাঁরা সহায়তা পাওয়ার আশায় বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শনিবার রাতে ইসরায়েল সাময়িকভাবে বেসামরিক এলাকায় ও ত্রাণ করিডোরে হামলা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিলেও, কোন অঞ্চলগুলোতে এটি কার্যকর হবে সে বিষয়ে স্পষ্টতা দেয়নি। এদিকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অবরোধ শিথিল করতে ইসরায়েলের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। তাঁদের অভিযোগ, ইসরায়েল বরং ত্রাণ সরবরাহে বাধা দিচ্ছে এবং জাতিসংঘের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।

ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত দাবি করছে, তারা আকাশপথে ত্রাণ পাঠাচ্ছে। তবে ইউএনআরডব্লিউএ (ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা)-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এটিকে বাস্তব সংকট থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার ব্যয়বহুল কৌশল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “রাস্তাগুলো না খুলে আকাশ থেকে ত্রাণ ফেললে দুর্ভিক্ষ ঠেকানো সম্ভব নয়।”

গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত আকাশপথে ফেলা ত্রাণের পরিমাণ মাত্র সাতটি প্যালেট, যা একটি ট্রাকের ধারণক্ষমতারও কম। তিনি বলেন, “এভাবে ত্রাণ কার্যকরভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানো অসম্ভব।” তাঁর অভিযোগ, ত্রাণ ফেলা হচ্ছে ইসরায়েল ঘোষিত ‘সামরিক নিষিদ্ধ অঞ্চলগুলোতে’, যেখানে রাতের বেলায় গিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

এদিকে, শনিবার গাজার খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায়, যা ইসরায়েলের কথিত ‘নিরাপদ এলাকা’, সেখানে ড্রোন হামলা চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে তথাকথিত ‘সেফ জোনের’ নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগ জানিয়েছে, জ্বালানি ও যন্ত্রাংশের ঘাটতির কারণে তারা খুব শিগগিরই জরুরি সেবাগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হবে। এক বিবৃতিতে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে মানবিক করিডোর খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যেন অন্তত জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম প্রবেশ করতে পারে।

চিকিৎসা মহল সতর্ক করে বলছে, গাজায় গণহারে অপুষ্টিজনিত মৃত্যু এখন কেবল সম্ভাবনা নয়, বরং বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামরিক আগ্রাসনের পাশাপাশি দুর্ভিক্ষ যেন এক ভিন্ন যুদ্ধ রূপে হাজির হয়েছে ফিলিস্তিনিদের জন্য।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ইসরায়েলের হামলা ও অবরোধে গাজায় একদিনেই ৭১ জনের প্রাণহানি

আপডেট সময় ১১:১৫:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

 

ইসরায়েলের অবরোধে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে গাজা। খাদ্য, চিকিৎসা ও জ্বালানির সংকটে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিদিন। একদিকে টানা সামরিক হামলা, অন্যদিকে দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে ভয়াবহ হারে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭১ জন, যাদের অনেকেই ত্রাণের আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

রোববার (২৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানায় সংবাদমাধ্যমটি। শুধু শনিবারই ক্ষুধা ও অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। এ নিয়ে অবরোধ-জনিত দুর্ভিক্ষে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৭ জনে, যার মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।

বিজ্ঞাপন

গাজার চিকিৎসা সংস্থাগুলো বলছে, নিহতদের বড় অংশই ত্রাণ সংগ্রহের সময় হামলার শিকার হয়েছেন। একদিনে ৪২ জন বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাঁরা সহায়তা পাওয়ার আশায় বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শনিবার রাতে ইসরায়েল সাময়িকভাবে বেসামরিক এলাকায় ও ত্রাণ করিডোরে হামলা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিলেও, কোন অঞ্চলগুলোতে এটি কার্যকর হবে সে বিষয়ে স্পষ্টতা দেয়নি। এদিকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অবরোধ শিথিল করতে ইসরায়েলের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। তাঁদের অভিযোগ, ইসরায়েল বরং ত্রাণ সরবরাহে বাধা দিচ্ছে এবং জাতিসংঘের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।

ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত দাবি করছে, তারা আকাশপথে ত্রাণ পাঠাচ্ছে। তবে ইউএনআরডব্লিউএ (ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা)-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এটিকে বাস্তব সংকট থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার ব্যয়বহুল কৌশল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “রাস্তাগুলো না খুলে আকাশ থেকে ত্রাণ ফেললে দুর্ভিক্ষ ঠেকানো সম্ভব নয়।”

গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত আকাশপথে ফেলা ত্রাণের পরিমাণ মাত্র সাতটি প্যালেট, যা একটি ট্রাকের ধারণক্ষমতারও কম। তিনি বলেন, “এভাবে ত্রাণ কার্যকরভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানো অসম্ভব।” তাঁর অভিযোগ, ত্রাণ ফেলা হচ্ছে ইসরায়েল ঘোষিত ‘সামরিক নিষিদ্ধ অঞ্চলগুলোতে’, যেখানে রাতের বেলায় গিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

এদিকে, শনিবার গাজার খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায়, যা ইসরায়েলের কথিত ‘নিরাপদ এলাকা’, সেখানে ড্রোন হামলা চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে তথাকথিত ‘সেফ জোনের’ নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগ জানিয়েছে, জ্বালানি ও যন্ত্রাংশের ঘাটতির কারণে তারা খুব শিগগিরই জরুরি সেবাগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হবে। এক বিবৃতিতে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে মানবিক করিডোর খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যেন অন্তত জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম প্রবেশ করতে পারে।

চিকিৎসা মহল সতর্ক করে বলছে, গাজায় গণহারে অপুষ্টিজনিত মৃত্যু এখন কেবল সম্ভাবনা নয়, বরং বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামরিক আগ্রাসনের পাশাপাশি দুর্ভিক্ষ যেন এক ভিন্ন যুদ্ধ রূপে হাজির হয়েছে ফিলিস্তিনিদের জন্য।