ঢাকা ০১:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে অগ্রগতি, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের স্বচ্ছতা চায় তেহেরান দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, চলছে ভোটগ্রহণ গা/জা/য় ত্রাণ কেন্দ্রে গোলাগুলি ও হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চায় জাতিসংঘ টাঙ্গাইলে ট্রাকের পেছনে মাইক্রোবাসের ধাক্কা: নিহত ৩, আহত ৩ শ্রীপুরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক, উত্তপ্ত পরিস্থিতি বায়তুল মোকাররমে ঈদুল আজহার পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে হাফতার প্রশাসনের পাল্টা সিদ্ধান্ত: তুরস্ক-লিবিয়া সমুদ্র চুক্তিতে যোগদান আসামে একদিনে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত, ভাঙল ১৩২ বছরের পুরনো রেকর্ড দিনাজপুরে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা জাগাচ্ছে নতুন ধান ব্রি-১০২ শান্তি আলোচনায় ব্যর্থ রাশিয়া-ইউক্রেন, তবে যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে অগ্রগতি

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনায় নতুন গতি, গঠনমূলক অগ্রগতিতে আশাবাদ দুই দেশের

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১০:৫৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
  • / 25

ছবি: সংগৃহীত

 

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য আলোচনায় আবারও গতি ফিরেছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত দুই দিনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দুই পক্ষই গঠনমূলক অগ্রগতির কথা জানিয়েছে। আলোচনায় উঠে এসেছে দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত পরিকল্পনা, পারস্পরিক অর্থনৈতিক পরামর্শ, এবং বাণিজ্য ঘাটতি নিরসনের সম্ভাব্য পথ।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শনিবার ও রোববার (১০ ও ১১ মে) জেনেভায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে চীনের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ভাইস-প্রিমিয়ার হে লিফেং। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার। দুই দিনব্যাপী বৈঠকে দুই পক্ষই স্বচ্ছ ও খোলামেলা আলোচনায় অংশ নেয়।

চীন জানিয়েছে, আলোচনার পরিবেশ ছিল গভীর ও ফলপ্রসূ। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে এবার বাস্তবভিত্তিক কিছু অগ্রগতি হয়েছে। আলোচনার পুরো বিবরণ যৌথভাবে সোমবার প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই আলোচনা দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিবিসির তথ্যমতে, দুই দেশ একটি স্থায়ী অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য পরামর্শ কাঠামো গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভবিষ্যতে এই ফোরামের মাধ্যমে যেকোনো দ্বিপাক্ষিক ইস্যু আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বৈঠক চলাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়মিতভাবে অবহিত করা হয়েছে প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে। হোয়াইট হাউসের মতে, ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি এখন একটি ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি’, যার দ্রুত এবং ন্যায্য সমাধান প্রয়োজন।

চীন বলছে, উভয় দেশের স্বার্থে সহযোগিতার পরিসর আরও বিস্তৃত করা উচিত। যাতে করে বাণিজ্য সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হয় এবং উত্তেজনা প্রশমিত হয়।

তবে, সাম্প্রতিক অতীতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন মাত্রা পেয়েছিল। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-চীন কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপের দিকে যেতে থাকে। বছরের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এরপর ২ এপ্রিল আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেন ট্রাম্প। চীন পাল্টা ব্যবস্থা নিলে, ট্রাম্প আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৪ শতাংশে। পরে তা ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ এবং সর্বশেষ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে যান ট্রাম্প প্রশাসন।

এরই পাল্টা জবাবে চীন জানায়, তারা ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করবে মার্কিন পণ্যের ওপর। এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানের ফলে বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয় বিশ্ববাজারে।

আলোচনা শুরুর আগে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট স্পষ্ট করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে শুল্ক কমাবে না এবং চীনকে অবশ্যই ছাড় দিতে হবে।”

বিশ্ব অর্থনীতির দুই প্রধান শক্তির মধ্যে এমন গঠনমূলক সংলাপ বিশ্ববাজারের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে তা দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনায় নতুন গতি, গঠনমূলক অগ্রগতিতে আশাবাদ দুই দেশের

আপডেট সময় ১০:৫৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

 

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য আলোচনায় আবারও গতি ফিরেছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত দুই দিনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দুই পক্ষই গঠনমূলক অগ্রগতির কথা জানিয়েছে। আলোচনায় উঠে এসেছে দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত পরিকল্পনা, পারস্পরিক অর্থনৈতিক পরামর্শ, এবং বাণিজ্য ঘাটতি নিরসনের সম্ভাব্য পথ।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শনিবার ও রোববার (১০ ও ১১ মে) জেনেভায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে চীনের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ভাইস-প্রিমিয়ার হে লিফেং। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার। দুই দিনব্যাপী বৈঠকে দুই পক্ষই স্বচ্ছ ও খোলামেলা আলোচনায় অংশ নেয়।

চীন জানিয়েছে, আলোচনার পরিবেশ ছিল গভীর ও ফলপ্রসূ। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে এবার বাস্তবভিত্তিক কিছু অগ্রগতি হয়েছে। আলোচনার পুরো বিবরণ যৌথভাবে সোমবার প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই আলোচনা দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিবিসির তথ্যমতে, দুই দেশ একটি স্থায়ী অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য পরামর্শ কাঠামো গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভবিষ্যতে এই ফোরামের মাধ্যমে যেকোনো দ্বিপাক্ষিক ইস্যু আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বৈঠক চলাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়মিতভাবে অবহিত করা হয়েছে প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে। হোয়াইট হাউসের মতে, ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি এখন একটি ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি’, যার দ্রুত এবং ন্যায্য সমাধান প্রয়োজন।

চীন বলছে, উভয় দেশের স্বার্থে সহযোগিতার পরিসর আরও বিস্তৃত করা উচিত। যাতে করে বাণিজ্য সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হয় এবং উত্তেজনা প্রশমিত হয়।

তবে, সাম্প্রতিক অতীতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন মাত্রা পেয়েছিল। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-চীন কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপের দিকে যেতে থাকে। বছরের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এরপর ২ এপ্রিল আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেন ট্রাম্প। চীন পাল্টা ব্যবস্থা নিলে, ট্রাম্প আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৪ শতাংশে। পরে তা ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ এবং সর্বশেষ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে যান ট্রাম্প প্রশাসন।

এরই পাল্টা জবাবে চীন জানায়, তারা ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করবে মার্কিন পণ্যের ওপর। এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানের ফলে বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয় বিশ্ববাজারে।

আলোচনা শুরুর আগে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট স্পষ্ট করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে শুল্ক কমাবে না এবং চীনকে অবশ্যই ছাড় দিতে হবে।”

বিশ্ব অর্থনীতির দুই প্রধান শক্তির মধ্যে এমন গঠনমূলক সংলাপ বিশ্ববাজারের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে তা দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।