আজ বিশ্ব থাইরয়েড দিবস: দ্রুত শনাক্ত করুন, সুস্থ থাকুন

- আপডেট সময় ০৫:২৭:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
- / 0
২৫ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব থাইরয়েড দিবস’। ২০০৯ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও এই দিবস উপলক্ষে বেসরকারিভাবে আয়োজন করা হয় সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার ও নানা কর্মসূচি। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আপনার থাইরয়েড গ্রন্থিকে জানুন, দ্রুত শনাক্ত করে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন।’
চিকিৎসকদের মতে, দেশে থাইরয়েড রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (BMU) এক গবেষণায় উঠে এসেছে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত, কিন্তু বেশিরভাগই জানেন না তারা এই রোগ বহন করছেন।
থাইরয়েড কী ও কেন গুরুত্বপূর্ণ?
গলার সামনের অংশে কলার হাড়ের নিচে অবস্থিত প্রজাপতি আকৃতির থাইরয়েড গ্রন্থিটি শরীরের মেটাবলিজমসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোনের ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটলে শরীরের কার্যক্রমে নানা সমস্যা দেখা দেয়।
* হাইপোথাইরয়েডিজম-এ (যখন হরমোন কমে যায়) ওজন বাড়ে, দুর্বলতা, ক্লান্তি দেখা দেয়।
* হাইপারথাইরয়েডিজম-এ (যখন হরমোন বেশি হয়ে যায়) ওজন দ্রুত কমে, ঘাম হওয়া, স্নায়বিকতা, দুর্বলতা, এবং আরও জটিলতা দেখা দিতে পারে।
থাইরয়েড সমস্যার সাধারণ লক্ষণসমূহ
১. ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি
২. অতিরিক্ত বা অনিয়মিত মাসিক
৩. স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য
৫. দ্রুত হৃদস্পন্দন
৬. অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
৭. ডায়রিয়া
৮. স্নায়বিক উত্তেজনা
৯. চুল পড়া ও ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া
চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা
হাইপোথাইরয়েডিজম হলে সাধারণত আজীবন ওষুধ গ্রহণ করতে হয় এবং ওষুধের ডোজ সময় সময় পরীক্ষা করে ঠিক করতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। থাইরয়েডের উপসর্গ দেখা দিলে একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট বা নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
জীবনযাত্রার পরিবর্তনে উপশম সম্ভব
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওষুধের পাশাপাশি কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
সূর্যের আলো: সকালে ১০-১৫ মিনিট রোদে থাকলে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়, যা থাইরয়েডের জন্য উপকারী।
তেল কুলকুচি: নারকেল বা তিলের তেল দিয়ে মুখে ১০-১৫ মিনিট কুলকুচি করলে মুখগহ্বরের জীবাণু কমে ও প্রদাহ হ্রাস পায়।
যোগব্যায়াম ও ধ্যান: মানসিক চাপ কমিয়ে কর্টিসল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক, যা থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর।
ভেষজ চা: তুলসী ও অশ্বগন্ধাযুক্ত চা মানসিক চাপ ও শরীরের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।
সুষম খাদ্য: প্রোটিন, আয়োডিন, জিংক, ও সেলেনিয়ামসমৃদ্ধ খাবার থাইরয়েডের সঠিক কার্যক্রমে সাহায্য করে। বিশেষ করে সকালের নাশতায় প্রোটিন যুক্ত রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্য সচেতনতাই থাইরয়েড সমস্যার সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ। প্রতিটি মানুষ যদি নিজ শরীরের লক্ষণগুলো নজরে রাখে এবং সময়মতো পরামর্শ নেয়, তাহলে এই জটিলতাপূর্ণ রোগের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
তথ্যসূত্র: মায়োক্লিনিক