ঢাকা ০১:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে অগ্রগতি, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের স্বচ্ছতা চায় তেহেরান দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, চলছে ভোটগ্রহণ গা/জা/য় ত্রাণ কেন্দ্রে গোলাগুলি ও হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চায় জাতিসংঘ টাঙ্গাইলে ট্রাকের পেছনে মাইক্রোবাসের ধাক্কা: নিহত ৩, আহত ৩ শ্রীপুরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক, উত্তপ্ত পরিস্থিতি বায়তুল মোকাররমে ঈদুল আজহার পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে হাফতার প্রশাসনের পাল্টা সিদ্ধান্ত: তুরস্ক-লিবিয়া সমুদ্র চুক্তিতে যোগদান আসামে একদিনে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত, ভাঙল ১৩২ বছরের পুরনো রেকর্ড দিনাজপুরে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা জাগাচ্ছে নতুন ধান ব্রি-১০২ শান্তি আলোচনায় ব্যর্থ রাশিয়া-ইউক্রেন, তবে যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে অগ্রগতি

যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য চুক্তির পথে বড় অগ্রগতি, আজ শুরু হচ্ছে আলোচনা

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১২:৪৫:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • / 18

ছবি: সংগৃহীত

 

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি এখন অনেকটাই পরিণতির দ্বারপ্রান্তে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উভয় দেশের প্রতিনিধিরা চুক্তির শর্তাবলি বা টার্মস অব রেফারেন্সে একমত হয়েছে। এতে শুল্ক, অশুল্ক বাধা, উৎস নির্দেশিকা এবং শুল্কায়ন সহজীকরণের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ভারতে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের উপস্থিতিতেই এই অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে এই আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অতীতে বহুবার ভারতের শুল্কনীতির সমালোচনা করে ভারতকে “শুল্কের রাজা” বলে অভিহিত করেছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরকে কেন্দ্র করে শুল্কনীতি সংস্কারের বিষয়টি অগ্রাধিকার পায়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী, ভারতে তাদের পণ্যের গড় শুল্কহার প্রায় ১৭ শতাংশ, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির বড় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রির মন্তব্য করেছেন, “এই আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং বাণিজ্যে ভারসাম্য অর্জনের পথ খুলবে। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ভারতীয় বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে এবং শ্রমিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণকারী অন্যায্য নীতির সমাধান হবে।”

ভারতও এই আলোচনায় গঠনমূলক অংশগ্রহণ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। উভয় দেশই শ্রমিক, কৃষক এবং উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে আশাবাদী।

আজ থেকে ওয়াশিংটনে শুরু হচ্ছে উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য আলোচনা। ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হবে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৮ সালে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে ইস্পাতে ২৫ শতাংশ এবং অ্যালুমিনিয়ামে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছিল। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারতও কাঠবাদামসহ ২৮টি মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ করে এবং বিষয়টি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় তোলে।

পরবর্তীতে ২০২০ সালে দুই দেশ আপসে পৌঁছায় এবং শুল্ক প্রত্যাহার করে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন ফের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক আরোপ করে।

ভারত শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেছে। দেশটি জানত, শুল্ক হ্রাস না করলে তাদের ওপর চীনের মতো কঠোর অবস্থান নেওয়া হতে পারে। তাই তারা কাঠবাদাম ও ক্র্যানবেরির মতো কৃষিপণ্যে শুল্ক হ্রাসসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়।

রয়টার্স জানিয়েছে, ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ২৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের মধ্যে ৫৫ শতাংশের ওপর শুল্ক কমাতে সম্মত হয়েছে। এছাড়া দেশটির গড় আমদানি শুল্ক ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

ভারত সম্প্রতি ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন প্রদানে আরোপিত ৬ শতাংশ কর প্রত্যাহার করেছে, যা মূলত গুগল, মেটা ও এক্স-এর ওপর আরোপিত ছিল। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড হারলে ডেভিডসনের আমদানিতে শুল্ক আরও কমানো হয়েছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৪১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে উদ্বেগজনক। তবে চলমান আলোচনার মাধ্যমে এই বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর ও ভারসাম্যপূর্ণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্র–ভারত বাণিজ্য চুক্তির পথে বড় অগ্রগতি, আজ শুরু হচ্ছে আলোচনা

আপডেট সময় ১২:৪৫:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

 

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি এখন অনেকটাই পরিণতির দ্বারপ্রান্তে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উভয় দেশের প্রতিনিধিরা চুক্তির শর্তাবলি বা টার্মস অব রেফারেন্সে একমত হয়েছে। এতে শুল্ক, অশুল্ক বাধা, উৎস নির্দেশিকা এবং শুল্কায়ন সহজীকরণের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ভারতে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের উপস্থিতিতেই এই অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে এই আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অতীতে বহুবার ভারতের শুল্কনীতির সমালোচনা করে ভারতকে “শুল্কের রাজা” বলে অভিহিত করেছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরকে কেন্দ্র করে শুল্কনীতি সংস্কারের বিষয়টি অগ্রাধিকার পায়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী, ভারতে তাদের পণ্যের গড় শুল্কহার প্রায় ১৭ শতাংশ, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির বড় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রির মন্তব্য করেছেন, “এই আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং বাণিজ্যে ভারসাম্য অর্জনের পথ খুলবে। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ভারতীয় বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে এবং শ্রমিক স্বার্থ ক্ষুণ্ণকারী অন্যায্য নীতির সমাধান হবে।”

ভারতও এই আলোচনায় গঠনমূলক অংশগ্রহণ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। উভয় দেশই শ্রমিক, কৃষক এবং উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে আশাবাদী।

আজ থেকে ওয়াশিংটনে শুরু হচ্ছে উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য আলোচনা। ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হবে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৮ সালে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে ইস্পাতে ২৫ শতাংশ এবং অ্যালুমিনিয়ামে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছিল। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারতও কাঠবাদামসহ ২৮টি মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ করে এবং বিষয়টি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় তোলে।

পরবর্তীতে ২০২০ সালে দুই দেশ আপসে পৌঁছায় এবং শুল্ক প্রত্যাহার করে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন ফের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক আরোপ করে।

ভারত শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেছে। দেশটি জানত, শুল্ক হ্রাস না করলে তাদের ওপর চীনের মতো কঠোর অবস্থান নেওয়া হতে পারে। তাই তারা কাঠবাদাম ও ক্র্যানবেরির মতো কৃষিপণ্যে শুল্ক হ্রাসসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়।

রয়টার্স জানিয়েছে, ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ২৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের মধ্যে ৫৫ শতাংশের ওপর শুল্ক কমাতে সম্মত হয়েছে। এছাড়া দেশটির গড় আমদানি শুল্ক ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

ভারত সম্প্রতি ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন প্রদানে আরোপিত ৬ শতাংশ কর প্রত্যাহার করেছে, যা মূলত গুগল, মেটা ও এক্স-এর ওপর আরোপিত ছিল। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড হারলে ডেভিডসনের আমদানিতে শুল্ক আরও কমানো হয়েছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৪১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে উদ্বেগজনক। তবে চলমান আলোচনার মাধ্যমে এই বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর ও ভারসাম্যপূর্ণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।