ঢাকা ০৮:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্লাস্টিক দূষণে বাড়ছে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি, কঠোর হচ্ছে সরকারের নীতিমালা

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১১:৪১:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
  • / 36

ছবি সংগৃহীত

 

প্লাস্টিকের অতিমাত্রায় ব্যবহারের ফলে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজন প্লাস্টিকের পুনঃব্যবহার, বিকল্প পণ্যের ব্যবহার এবং জনসচেতনতা। সরকারও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, তাই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালার পথে হাঁটছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল ছাড়াও জীবনের নানা কাজে প্লাস্টিকের একবার ব্যবহৃত পণ্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে ব্যবহার যত বাড়ছে, রিসাইকেল বা পুনঃব্যবহারের হার তত বাড়ছে না। ফলে পরিবেশে জমছে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য, যা শুধুমাত্র পরিবেশ নয় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, মানবস্বাস্থ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও হুমকিস্বরূপ।

সরকারি তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৮.৫ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ পুনঃব্যবহার হয়, বাকি অংশ থেকে যায় পরিবেশে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৫ সালে নগরাঞ্চলে মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহার ছিল ৩ কেজি, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ কেজিতে। ঢাকায় এ হার আরও ভয়াবহ প্রতি ব্যক্তি বছরে গড়ে ২৪ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করছে।

পলিথিন নিষিদ্ধ থাকলেও দেশের প্রায় ৬১ শতাংশ মানুষ এখনও তা ব্যবহার করছে। এর কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে প্রয়োগে দুর্বলতা ও সহজলভ্যতা।

সমাজবিজ্ঞানী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, “পর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে, পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ঢাকায় প্রতিদিন উৎপন্ন বর্জ্যের মধ্যে ২০ শতাংশই প্লাস্টিক, যার ৮০ শতাংশ একবার ব্যবহারযোগ্য। এটা কোনো সভ্য দেশের নমুনা নয়।”

তিনি আরও বলেন, “বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জনগণকে সম্পৃক্ত করা না গেলে শুধু অর্থ ব্যয় করে সুফল পাওয়া যাবে না। যে পণ্য পুনঃব্যবহারযোগ্য নয় এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, তা পরিত্যাগ করতে হবে।”

প্রাণিবিজ্ঞানী ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী বলেন, “শুধু আইন করেই প্লাস্টিক দূষণ রোধ সম্ভব নয়। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে এবং বিকল্প পণ্যের প্রসার ঘটাতে হবে।”

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, “সরকার একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও থাকছে কঠোর নির্দেশনা। পাশাপাশি দূষণরোধে অভিযানও চলমান থাকবে।”

প্লাস্টিক দূষণ রোধে সরকারের এই উদ্যোগ সফল করতে সচেতনতা ও নাগরিক অংশগ্রহণকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

প্লাস্টিক দূষণে বাড়ছে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি, কঠোর হচ্ছে সরকারের নীতিমালা

আপডেট সময় ১১:৪১:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

 

প্লাস্টিকের অতিমাত্রায় ব্যবহারের ফলে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজন প্লাস্টিকের পুনঃব্যবহার, বিকল্প পণ্যের ব্যবহার এবং জনসচেতনতা। সরকারও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, তাই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালার পথে হাঁটছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল ছাড়াও জীবনের নানা কাজে প্লাস্টিকের একবার ব্যবহৃত পণ্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে ব্যবহার যত বাড়ছে, রিসাইকেল বা পুনঃব্যবহারের হার তত বাড়ছে না। ফলে পরিবেশে জমছে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য, যা শুধুমাত্র পরিবেশ নয় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, মানবস্বাস্থ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও হুমকিস্বরূপ।

সরকারি তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৮.৫ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ পুনঃব্যবহার হয়, বাকি অংশ থেকে যায় পরিবেশে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৫ সালে নগরাঞ্চলে মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহার ছিল ৩ কেজি, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ কেজিতে। ঢাকায় এ হার আরও ভয়াবহ প্রতি ব্যক্তি বছরে গড়ে ২৪ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করছে।

পলিথিন নিষিদ্ধ থাকলেও দেশের প্রায় ৬১ শতাংশ মানুষ এখনও তা ব্যবহার করছে। এর কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে প্রয়োগে দুর্বলতা ও সহজলভ্যতা।

সমাজবিজ্ঞানী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, “পর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে, পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ঢাকায় প্রতিদিন উৎপন্ন বর্জ্যের মধ্যে ২০ শতাংশই প্লাস্টিক, যার ৮০ শতাংশ একবার ব্যবহারযোগ্য। এটা কোনো সভ্য দেশের নমুনা নয়।”

তিনি আরও বলেন, “বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জনগণকে সম্পৃক্ত করা না গেলে শুধু অর্থ ব্যয় করে সুফল পাওয়া যাবে না। যে পণ্য পুনঃব্যবহারযোগ্য নয় এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, তা পরিত্যাগ করতে হবে।”

প্রাণিবিজ্ঞানী ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী বলেন, “শুধু আইন করেই প্লাস্টিক দূষণ রোধ সম্ভব নয়। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে এবং বিকল্প পণ্যের প্রসার ঘটাতে হবে।”

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, “সরকার একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও থাকছে কঠোর নির্দেশনা। পাশাপাশি দূষণরোধে অভিযানও চলমান থাকবে।”

প্লাস্টিক দূষণ রোধে সরকারের এই উদ্যোগ সফল করতে সচেতনতা ও নাগরিক অংশগ্রহণকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।